এবার একুশে পদক পেলেন দেশের কিংবদন্তী চিকিৎসক ডা. সায়েবা আক্তার। ‘সায়েবাস মেথড’ এর স্রষ্টা হিসেবে তিনি বেশি পরিচিত।
অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তারের জন্ম চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করার পর সেখানেই কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। তার পিতা ছিলেন টাঙ্গাইলের করটিয়া সাদত কলেজের শিক্ষক, সেই সুবাদে ওই ক্যাম্পাসেই বেড়ে ওঠা। স্বামী ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবিরও পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনি একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজ অ্যান্ড ইউরোলজির সাবেক পরিচালক। কর্মজীবনে ডা. সায়েবা আক্তার দীর্ঘদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক এবং অবসটেট্রিক অ্যান্ড গাইনোকলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সারা বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে একজন করে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু ঘটছে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে। এর ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ। এই চিরাচরিত ভয়ঙ্কর চিত্রটি বদলে দিতে বিস্ময়কর অবদান রাখেন বাংলাদেশের চিকিৎসক ডা. সায়েবা আক্তার। ‘সায়েবাস মেথড’ নামের এই পদ্ধতি আজ অজস্র নারীর জীবন বাঁচানোর এক মোক্ষম উপায় হিসেবে স্বীকৃত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে।
বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও আফ্রিকা মহাদেশ ও দক্ষিণ আমেরিকার এক ডজন দেশে সরকারি কর্মসূচির অংশ হয়ে উঠেছে এই পদ্ধতি। নেপাল ও পূর্ব তিমুরেও এটা ব্যবহৃত হচ্ছে।
২০০৯ সালে যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত ব্রিটিশ জার্নাল অব অবসটেট্রিকস অ্যান্ড গাইনোকোলজিতে সায়েবাস মেথডের ওপর পর্যালোচনা ছাপা হয়। ২০১১ সালে যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ অব অবসটেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টসের পক্ষ থেকে তাকে তার উদ্ভাবনের জন্য সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়।
বিনামূল্যে লাখ টাকার অপারেশন করেন অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার। চাকরি থেকে অবসরের পর রাজধানীর মগবাজারে ‘মামস ইন্সটিটিউট অব ফিস্টুলা অ্যান্ড ওমেনস হেলথ’ নামের একটি চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন। অবসরকালীন প্রভিডেন্ট ফান্ডের ৩৩ লাখ টাকা ভেঙে অসহায় ফিস্টুলা রোগীদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। নিবেদিতপ্রাণ বন্ধু, স্বজন, শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের সহযোগিতায় রোগীদের প্রাণের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে তার প্রতিষ্ঠানটি। ফিস্টুলামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সরকারের সহযোগিতায় এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ ইন্সটিটিউট গড়ার স্বপ্ন দেখছেন স্বনামধন্য এই চিকিৎসক।
সপ্তাহে ৩ দিন ফিস্টুলা, প্রলাপসসহ প্রসবের আঘাতজনিত ১০ থেকে ১২টি অপারেশন করেন সায়েবা আক্তার। সবসময় তার ডাকে সাড়া দেন ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী ও ৬ থেকে ৭ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিবেদিতপ্রাণ একটি দল।
২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত ২০ শয্যার হাসপাতালে দ্বিগুণের বেশি চাপ থাকে বছরব্যাপী। দক্ষ জনবল তৈরির মাধ্যমে কিভাবে কয়েকগুণ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া যায় সেই ভাবনায় বিভোর রক্তক্ষরণ বন্ধে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সায়েবাস মেথডের জনক ডা. সায়েবা।
প্রতিটি ফিস্টুলার অপারেশন ব্যয় ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আক্রান্ত ২০ হাজারের প্রায় সবাই অসহায় হতদরিদ্র হওয়ায় চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে পারেন না কেউই। ডা. সায়েবা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটিতে প্রচুর দরিদ্র মানুষ আসছেন। এই রোগীদের দিকে তাকানো যায় না। গরিব মানুষ। এদের চিকিৎসার জন্য আমার চিকিৎসক ছাত্র-ছাত্রীরাও প্রচুর হেল্প করছে। কোনো চিকিৎসকই এখান থেকে কোনো সম্মানী বা টাকা নেন না।
সিপি