চট্টগ্রামের শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে ভ্যাটের ‘তাণ্ডব’, সব কারখানা বন্ধ হয়ে গেল ‘অপমানে’

রডের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা

চট্টগ্রামের সবকটি জাহাজভাঙা কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে আজ বুধবার (১০ নভেম্বর) থেকে কারখানাগুলোতে কর্মরত প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ছেন। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপকূলে মোট ১৫০টি জাহাজভাঙা কারখানা হলেও এর মধ্যে সচল আছে ৬০টি কারখানা।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে জাহাজভাঙার চারটি কারখানায় হঠাৎ অভিযান চালায় কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনের তিনটি দল। দুপুর থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত কারখানাগুলোর প্রধান কার্যালয় ও কারখানা কার্যালয়ে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযান শেষে ওই কারখানাগুলোর নথিপত্র ও কম্পিউটার জব্দ করে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদের ভ্যাট কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যান জাহাজভাঙা কারখানার মালিকরা। অভিযানের সময়ে কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট কর্মকর্তারা নজিরবিহীন হেনস্তাও চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

যে কারখানায় অভিযান চালানো হয়, সেগুলো হচ্ছে— ভাটিয়ারী স্টিল শিপব্রেকিং ইয়ার্ড, প্রিমিয়ার ট্রেড করপোরেশন, মাহিনুর শিপ-রিসাইক্লিং ইয়ার্ড এবং এসএন করপোরেশন।

চট্টগ্রামের শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে ভ্যাটের ‘তাণ্ডব’, সব কারখানা বন্ধ হয়ে গেল ‘অপমানে’ 1

এর মধ্যে এসএন করপোরেশন চট্টগ্রামের শিল্পপতি ও ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরীর মালিকানাধীন। ২০১৯ সালে তার এসএন করপোরেশন ২১টি জাহাজ আমদানি করে। এগুলোর আমদানি ব্যয় ছিল এক হাজার ২৬৬ কোটি ৬৩ লাখ ৩২ হাজার ৮৮৬ টাকা।

জাহাজভাঙা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) অভিযোগ করেছে, কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনের ওই তিনটি দল কারখানাগুলোতে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে। অভিযানের আগে তারা কোনো ধরনের নোটিশও দেয়নি।

তারা বলছেন, জাহাজভাঙা কারখানাগুলো নির্ধারিত ভ্যাট অগ্রিম পরিশোধ করেন। এ কারণে তাদের পক্ষে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার সুযোগই নেই।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙার কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে আজ বুধবার (১০ নভেম্বর) থেকে কারখানাগুলোতে জাহাজ কাটিং, স্ক্র্যাপ সরবরাহসহ কোনো কাজ আর চলবে না।

তবে চট্টগ্রামের কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযান চালানো কারখানাগুলো ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে— এমন তথ্য পেয়ে তারা অভিযানে গেছে। আর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখার জন্য নথি জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রামের জাহাজভাঙা কারখানাগুলো বন্ধের ঘোষণা আসার পর রডের দাম আরও বেড়ে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সপ্তাহখানেক আগেও নির্মাণশিল্পের অন্যতম উপকরণ রডের দাম ছিল প্রতি টন ৭৫ হাজার টাকা। সোমবার সেই রডের দাম বেড়ে ৮০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। অথচ পাঁচ মাস আগেও প্রতি টন রড বিক্রয় হতো ৫৫ হাজার টাকা। এই সময়ে টনপ্রতি দাম বেড়েছে ২৫ হাজার টাকা।

জাহাজ রিসাইকল বা জাহাজভাঙায় বিশ্বে সবার শীর্ষে বাংলাদেশের অবস্থান। ২০১৯ সালে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি জাহাজ রিসাইকল হয়েছে বাংলাদেশে। এ বাজারে বাংলাদেশের পরে রয়েছে ভারত ও তুরস্ক।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!