চট্টগ্রামে ‘আলাদীনের চেরাগ’ সিটি কর্পোরেশনের এক চাকুরের হাতে, ১৬ বছরে অর্ধশত কোটিরও বেশি সম্পদ

নাসিরাবাদের এক ভবনেই ৪ ফ্ল্যাট, খুলশীতে ১০ তলা

২০০৬ সালে সড়ক পরিদর্শক পদে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে নিয়োগ পান মো. জসিম উদ্দিন। অস্থায়ী এ নিয়োগের তিন বছরের মধ্যে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পাশ কাটিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হয়ে যান তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। আট হাজার টাকা বেতনে চাকরি জীবন শুরু করা এ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ১৬ বছরের কর্মজীবনে হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। চট্টগ্রামের অভিজাত এলাকায় নামে-বেনামে জায়গা, ফ্ল্যাটসহ তার অন্তত অর্ধশত কোটি টাকার ওপরে সম্পদ রয়েছে।

এছাড়া পরিবারের সদস্য ও ভাইকে দিয়ে গড়ে তুলেছেন ঠিকাদারি ব্যবসা। আড়ালে থেকে ভাই ও পরিবারের সদস্যদের দিয়ে সুকৌশলে বাগিয়ে নেন সিটি কর্পোরেশনের কাজ। এমনকি সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব এ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট থাকা সত্ত্বেও মাল কেনা হয় জসিমের একটি কারখানা থেকে।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে আট হাজার টাকা বেতনে সিটি কর্পোরেশনে সড়ক পরিদর্শক অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পান মো. জসিম উদ্দিন। এরপর ২০০৯ সালে বিভাগের ১১ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে পেছনে ফেলে তিনি হয়ে যান নির্বাহী প্রকৌশলী। বর্তমানে পূরকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদ এলাকার আল-ফালাহ গলিতে ‘আইএস অবকাশ’ নামের একটি ভবনে অন্তত ৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে মো. জসিম উদ্দিনের। প্রতিটি ফ্ল্যাটের মূল্য প্রায় কোটি টাকার বেশি। খুলশী এলাকায় ১২ কাঠা জায়গার ওপরে নির্মাণাধীন রয়েছে তার ১০ তলার একটি বহুতল ভবন। যার বাজার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। রয়েছে একাধিক দামি প্রাইভেট গাড়ি। এছাড়া হাতে পরেন ২০ লাখ টাকার রোলেক্স ঘড়ি।

এছাড়া নগরীর পাঁচলাইশের হামজারবাগ হামজার খাঁ লেনের শাহ আমানত আবাসিকে রয়েছে চার কাঠা করে আট কাঠার দুটি প্লট। যার বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। সেখানে একটি প্লটে বহুতল ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে ওই ভবনের ছয়তলার কাজও প্রায় শেষ হয়েছে।

স্থানীয়দের মতে, নির্মাণাধীন ভবন ও জায়গার বাজারমূল্য সাত কোটি টাকার বেশি। এই আবাসিকের প্রায় ২৮টি ভবনের নেতৃত্ব জসিমের হাতে।

Yakub Group

এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের চাকরি করে এত বিত্তশালী হওয়া দুষ্কর। একইসঙ্গে হাতে রোলাকের ঘড়ি ব্যবহার ও বর্তমানে কোটি টাকার ফ্ল্যাটে থাকাও আলাদীনের চেরাগ পাওয়ার ঘটনা বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

আরও জানা গেছে, চাকরি পাশাপাশি তথ্য গোপন করে ছোট ভাই সাইফুল ইসলামকে দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদারি কাজ করিয়ে যাচ্ছেন জসিম। সর্বশেষ গত ২০ আগস্ট তার ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান ‘ফাহিম কনস্ট্রাকশন’ সড়ক প্রকল্পের একটি কার্যাদেশ পায়। সেটিতে স্বাক্ষর করেন জসিম উদ্দিন।

অথচ স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) ২০০৯ আইন অনুযায়ী, কর্পোরেশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক স্বজ্ঞানে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, স্বয়ং বা কোনো অংশীদার মারফত কর্পোরেশনের কোনো ঠিকাদারিত্বে স্বত্ব বা অংশ নেওয়া বেআইনি।

এছাড়া নগরীর সাগরিকা রোডে ‘আমিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ নামে অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট কারখানা রয়েছে জসিমের। যেটির পরিচালনায় তার সঙ্গে রয়েছে তারই ভাই দিদারুল ইসলাম। যদিও কাগজে-কলমে এই কারখানার মালিক দেখানো হয়েছে নুরুল আমিন নামের এক ব্যক্তিকে। সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট থাকলেও তারা মাল কেনে জসিমের এই প্রতিষ্ঠান থেকে। তবে সম্প্রতি জসিম উদ্দিন ও তার ভাইয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় সেটির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পূরকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সাড়া মেলেনি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে এসএএস পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দরপত্রের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন দরদাতাই কার্যাদেশ পাচ্ছেন। এখন সিটি কর্পোরেশনে নিয়োজিত ব্যক্তির ভাই ও আত্মীয়স্বজন দরপত্র পাচ্ছে, সেটাতো আর আমরা জানি না। কারও (কর্মকর্তাদের) আরএস, বিএস ও পিস জানাও আমাদের কথা নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী এখানে (চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন) কর্মরতের পরিবার ও ভাই দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে না। তারপরও কারো বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পেলে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!