চট্টগ্রামের সেই অক্সিজেন প্ল্যান্টে মিলেছে অবৈধ কার্বন ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন সিলিন্ডার
ওভার প্রেসার থেকে দুর্ঘটনা, ধারণা তদন্ত কমিটির
চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ হওয়া সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে অনুমোদনহীন কার্বন ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেনের সিলিন্ডার পাওয়া গেছে। এছাড়া প্ল্যান্টের কলামে ওভার প্রেসার থাকার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।
রোববার (৫ মার্চ) দুপুর সাড়ে ৩টায় বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বলেন, ‘প্ল্যান্টে অক্সিজেনের পাশাপাশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন সিলিন্ডারও দেখেছি আমরা। যদিও সেসবের অনুমোদন তাদের ছিল না। সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি, আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমরা তদন্ত কাজ শেষ করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে বিষয়টি স্টাডি করার জন্য যা যা উপদান সংগ্রহ করা দরকার তা আমরা করছি। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি যে, এই অক্সিজেন প্ল্যান্টের গ্যাস সেপারেশন কলাম থেকেই এই বিস্ফোরণের সূত্রাপাত হতে পারে। তবে এটি নিয়ে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে, যেটি নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি।’
রাকিব হাসান আরও বলেন, ‘আমরা পুরো বিষয়টি স্টাডি করেছি। মালিকপক্ষের গাফেলতি থাকলে তাও তদন্ত করা হবে। মালিকপক্ষের অপরাধ ৩৬০ ধারায় আমলে নেওয়া হবে। খুব দ্রুততম সময়ে আমরা তদন্ত শেষ করা হবে।’
সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের ম্যানেজার মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ, বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও ইউনিয়নের সার্টিফিকেটও রয়েছে আমাদের। এমন ঘটনা হওয়ার কথা নয়, কিন্তু কিভাবে হয়েছে, তা বুঝতেই পারছি না। গত এক সপ্তাহ আগেও এখানে চায়নাদের একটি টিম ভিজিট করে গেছে।’
অক্সিজেন প্ল্যান্টে অনুমোদনহীন কার্বন ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন সিলিন্ডারের বিষয়ে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মামুন বলেন, ‘এগুলোর অনুমোদন ছিল। আমরা নাইট্রোজেন উৎপাদন করি না ৷ বাতাস থেকে পরিশোধন করে কেবল অক্সিজেনটা নিই, নাইট্রোজেন আর কার্বন ডাই-অক্সাইড বাতাসে ছেড়ে দিই।’
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমরা ঘটনাস্থলে এসে বেশ কিছু ফায়ার এস্টেঙ্গুইসার দেখতে পেয়েছি । তবে তা পর্যাপ্ত ছিল কি-না, আমরা নিশ্চিত নই এখনও।’
তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানের ফায়ার লাইসেন্স ছিল। তবে তারা ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়ন করেনি। সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য তারা আবেদন করেছিলেন। অক্সিজেন সিলিন্ডার ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে একটি গাইড লাইন মেনে চলতে হয়। এই বিষয়টি বিস্ফোরক অধিদপ্তর ভালো বলতে পারবেন।’
এছাড়া সকালে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আমরা বিশ্লেষণ করে দেখবো। এরপর আমাদের প্রতিবেদন জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে দেবো।’
অক্সিজেন প্ল্যান্ট বিস্ফোরণে আশপাশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেও বড় ক্ষতি হয়েছে। এইচ স্টিল রি-রোলিং মিল, রুবাইয়া অক্সিজেন লিমিটেড, ভেজিটেবল অয়েল ও রুবাইয়া প্লাস্টিকে ব্যবস্থাপক মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় আমাদের চারটি প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ১০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে বিকট শব্দে প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবন ও ছাদ উড়ে গেছে। ধসে গেছে প্রতিষ্ঠানের সবগুলোর ছাদ ও দেয়াল।’
আইএমই/ডিজে