ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের আয়োজনে চট্টগ্রামে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘চট্টগ্রাম আইসিটি ফেয়ার-২০২৫’।

নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে তিনদিনব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এ মেলার পর্দা উঠবে আগামী বুধবার। ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় বৈচিত্র্যময় নানা আয়োজনে এবারের মেলা শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারা দেশে মাইলফলক সৃষ্টি করবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদে একটি রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মেলা আয়োজনের পূর্ণাঙ্গ তথ্য তুলে ধরে আয়োজক সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) চট্টগ্রাম বিভাগ।
এতে লিখিত বক্তব্য পড়েন চট্টগ্রাম আইসিটি ফেয়ার-২০২৫’র আহ্বায়ক এবং আইএসপিএবি’র সহ-সভাপতি আনোয়ারুল আজিম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম আইসিটি ফেয়ারের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এমদাদ উল বারী। তিনদিনব্যাপী মেলার প্রথমদিনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াও থাকবে বিজ্ঞানমেলা, সেমিনার ও রোবো সকার প্রতিযোগিতা।
দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) আন্তঃকলেজ বিতর্ক প্রতিযোগিতা, মোটিভেশনাল টক, নেটওয়ার্কিং প্রশিক্ষণ, লাইভ কনসার্ট হবে।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সমাপনী দিনে স্কুল পর্যায়ের কুইজ প্রতিযোগিতা ও সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে এ মেলা। মেলায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মোট ৯৬টি স্টল থাকছে।
আহ্বায়ক আনোয়ারুল আজিম বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তিতে উদ্ভাবন ও এগিয়ে চলার পথে—এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারের মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের মেলা তরুণ প্রজন্ম, প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এবং প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য একটি বিশেষ মঞ্চ। আকর্ষণ হিসেবে বিজ্ঞান মেলা, রোবোটিক প্রতিযোগিতা, সেমিনার, প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ এবং কনসার্টও থাকছে মেলায়।’
মেলায় দর্শনার্থীদের জন্য ছাড় থাকবে কিনা— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখানে আইসিটি, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার অনেক কোম্পানিই আসবে। তারা যার যার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মেলায় ডিসকাউন্ট রাখবে। তারাও নিজ নিজ কোম্পানি থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। ওখানে পুরস্কারও আছে।’
আইএসপিএবি চট্টগ্রামের আহ্বায়ক ও আইসিটি ফেয়ারের সেক্রেটারি রাজিব শাহরিয়ার বলেন, ‘চট্টগ্রামের আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায়ই ২০০টির মতো কোম্পানি কাজ করছে। যারা ইউজার বা সেবা গ্রহণ করেন তাদের সঙ্গে কোম্পানিগুলোর সরাসরি একটি সম্পর্ক তৈরি করা আমাদের উদ্দেশ্য। পাশাপাশি আমাদের যারা নতুন প্রজন্ম আছে তাদের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জানানোই এ মেলার মূল উদ্দেশ্য।’
আমরা এ মেলাটিকে এবার একটি ভিন্নরূপ দিতে চাচ্ছি। আমরা সাইন্স ফেয়ারের আয়োজন করেছি। তবে সেটা হবে টেকনোলজি রিলেটেড সাইন্স ফেয়ার। এখন প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গেছে। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা এখন সবার কাছে একটি বড় বিষয়। এটা সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মকে জানানো একটি অন্যতম উদ্দেশ্য বিজ্ঞান মেলার—বলেন রাজিব শাহরিয়ার।
রাজীব শাহরিয়ার বলেন, ‘আমরা রোবোটিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি। চট্টগ্রামে এটা এবারই প্রথম। দুটি রোবোটিক টিম এখানে ফুটবল ম্যাচ খেলবে। এটা আমিও আগে কোনোদিন দেখিনি। এখানে যে সেমিনার হবে সেগুলো খুবই গুরুত্বপুর্ণ। প্রথমদিন আমাদের সেমিনার হবে। সেখানে ইন্টারনেট প্রোভাইডকে হিউম্যান রাইট হিসেবে ঘোষণা করা কতটুকু জরুরি, সেটা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।’
তিনি আরও বলেন, যখন ইন্টারনেট প্রোভাইডকে হিউম্যান রাইট হিসেবে ঘোষণা করা হবে, তখন কিন্তু এটাকে আর কেউ বন্ধ করতে পারবে না। বন্ধ করলে আপনি মানবাধিকার লঙ্ঘন করার চেষ্টা করবেন। দ্বিতীয় দিন আমাদের যে সেমিনার হবে সেটা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা রিলেটেড। মেলায় রোবোটিক সুকেজিং নামে একটি কর্ণার রাখছি। এখানে আমাদের বুয়েটের চার শিক্ষার্থী আসবে। তারা তিনদিন ধরে মেলার দর্শনার্থীদের রোবোট ও কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে ব্রিফ করবে।
চট্টগ্রামে আয়োজিত এবারের তথ্যপ্রযুক্তি মেলা ভিন্ন পরিবেশ সৃষ্টি করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের আশা এ মেলাটি চট্টগ্রামে একটি ভিন্ন পরিবেশ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশে এ মেলা একটি মাইলফলক হিসেবে দাঁড় করানো যাবে। মেলা বললেও আমরা এটাকে টেকফেস্ট হিসেবে অভিহিত করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, মেলায় প্লাটিনাম স্পন্সর হিসেবে আছে আম্বার আইটি, ফাইবার এট হোম, টিপিলিংক-সিডাটা। এছাড়া ডায়মন্ড স্পন্সর হিসেবে আছে এক্সাবাইট লিমিটেড, রেইস অনলাইন, বাহন লিমিটেড, সামিত কমিউনিকেশন এবং উইন্ড স্ট্রিম। মেলা সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য পেতে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে www.cictf.com ভিজিট করতে বলা হয়েছে।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন আইএসপিএবি চট্টগ্রামের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নিয়াজ মোর্শেদ, মিরাজুল ফয়েজ, সদস্য সচিব ফারহান ফুয়াদ, সদস্য মো. নাজমুল হক টগর, মো. রিদুয়ানুল কবির, মো. ওমর ফারুক মুন্না এবং মো. আনিসুজ্জামান খাঁন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে আগ্রাবাদ থেকে গাড়িবহর সহকারে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে নগরীর জিইসি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
ডিজে