লকডাউন তুলে নেওয়ার ঘোষণা এল যেদিন, সেই দিনটিতেই চট্টগ্রাম গড়ল করোনায় এ যাবতকালের একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের নতুন রেকর্ড। চট্টগ্রামে প্রথমবারের মত দিনে করোনা শনাক্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেল। সোমবার (১১ জুলাই) পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এবার করোনাভাইরাস শনাক্ত হল ১০০৩ জনের নমুনায়। চট্টগ্রামে মাত্রই গতকাল সোমবার করোনা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড গড়েছিল। এর মাত্র ২৪ ঘন্টায় সেই রেকর্ডও ভেঙে গেল। সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও করোনা এগিয়ে চলেছে ভয়ঙ্কর গতি নিয়ে। গতকালের ৯ মৃত্যুর পর চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেলেন আরও ১০ জন।
বুধবার (১৪ জুলাই) সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১০০৩ জনের নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে চট্টগ্রামে মোট করোনারোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৭৮৭ জনে। শনাক্তের দিক থেকে গত ২৪ ঘন্টায় পাওয়া ১০০৩ জন করোনারোগী একদিনের আগের সব রেকর্ডই ভেঙে দিয়েছে। সংক্রমণের হার ৩৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর এই একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের— যার ৪ জন চট্টগ্রাম নগরের, আর বাকি ৬ জনই উপজেলার। মোট নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার প্রায় ৩৫ শতাংশ।
নতুন শনাক্তদের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে রয়েছে রেকর্ডসংখ্যক ৬৫২ জন এবং উপজেলাগুলোতে ৩৫১ জন। উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে হাটহাজারীতে সর্বোচ্চ ৭৫ জন, সীতাকুণ্ডে ৪৫ জন, রাউজানে ২২ জন, ফটিকছড়িতে ২৭ জন, মিরসরাইয়ে ২৮ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ১০ জন, বোয়ালখালীতে ৩২ জন, আনোয়ারায় ৩৪ জন, পটিয়ায় ১৭ জন, সন্দ্বীপে ৬ জন, চন্দনাইশে ১৯ জন, বাঁশখালীতে ১২ জন, লোহাগড়ায় ৮ জন এবং সাতকানিয়ায় রয়েছেন ১৬ জন।
চট্টগ্রাম জেলায় এখন করোনাভাইরাসে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা এখন ৬৭ হাজার ৭৮৭ জন। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরের বাসিন্দা ৫১ হাজার ৯৪৯ এবং ১৪ উপজেলার ১৫ হাজার ৮৩৮ জন।
অন্যদিকে আজকের ১০ জন সহ সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে করোনায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০০ জনে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরের ৫০৮ ও উপজেলার ২৯২ জন।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস ল্যাবে (বিআইটিআইডি) ৭৫৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় চট্টগ্রাম নগরের ১৪৮ ও উপজেলার ৪৩ জন জীবাণুবাহক পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৪০৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে নগরের ৯৭ ও উপজেলার ৪০ জনের শরীরে জীবাণুর উপস্থিতি চিহ্নিত হয়। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ২০৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় চট্টগ্রাম নগরের ৫২ ও উপজেলার ২৬ জন জীবাণুবাহক পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ১৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে নগরের ৪৩ ও উপজেলার ৩৮ জনের শরীরে জীবাণুর উপস্থিতি চিহ্নিত হয়।
নমুনা সংগ্রহের পরপরই ফলাফল প্রদানকারী এন্টিজেন টেস্টে ৭১৩ জনের মধ্যে ২৩৫ জন জীবাণুবাহক বলে জানানো হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরের ৭২ জন ও উপজেলার ১৬৩ জন। চট্টগ্রাম নগরীতে করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহকারী কয়েকটি কেন্দ্রে এন্টিজেন টেস্ট করা হয়ে থাকে।
এদিকে বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরির মধ্যে আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতালে ৬৪ টি নমুনায় চট্টগ্রাম নগরের ৩২ ও উপজেলার ৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। অন্যদিকে শেভরন ল্যাবে ২২৪ টি নমুনায় চট্টগ্রাম নগরের ৬৪ ও উপজেলার ১৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। বেসরকারি ইপিক হেলথ কেয়ারে ১০৩টি নমুনার মধ্যে উপজেলার ১২ টিসহ ৬১ টি নমুনার ফলাফল পজিটিভ আসে। ইমপেরিয়াল হাসপাতালে ১৯২টি নমুনায় চট্টগ্রাম নগরের ৬২ ও উপজেলার ৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।
এদিন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে কেবল ৬ টি এবং এর সবগুলোর ফলাফল ছিল নেগেটিভ।
এআরটি/সিপি