চট্টগ্রামের লোক, তাই পুরান ঢাকার গ্রুপ হয়রানি করে হকি ফেডারেশনে

ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে পড়ে হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে। তার জায়গায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইউসুফ। কাউন্সিলরদের রায়ে তিনি হকি ফেডারেশনের এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক। সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে নির্বাহী দায়িত্ব পালন করছেন ইউসুফ। ফেডারেশনের দাপ্তরিক কাজের সুবিধার্থে সভায় রেজ্যুলেশন করে তাকে করা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।

কিন্তু ঢাকার বাইরের (চট্টগ্রাম) লোক হয়ে বড় দায়িত্ব পাওয়াই কাল হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা ইউসুফের। হকি ফেডারেশনে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসার অধিকার নেই তার। নির্বাহী দায়িত্ব পালন করতে হয় অফিস স্টাফদের কক্ষে বসে। একজন সহ-সভাপতি ও একজন যুগ্ম সম্পাদকের নেতৃত্বে পুরান ঢাকার একটি চক্র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের সব কাজেই বাগড়া দেন।

ইউসুফ বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম থেকে এসে ফেডারেশনে কাজ করি। আমার সব কিছুই চট্টগ্রামে। এখানে কিছুই নেই। ফেডারেশনের কোচ থাকার জন্য ডরমেটরিতে আমার থাকার ব্যবস্থা হয়। হুমকি-ধমকি পাওয়ার পর সভাপতি আমাকে বিমানবাহিনীর ফ্যালকন হলে অফিসার্স মেসে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’

জানা গেছে, হকি ফেডারেশনে পুরান ঢাকার প্রতাপ দীর্ঘদিনের। যে কমিটিই আসুক, সবসময় তাদের মন বুঝে চলতে হয়। পুরান ঢাকার ওই গ্রুপটি নিয়মনীতিরও তোয়াক্কা করেন না। নিজেদের মর্জিমতো ফেডারেশন চালাতে চান। এই দলে আছেন সহ-সভাপতি সাজেদ এ আদেল, দুই নম্বর যুগ্ম সম্পাদক কামরুল ইসলাম কিসমতসহ আরও কয়েকজন। কিন্তু ইউসুফ তাদের সব অনিয়ম মানতে চান না বলেই পুরান ঢাকা গ্রুপের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছেন।

ভারপ্রাপ্ত মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘নির্বাহী ক্ষমতা সাধারণ সম্পাদকের কাছে। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আমি সবার সঙ্গে কথা বলে কাজ করার চেষ্টা করি। ক্ষমতার অপব্যবহার করি না। অথচ আমাকে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসতে দেওয়া হয় না। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর একদিন চেয়ারে বসতে চেয়েছি। আমাকে সেখান থেকে উঠিয়ে দিয়েছেন সাজেদ আদেল। তাই আমাকে দাপ্তরিক কাজ করতে হয় অফিস স্টাফদের কক্ষে বসে। অথচ সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ দখল করে নিয়মিত আড্ডা দেন তারা।’

জানা গেছে, ইউসুফের বিরোধিতার শুরুটা করেছিলেন দুই নম্বর যুগ্ম সম্পাদক কামরুল ইসলাম কিসমত। সাবেক এই খেলোয়াড় ভোটে পিছিয়ে পড়ে এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক হতে পারেননি বলে পাননি ফেডারেশনের নির্বাহী দায়িত্ব। অথচ করোনাকালে কিসমতের বিরুদ্ধে রয়েছে দুস্থ ক্রীড়াবিদদের অর্থ জালিয়াতির অভিযোগ। নিজের ফোন নম্বর দিয়ে অন্য নামে দুস্থদের জন্য বরাদ্দ ৫ হাজার টাকা তোলার চেষ্টা করেছিলেন কিসমত। সেটা ধরাও পড়ে যায়।

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইউসুফকে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগও আছে কিসমতের বিরুদ্ধে।এ প্রসঙ্গে ইউসুফ বলেন, ‘দুস্থদের অর্থ জালিয়াতির বিষয়টি যখন সামনে চলে এলো, তখন আমাকে তিনি (কিসমত) অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। মেরে ফেলার হুমকিও দেন।’

কিসমত অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো হুমকির স্বরে বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। আপনি যাচাই করে দেখেন। আর ও অন্যায় কাজ করলে বাধা দিব না? ও সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসতে চায়। একবার বসেই দেখুক। রায়ট লেগে যাবে। ও অরিজিনালি যুগ্ম সম্পাদক। ও কেন সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসবে? একটা মামলা চলছে। কোনো অবস্থাতেই ওই চেয়ারে ইউসুফ বসতে পারে না। মমিনুল হক সাঈদ একবার ঢাকায় পাড়া দিক, ওই ছেলেরে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।’

অতিষ্ঠ হয়ে ওঠা ইউসুফ বলেন, ‘এভাবে আর চলতে পারে না। আগামী সভায় আমি সভাপতির কাছে সব কিছু খুলে বলব। যদি সভাপতি কিছু শুনতে না চান, তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দেবে। এসব কারণে সরকার যদি মেয়াদপূর্তির আগেই কমিটি ভেঙে দেয়, আমার কিছু করার থাকবে না। সবার আগে সম্মান। সব খুইয়ে তো ভাই কাজ করতে পারব না।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমাকে সম্মান করতে হবে। নইলে এই কমিটির মেয়াদ ফুরোনোর আগে যদি সরকার ভেঙে দেয়, তাহলে আমার কিছু করার থাকবে না।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!