চট্টগ্রামের ৮০ ছাত্রলীগ নেতা লাফ দিতে চান যুবলীগে

৩০ মে চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর তাতে নির্ধারিত হবে নতুন নেতৃত্ব। সেই পদ পেতে ছোট-বড় সব নেতাই রীতিমতো মরিয়া। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের অন্তত ৮০ জন যুবলীগের বিভিন্ন পদ চেয়ে ফরম নিয়েছেন, দিয়েছেন জীবনবৃত্তান্ত। সেই তালিকায় আছেন বর্তমান নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমুও। তবে সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর সেই পথে হাঁটেননি। যুবলীগের পদ চেয়ে তিনি জীবনবৃত্তান্ত জমা দেননি বলে জানা গেছে।

এদিকে নগর ছাত্রলীগের নেতাদের যুবলীগের কমিটিতে যাওয়ার অতি উৎসাহ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। ছাত্রলীগের পদ থেকে অব্যাহতি না নিয়ে যুবলীগের পদ চাওয়ার আগ্রহে তৃণমূলের কর্মীদের বিষোদগারে পড়েছেন নগর যুবলীগের পদপ্রত্যাশী ছাত্রনেতারা। নাজমুল ইসলাম নামে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের এক কর্মী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তারা নগর ছাত্রলীগের পদে আছে, আবার যুবলীগের জন্য লবিংও করে। মানে লাজলজ্জা কেজি মাপে কোথায় বিক্রি হচ্ছে একটু বলবেন?’

তবে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শেখ নাঈমের মৌখিক সম্মতিতেই ছাত্রনেতারা যুবলীগের পদের জন্য আবেদন করছেন বলে জানান পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতারা।

বর্তমানে নগর ছাত্রলীগে সভাপতির পদে থেকে আবার নগর যুবলীগের সভাপতিও হতে চান ইমরান আহমেদ ইমু। শুধু ইমু নন, ছাত্রলীগ থেকে একলাফে যুবলীগের প্রধান দুটি পদ পেতে সিভি জমা দেন নগর ছাত্রলীগের তিন নেতা। আর কমিটির বাকি সাংগঠনিক ও সম্পাদকীয় পদের জন্য সিভি জমা দিয়েছেন অন্তত ১০০ জন। তবে যুবলীগে লাফ দেওয়ার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছেন মহিউদ্দীন বলয়ের ছাত্রনেতারা।

২৯৪ সদস্যের নগর ছাত্রলীগের কমিটির যে ১০০ জনের বেশি নেতা যুবলীগের পদ পেতে চান, তাদের মধ্যে শুধু আ জ ম নাছির বলয়ের নেতা রয়েছেন নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ওয়াহেদ রাসেল ও সহ-সভাপতি সরোয়ারসহ মোট ৩ থেকে ৪ জন। আর বাকি সবাই মহিউদ্দীন বলয়ের।

তবে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিতে থেকে যুবলীগে যাওয়ার বিষয়টি অপরাধের কিছু নয় বলে মনে করছেন নেতারা। নগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রেজাউল আলম রনি বলেন, ‘৯ বছর ধরে ছাত্ররাজনীতি করে যাচ্ছি,এখনো সেই কমিটি ভাঙ্গার কোন নাম-গন্ধ নেই। আমি বিয়ে করেছি। ব্যবসা করছি আর কতদিন ছাত্ররাজনীতি করব? আমাদের তো রাজনীতি করেই যেতে হবে। যেহেতু ছাত্রলীগের কমিটি ভাঙছে না। তাই বাধ্য হয়েই যুবলীগের কমিটিতে আসার চেষ্টা করছি।’

তাছাড়া নগর ছাত্রলীগে রাজনীতি করার মতো কোনো পরিবেশ ও শৃঙ্খলা নেই বলেই যুব রাজনীতির দিকে যেতে চাইছেন বর্তমান ছাত্রনেতারা।

বর্তমান নগর ছাত্রলীগের কমিটিটি এখন ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক ছাত্রনেতা। এরকমই একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে আক্ষেপ করে বলেন, ‘নগর ছাত্রলীগের কমিটি যদি সঠিক সময়ে সম্মেলন করত, তাহলে আজ এতগুলো বয়স্ক ছাত্রনেতাদের কর্মীদের কাছে হেয় হতে হতো না। কমিটি না ভাঙ্গাতে সাবেকও হওয়া যাচ্ছে না।’

নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গোলাম সামদানি জনি নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী। তিনি বললেন, ‘বর্তমানে আমার ৩৯ বছর বয়স চলছে। আর কতদিন ছাত্ররাজনীতি করব? কমিটিও ভাঙ্গে না আর আমাদের ছাত্রনেতার পরিচয়ও যাচ্ছে না। তাই ইচ্ছে করেই অনেকটা বাধ্য হয়ে যুবলীগে যেতে চাচ্ছি।’

ছাত্রলীগের পদে থেকে যুবলীগের পদ প্রত্যাশার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তো নিজ থেকেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। কেন্দ্র যদি আমাকে ছাত্রলীগের পদ থেকে বাদ না দেয়, তবে আমার কি করার আছে? আমার তো দিন শেষে রাজনীতি করতে হবে।’

নগর ছাত্রলীগের আরেক সহ-সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত কচিও যুবলীগের পদপ্রত্যাশী। তিনি বলেন, ‘২১টা বছর ছাত্ররাজনীতি করেছি, আর কতদিন করবো বলেন? আমাদের তো একটা পলিটিক্যাল ক্যারিয়ার আছে। ছাত্রলীগের পদে তো আর সারাজীবন থাকতে পারবো না। তাই পলিটিক্সটাকে রানিং করার জন্য যুবলীগে যেতে চাইছি। যদি নেতারা যোগ্য মনে করেন, তবে আমাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেবেন।’

কচি বলেন, ‘আমার জানামতে নগর ছাত্রলীগের প্রায় ৭০-৮০ জন নেতা যুবলীগের ফরম নিয়েছেন। ছাত্রলীগের নিয়মিত কমিটি না হওয়াই এর মূল কারণ।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!