ঐতিহ্যবাহী পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। অন্যদিকে ওষুধের পাইকারি ব্যবসা ও অলংকার শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ হাজারী লেন। এই দুই বাজারের পাশাপাশি কাপড়-চোপড় থেকে শুরু করে পাঁচমিশালী পণ্যের বাজার হিসেবে বেশ সুখ্যাতি রয়েছে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে বাজারে অনলাইন বেটিং-৩৬৫-এর নেশায় মজেছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এই ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের কারণে এসব বাজারের প্রকৃত ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলো পড়ছে বড় ধরনের ইমেজ সংকটে।
এছাড়া প্রতিদিনই নগরীর বাকলিয়া, ডিসি রোড, চকবাজার, খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, সদরঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় জুয়ার আসর বসছে। নগর গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা জানান, রকমারি ব্যবসার আাড়ালে থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে জুয়ার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে বেশ কয়েকটি চক্র। নগরীর অলি-গলির ছোটখাটো চা দোকান থেকে শুরু করে অভিজাত হোটেলে চলছে জুয়ার আসর। এসব আসরে প্রতিদিন ৩-৪ কোটি টাকা হাতবদল হচ্ছে, মিলেছে দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচারের প্রমাণ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জুয়াড়ি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘খাতুনগঞ্জ এবং হাজারী গলি থেকে বসেই পৃথক দুটি গ্রুপ পুরো চট্টগ্রামের জুয়ার নিয়ন্ত্রণ করছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টার্গেট করছেন এসব বাজারের কর্মচারী এবং ব্যবসায়ীদের। অনলাইন জুয়ার ফাঁদে অনেক ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে সর্বহারা হয়েছেন।’
ওই জুয়াড়ি জানায়, চট্টগ্রাম শহরে এই দুই গ্রুপের সাথে যোগসাজশে রয়েছে কমপক্ষে ১০-১৫ হাজার আইডি। এই ধরনের একটি আইডি বেচাকেনা হয় ৪-৫ হাজার টাকায়। তবে অর্থ আদান-প্রদান ও জুয়ার আসরের কর্তৃত্ব নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেশাদার জুয়াড়িরা জনপ্রতি ব্যবহার করে থাকে ১০-১৫টি আইডি। এসব আইডিতে রক্ষিত ডলারের মাধ্যমেই হয়ে থাকে বাজিতে ‘হার-জিতের’ লেনদেন। তবে টাকা থেকে ডলারে কনভার্টের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আড়ালে থাকা একটি চক্র। যাকে নিজেদের মধ্যে ‘নেটেলার’ হিসেবেই ডেকে থাকে জুয়াড়িরা।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, আগেকার সময়ে ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র বিপিএল কিংবা আইপিএলের সময়ে বাজারে জুয়ার আসর বসতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে ক্রিকেট-ফুটবল নানা ইভেন্টের দেশ-বিদেশের ছোটখাটো লীগ থেকে শুরু করে বড় টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে সারা বছরই বসছে জুয়ার আসর। খাতুনগঞ্জের বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে ব্যবসায়ী নামধারী জুয়াড়িরা এসব আসরের পরিচালনা করে থাকে। এসব ব্যবসায়ীদের সাথে ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগের’ নাম ভাঙ্গিয়ে স্থানীয় লোকজনও জড়িত রয়েছে।
অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের ইদ্রিসের ভাতঘর নামে একটি হোটেল থেকে ১৬জন জুয়াড়িকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, হোটেলের আড়ালে সেখানে জমতো জুয়ার আসর। প্রতিদিন গড়ে ৫-১০ হাজার টাকা ব্যয় করে থাকে একজন জুয়াড়ি। দীর্ঘদিন ধরে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাজি ধরে থাকে। এছাড়াও বেট-৩৬৫ এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে এসব জুয়াড়িরা দেশের টাকা বিদেশে পাচারের তথ্যও জানান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
এই দুই বাজারের পাশাপাশি চট্টগ্রামের ওষুধের পাইকারি ব্যবসা ও অলংকার শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ হাজারী লেনের ব্যবসায়ীরাও মেতে উঠেছেন বেট-৩৬৫ জুয়ার আসরে। স্থানীয় সূত্র জানায়, অন্যান্য বাজারের জুয়ার আসরের মত এই বাজারেও একই কায়দায় চলে জুয়ার আসর।
এএ/এসএস