চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের শত্রু, বললেন ওবায়দুল কাদের

আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুকে স্মরণ

১৫ দিন আগে তিনি নেতৃবৃন্দকে বাহবা দিয়ে বলেছিলেন চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ঐক্যের সুবাতাস বইছে। ঠিক ১৫ দিন পর সুর পাল্টাতে বাধ্য হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগের প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে মাঝে মাঝে যখন তুচ্ছ কারণে অবাঞ্ছিত, অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তখন মনে বড় কষ্ট লাগে। বড় দুঃখ পাই। সামান্য কারণে একে অন্যের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। চট্টগ্রামে মাঝে মাঝে যখন দেখি আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের শত্রু, কষ্ট লাগে, দুঃখ পাই। চট্টগ্রামে মাঝে মাঝে যে কলহ দেখি, এটাই চট্টগ্রামের বড় দুর্বলতা।’

দলের সাধারণ সম্পাদক যখন চট্টগ্রামের রাজনীতি নিয়ে মনোকষ্টের কথা বলছেন, তার একদিন আগেই চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘির মাঠে স্বয়ং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর উপস্থিতি সংঘর্ষে জড়িয়েছে নগর যুবলীগের দুই গ্রুপের লোকজন। এতে দুই শতাধিত চেয়ার ভাঙচুরের পাশাপাশি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোবারক আলীসহ অন্তত দশজন আহত হয়েছেন। এঘটনায় পুলিশ অজ্ঞাত দেড়শ জনকে আসামি করে একটি মামলাও দায়ের করেছে।

তারআগে গত ২৭ অক্টোবরের আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় নিয়ম ভেঙে নগর মহিলা লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দীন মঞ্চে উঠলে তাকে নেমে যেতে বলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এনিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠে নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি। পরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এই দুটি ঘটনার পর দুই সপ্তাহের মাথায় আবার চট্টগ্রামে আসেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আর তখনই দলের এরকম পরিস্থিতি চট্টগ্রামের রাজনীতি নিয়ে মনোকষ্টের কথা বলছেন ওবায়দুল কাদের। আখতারুজ্জামান বাবুর স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। যারা অন্তর্কলহ করবে, অপকর্ম করবে, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, ভূমি দখল, মাদক ব্যবসা করবে, সেসব অপকর্মদারীদের স্থান আওয়ামী লীগে নেই। আমাদের দূষিত রক্তের দরকার নেই। দূষিত রক্ত বের করে দিতে হবে। বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করতে হবে। গুটিকয়েক খারাপ লোকের জন্য গোটা আওয়ামী লীগ বদনামের ভাগিদার হবে না। গোটা আওয়ামী লীগের ভালো লোকদের ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না।’

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, ‘খারাপ আচরণ উন্নয়নকে ম্লান করে দিতে পারে। আমরা ট্র্যাডিশন চাই, সেটা হচ্ছে সিনিয়র জুনিয়রদেও স্নেহ করবে, জুনিয়র সিনিয়রকে সম্মান করবে। এখানে আমরা ডিজিটাল চাই না। আওয়ামী লীগকে গণতন্ত্র অক্ষুন্ন রাখতে হবে, সেটাই ট্র্যাডিশন। মানুষের মাঝে থেকেই পরিবর্তনের ধারা এগিয়ে নিতে হবে।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আখতারুজ্জামান বাবুর বড় ছেলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দলের কেন্দ্রীয় উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী, উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম প্রমুখ।

আখতারুজ্জামান বাবুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ
আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর স্মৃতিচারণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শুধু ব্যবসা করলে তিনি দেশের এক নম্বর ধনী হতেন। কিন্তু রাজনীতিকে তিনি মানি মেকিং মেশিন করেননি। আজ অনেকে রাজনীতিকে কেনাবেচার পণ্য মনে করে। জনগণকে তিনি ভালোবাসতেন বলেই তার প্রতি জনগণের ভালোবাসা আজও দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। চট্টগ্রামের সমার্থক হয়ে গিয়েছিল দুই নাম বাবু ভাই ও মহিউদ্দিন চৌধুরী।’

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাবু ভাই রাজনীতিকে ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। অনেক বিত্ত-বৈভবের মালিক রাজনীতিতে এসে রাজনীতিকে কিনতে চায়। যারা রাজনীতিকে অর্থ দিয়ে কিনতে চান, তাদের বলব বাবু ভাইয়ের কাছ থেকে শেখার জন্য, যার অর্থ বিত্ত থাকার পরও রাজনীতিকে কেনার চেষ্টা করেননি। তিনি বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে কখনো বেঈমানি করেননি। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের পর দল যখন মহাবিপর্যয়ে তখন সব চক্রান্ত উপেক্ষা করে যারা চট্টগ্রামের মাটিতে দলের রাজনীতি করেছেন, স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের একজন আখতারুজ্জামান বাবু।’

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, ‘আমার বাবা ব্যবসার জন্য রাজনীতি করেননি। পঁচাত্তরের পর আওয়ামী লীগ করার মানুষ পাওয়া যায়নি। আজ অনেকে দল করতে চায়। দেশ আজ গর্ব করার মতো জায়গায় পৌঁছেছে। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র চায় আমাদের ধ্বংস করতে, তারা বসে নেই। আজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টিকে আছে দলীয় নেতাকর্মীর কারণে।’

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের পর দুঃসময়ে যখন অনেক বড় বড় নেতা আস্থার সংকটে ভুগেছিলেন, তখন তিনি আস্থা হারাননি। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে অনেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্টের লোভে পড়েছিলেন। তখন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু দল ছেড়ে যাননি, বরং নিজের সর্বস্ব ঢেলে দিয়ে দলের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের সেই ত্যাগে আজ দল টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায়।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘বাবু ভাই বিত্তশালী ছিলেন কিন্তু সাধারণ মানুষকে আপন করে টেনে নিতেন, আজ বিত্তবানরা দলকে নিজের বাবার সম্পত্তিতে পরিণত করতে চান। উনার সান্নিধ্য পেয়েছি। উনার আদর্শ ধারণ করতে হবে।’

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!