চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্রের বড় ব্যবসা লাইসেন্সের আড়ালে, যাচ্ছে সারাদেশেই
দেশজুড়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অস্ত্র কিনছে চট্টগ্রাম থেকে
অস্ত্র ব্যবসার বৈধ লাইসেন্স আছে চট্টগ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেনের। চট্টগ্রাম নগরীতে তার একটি অস্ত্রের দোকানও। কিন্তু অস্ত্র বিক্রির এই বৈধ ব্যবসার চেয়েও তার তৎপরতা বেশি অবৈধ অস্ত্র নিয়ে। অস্ত্রের বৈধ লাইসেন্সটিকে ঢাল হিসেবে নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার বড় বাজার। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও ঢাকাসহ দেশজুড়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তিনি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করে আসছিলেন নির্বিঘ্নেই।
পুরনো অস্ত্র ব্যবহারের লাইসেন্স ব্যবহার করে ওইসব লাইসেন্সে অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ করতেন মোহাম্মদ হোসেন।
অস্ত্র বেচাকেনার জন্য হোসেনের আরও এক অভিনব কৌশল আছে। খুঁজে খুঁজে বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহারের পুরাতন লাইসেন্স সংগ্রহ করতেন তিনি। যারা বৈধ অস্ত্র আগে ব্যবহার করতেন কিন্তু এখন তারা আর বেঁচে নেই। আবার অনেকে অস্ত্র আর ব্যবহার করেন না— এমন সব পুরনো লাইসেন্সই সংগ্রহ করতেন তিনি। এসব লাইসেন্স দিয়ে অস্ত্র কিনে সন্ত্রাসীদের কাছে সেসব বিক্রি করতেন চড়া দামে।
বিক্রিই শুধু নয়, মোহাম্মদ হোসেন আবার বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি কিনে নিতেন। কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ওই অস্ত্র ও গুলি সরবরাহ করতেন তিনি।
চট্টগ্রামের এই ধুরন্ধর অস্ত্র ব্যবসায়ী তার আরও তিন সহযোগীসহ অবৈধ অস্ত্রের একটি চালান নিয়ে শেষমেশ ঢাকায় গিয়ে ধরা পড়লেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের হাতে।
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড মোড়ের শ্যামলী পরিবহনের ছয় নম্বর কাউন্টারের সামনে থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মোহাম্মদ হোসেনের সহযোগীরা হলেন— চট্টগ্রামের বাসিন্দা আলী আকবর ও আদিলুর রহমান সুজন এবং রাঙামাটির বরকলের সাইচালের বাসিন্দা লাল তন পাংখোয়া। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি অস্ত্র এবং ৩০১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। গুলিগুলোর মধ্যে রয়েছে একে-৪৭ রাইফেলের গুলিও।
এর মধ্যে রাঙামাটির লাল তন পাংখোয়া দীর্ঘদিন ধরে বরকল সীমান্তবর্তী ভারতের মিজোরাম রাজ্য এবং বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্ত থেকে অস্ত্র ও গুলি চোরাচালানের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিক্রি করতেন। এই পাংখোয়ার কাছ থেকে চট্টগ্রামের অস্ত্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসেন অবৈধ অস্ত্র ও গুলি কিনতেন বেশি দামে বিক্রির জন্য।
চট্টগ্রামের বাসিন্দা আলী আকবর ও আদিলুর রহমান সুজন অস্ত্র ব্যবসায়ী হোসেনের কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি কিনে কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করতেন। অস্ত্র ও গুলির এরকম কয়েকজন ক্রেতার খোঁজও পেয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামের হামিদুল হক, আবদুল মান্নান, আহমেদ ছফা এবং কক্সবাজারের সেলিম ও জুয়েল।
সিপি