চট্টগ্রামের ৭ কলেজে দেড় লাখ আবেদন, প্রতি আসনের জন্য লড়বে ১৬ জন
জিপিএ-৫ পেয়েও সরকারি কলেজে ভর্তিবঞ্চিত হবে অর্ধেক শিক্ষার্থী
এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় চট্টগ্রাম থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ১৩ জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ৬৬৪ জন। তবে শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ চট্টগ্রামের সাত সরকারি কলেজ। এই সাত কলেজে আবেদন জমা পড়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার। কলেজগুলোতে সব বিভাগ মিলে আসন আছে ৯ হাজার ২৪০টি। অথচ জিপিএ-৫ পাওয়া প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই পড়ার সুযোগ পাবে না সরকারি কলেজে! সেই হিসেবে সরকারি কলেজের একটি আসনের জন্য লড়াই করবে ১৬ জন শিক্ষার্থী।
শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, যাচাই-বাছাই শেষে ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টায় প্রথম দফায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১ থেকে ৮ জানুয়ারি নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চায়ন করতে হবে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৩২৮ টাকা ফি পরিশোধ করে ভর্তির প্রাথমিক এ নিশ্চায়ন সম্পন্ন করতে হবে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের।
চূড়ান্তভাবে মনোনীত শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম চলবে ২২ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। ভর্তি কার্যক্রম শেষে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে একাদশে ক্লাস শুরু হবে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট পাঁচটি জেলা রয়েছে। চট্টগ্রাম ছাড়া বাকি চারটি জেলা হচ্ছে— কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি।
শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি কলেজ মিলে মোট আসন রয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার। আগের বছরের শিক্ষার্থীসহ মোট আবেদন পড়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার জনের। এর মধ্যে অনেকে একাধিক সরকারি কলেজেও আবেদন করেছে। সবমিলিয়ে আরও প্রায় ৪০ হাজার আসন খালি থাকবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রামে যে সাতটি সরকারি কলেজ শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে, সেগুলো হলো—চট্টগ্রাম কলেজ, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, নাসিরাবাদ সরকারি মহিলা কলেজ, বাকলিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ। অন্যদিকে সরকারি কমার্স কলেজ শুধুমাত্র ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
প্রথম সারির এই সাত কলেজে সব বিভাগ মিলিয়ে আসন রয়েছে ৯ হাজার ২৪০টি। এর বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার। অর্থাৎ প্রতিটি সরকারি কলেজের আসনের বিপরীতে ‘যুদ্ধ’ করবে ১৬ জন শিক্ষার্থী। যদিও একজন শিক্ষার্থী নিজের পছন্দমত একাধিক সরকারি কলেজে আবেদন করেছে, তাই বেড়েছে আবেদনের সংখ্যা।
যদি সরকারি সাত কলেজে শুধুমাত্র জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হয় তাহলে প্রায় অর্ধেক মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে না।
কোন কলেজে কত আসন, কত আবেদন
চট্টগ্রাম কলেজ: চট্টগ্রামের সেরা এই কলেজটিতে বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগে মোট আসন রয়েছে ১ হাজার ৪০টি। যারমধ্যে বিজ্ঞানে ৬৬০ ও মানবিকে ৩৮০ সিট। কিন্তু এই হাজারখানেক সিটের বিপরীতে চট্টগ্রাম কলেজে আবেদন জমা পড়েছে ১৮ হাজার।
সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ: এই কলেজে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে মোট আসনের সংখ্যা ১ হাজার ৭৩৫ টি। যারমধ্যে বিজ্ঞানে ৬৬০, মানবিকে ৪৬০ ও ব্যবসা শিক্ষাতে ৬১৫টি। তবে মহসিন কলেজে পড়তে আবেদন করেছে ৩১ হাজার শিক্ষার্থী।
বাকলিয়া সরকারি কলেজ: বাকলিয়া সরকারি কলেজে আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ৩২ হাজার। যদিও এই কলেজে আসন রয়েছে ১ হাজার ৪২৫টি। যারমধ্যে বিজ্ঞানে ৪৫০, মানবিকে ৪৫০ ও ব্যবসা শিক্ষাতে ৫২৫টি।
সরকারি সিটি কলেজ: সরকারি কলেজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে সরকারি সিটি কলেজে। দিবা-বৈকালিক মিলিয়ে দুই শাখায় মোট সিট রয়েছে ১ হাজার ৮৮০টি। কলেজের দিবা শাখার বিজ্ঞানে আছে ৬৬০টি, মানবিকে ৩৮০ ও ব্যবসা শিক্ষাতে ৩৮০টি এবং বৈকালিক শাখায় কোনো বিজ্ঞান শাখা নেই। তবে মানবিক ও ব্যবসা শিক্ষাতে আছে ৩৮০টি করে সিট। কিন্তু এই কলেজে আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ৪০ হাজার।
সরকারি কমার্স কলেজ: তবে তুলনামূলক সব থেকে কম আবেদন পড়েছে সরকারি কমার্স কলেজে। যদিও এই কলেজটি শুধুমাত্র ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের বিশেষায়িত কলেজ। এখানে শুধু ব্যবসা শিক্ষার শিক্ষার্থীদের জন্য আসন রয়েছে ৯০০টি। আর আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ৭ হাজার।
কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ: ২০০৮ সাল থেকে কলেজ শাখা শুরু হওয়া নগরীর অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজে সিট আছে ১৮০টি। যার ৯০টি বিজ্ঞানের ও বাকি ৯০টি ব্যবসা শিক্ষার। এখানে আবেদন পড়েছে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী।
সরকারি সাত কলেজে আবেদনের তথ্যগুলো নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কলেজ উপ-পরিদর্শক বিজয় ভৌমিক।
চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমাদের মোট পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যার থেকে অনেক বেশি আসন রয়েছে। তাই কোনো শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হতে পারবে না—এমনটা ভাবার সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কলেজগুলোতে সবাই পড়তে পারবে না। স্বাভাবিকভাবে এসব কলেজগুলোতে সবাই পড়তে চায়, তাই আবেদনও হয় বেশি। তবে নগরীতে আরও ভালো ভালো কলেজ রয়েছে, যেগুলোতে পড়তে পারবে আমাদের শিক্ষার্থীরা।’
ডিজে