চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। ১০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করায় এ পরোয়ানা জারি করা হয়। এর আগে ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ২৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর বড় ছেলে মঈনুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত সাইফ পাওয়ারটেকের কর্ণধার রুহুল আমিন তরফদারের মেয়ের স্বামী। যদিও সেবার মঈনুদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পরপরই থানায় এসে পাওনাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি আংশিক টাকা পরিশোধ করেছেন। পাওনাদারের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ হওয়ায় আদালতে না পাঠিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।
গত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমানের আদালত মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে নতুন পরোয়ানাটি জারি করেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য এসবিএসসি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার পক্ষ থেকে ২০২২ সালে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করা হয়। ওই মামলায় চলতি বছরের ২৭ মার্চ ঋণ গ্রহণকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহমুদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ডিক্রি জারি করে আদালত।
ওই ডিক্রিতে মূল টাকা হিসেবে ৯ কোটি ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার ২২৯ টাকার ওপর ২০২২ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১২ শতাংশ হারে সুদ ও অন্যান্য খরচসহ মোট ১০ কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার ৬৬ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই টাকা ৬০ দিনের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হলেও তা পরিশোধ না করায় ঋণগ্রহীতা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত ৮ জুলাই ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি জারি মামলা করা হয়।
জানা গেছে, ঋণের বিপরীতে কোনো স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক বা সহায়ক জামানত ছিল না। ডিক্রিদার ব্যাংক হলফনামা সহকারে অর্থঋণ আইনের ৩৪ ও ৩৫ ধারা অনুযায়ী ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার আবেদন করেন।
ছেলে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন দুই বছর আগে
এর আগে ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ২৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকায় গ্রেপ্তার হন মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর বড় ছেলে মঈনুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। রাজধানীর বনানীর অফিস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে তেজগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে গ্রেপ্তারের পরপরই থানায় এসে পাওনাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি আংশিক টাকা পরিশোধ করেছেন। পাওনাদারের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ হওয়ায় আদালতে না পাঠিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।
মঈনুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী খান বাহাদুর গ্রুপ এবং আমানত মেরিন ওয়ার্কস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ২৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ছিল।
মঈনুদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের সঙ্গে চেক জালিয়াতির ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানটি নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্টে মামলা দায়ের করে। এই মামলায় ঢাকার তেজগাঁও থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিডি ফাইন্যান্সের পক্ষ থেকে পুলিশকে জানানো হয়, মঈনুদ্দিন চৌধুরী গ্রেপ্তার হওয়ার পর আংশিক টাকা পরিশোধ করেছেন। এ বিষয়ে তার সঙ্গে ‘সমঝোতা’ হওয়ায় আদালতে না পাঠিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে বিডি ফাইন্যান্সের আইন বিভাগের প্রধান ব্যারিস্টার ইব্রাহিম খলিল ওই সময় বলেন, মঈনুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী অসুস্থ। তাই মানবিকতার খাতিরে তার সঙ্গে সমঝোতায় এসেছি। পুরো টাকা পেমেন্ট হলে আমরা মামলা তুলে নেব। তবে তার কাছে বিডি ফাইন্যান্সের আরও অনেক টাকা পাওনা রয়েছে।
আইএমই/ডিজে