চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালে দুদিনে মাত্র ৩ করোনা পরীক্ষা, রোগীরা ছুটছেন প্রাইভেটে
ফ্লু কর্নারে ডেঙ্গু পরীক্ষা দিলেও করোনায় ‘না’
চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভিড় বাড়ছে জ্বর, সর্দি, গা-ব্যথায় আক্রান্তসহ বিভিন্ন রোগীর। তবে যে হারে করোনা ও ডেঙ্গু ভীতি নিয়ে রোগী হাসপাতালে যাচ্ছেন, সে হারে পরীক্ষা হচ্ছে না। এ ধরনের রোগীরা হাসপাতালে গেলে তাদের দেখে ডাক্তার ডেঙ্গু পরীক্ষা দিলেও করোনার নিয়ে যেন কোনো মাথা ব্যথায় নেই। আবার অনেকে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের ওপর তেমন ভরসা করতে না পেরে ছুটছেন প্রাইভেট ল্যাবগুলোতে। সেখানে বাড়তি দামে ডেঙ্গু ও করোনা টেস্ট করাচ্ছেন তারা। চারদিন আগে সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত কিট আসলেও করোনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে রোববার (১৫ জুন) থেকে। তাও মাত্র একজন রোগীকে করোনার আরটিপিসিআর পরীক্ষা করানো হয়েছে এবং চট্টগ্রাম মেডিকেলে করা সেই পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। এছাড়া ডেঙ্গু পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে ৬০ জন রোগীকে।
এদিকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আরটিপিসিআর পরীক্ষা হচ্ছে না। শুধুমাত্র রেপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট হচ্ছে হাসপাতালটিতে। রোববার দু’জন রোগীকে পরীক্ষা করানো হলে রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, তাদের পর্যাপ্ত কিটের মজুদ আছে। সন্দেহভাজন রোগীদের অবশ্যই করোনা পরীক্ষা করানো হবে।
রোববার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখানোর জন্য টিকেট নিয়েছেন প্রায় ২৫০ জন রোগী। বেশিরভাগই ছিল জ্বর, সর্দি, শরীর ব্যথার রোগী। আর ফ্লু কর্নার থেকে টিকিট নিয়েছেন ১৩০ জন রোগী।
সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালের এনসিলারি ভবনের বহির্বিভাগে রোগী ঠাসা ছিল। ডেঙ্গুর ভয়ে অনেকে হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য ভিড় জমিয়েছেন। একইসঙ্গে ছিল করোনা-ভীতিও। এদের মধ্যে অনেকে চেয়েছেন সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর এনএসওয়ান পরীক্ষার সঙ্গে ১০০ টাকায় আরটিপিসিআর ল্যাবে করোনাটা পরীক্ষা করতে। কিন্তু সেই ভাগ্য মিলেনি রোগীদের। ডাক্তার রোগী দেখে ডেঙ্গু পরীক্ষা দিলেও করোনাকে ‘না’ করছেন। রোগী করোনা পরীক্ষার জন্য ডাক্তারের কাছে ইচ্ছে প্রকাশ করলেও ডাক্তার তাদের জানান, করোনা পরীক্ষার কিট নেই।
আবার অনেক রোগীকে ডেঙ্গুর সঙ্গে আরও আনুষাঙ্গিক পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব পরীক্ষা না করে অনেকে ফেরত আসেন। আবার অনেক রোগী বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে করোনা পরীক্ষার নমুনা দিয়েছেন।
বেসরকারি হাসপাতালে ছোটা রোগীদের গুনতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি টাকা। সরকারি হাসপাতালে করোনা নমুনা পরীক্ষা ও এন্টিজেন টেস্ট ফি যেখানে ১০০ টাকা, সেখানে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে তা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দীন খান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পর্যাপ্ত কিট আনা হয়েছে। জেনারেল হাসপাতালেও কিট দিয়েছি আমরা। কিট আসার পর আজই প্রথম একজনের করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে এবং রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। রেস্পন্সিবল চিকিৎসক যাকে করোনা টেস্টের জন্য সার্টিফাইড করছেন, তারই টেস্ট করানো হচ্ছে।’
করোনায় সন্দেহজনক রোগী হলেও কেন পরীক্ষা করা হচ্ছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা টাস্কফোর্স মিটিংয়ে করোনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। কিটের যেহেতু স্বল্পতা রয়েছে, সেহেতু দেখেশুনে করোনা পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। আসলে ফ্লু কর্নার থেকে রোগীর লক্ষণ দেখে যদি ডাক্তার করোনা পরীক্ষার কথা বলেন, তবেই করোনা পরীক্ষা করানো হবে।’
বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১২ জুন) নগরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষা কিট এসে পৌঁছে। এরপর শনিবার থেকে পুরোদমে করোনা পরীক্ষা চালু করার কথা থাকলেও সেটি শুরু হয় রোববার থেকে। তাও সারাদিনে মাত্র একজন রোগীর নমুনা পরীক্ষা দিয়েই দায়সারা হয়েছে। তবে সেই নমুনা পজেটিভ এসেছে। এছাড়া কিট আসার পরও চট্টগ্রামের বিআইটিআইডিতে কোনো করোনা পরীক্ষা হয়নি।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায়, চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ২৪ জনের আরটিপিসিআর পরীক্ষা করে ১ জন, পার্কভিউ হাসপাতালে ৫৯ জনের মধ্যে ২ জন, এপিক হেলথ কেয়ারে ৪৯ জনের মধ্যে ৪ জন, এভারকেয়ারে ১৮ জনের আরটিপিসিআর পরীক্ষা করে ২ জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ৯ জনের মধ্যে নগরের ৮ জন, অপরজন পটিয়ার উপজেলার বাসিন্দা।
ডিজে