ভিডিও/ চট্টগ্রামের মেয়র রেজাউলকে এক হাত নিলেন নোয়াখালীর কাদের মির্জা

‘ডাকাতির কথা বলায় এখন আমি অর্বাচীন বালক’

মাত্র দুদিন আগে চট্টগ্রাম সিটির ভোট নিয়ে নোয়াখালীর পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জার সমালোচনাকে ‘অর্বাচীন বালকের প্রলাপ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন চট্টগ্রামের নতুন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এবার এর জবাবে রেজাউলকে আবার এক হাত নিলেন কাদের মির্জা।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার নব নির্বাচিত মেয়র আবদুল কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই।

সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে কাদের মির্জা বলেন, ‘আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের সাহেব আমাকে বলেছে তুমি এলাকার বাইরে কারও বিরুদ্ধে কথা বলবে না। নির্বাচন নিয়ে কথা বলবে না।’

YouTube video

তিনি বলেন, ‘কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য চট্টগ্রামের মেয়র আমাকে বলেছে অর্বাচীন বালক। আমি চট্টগ্রামের ভোট ডাকাতির কথা বলায় এখন আমি অর্বাচীন বালক। অর্বাচীন বালক মানে হচ্ছে আমি অবুঝ বালক।’

চট্টগ্রামের নবনির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে কাদের মির্জা বলেন, ‘আপনি নিজেকে ত্যাগী দাবি করেছেন। ৬৪ বছর ধরে রাজনীতি করেন। এই ত্যাগী লোকটা কেন ভোট ডাকাতি করতে গেলেন? এটা আপনার কাছে আমার প্রশ্ন। কেন মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করলেন?’

চট্টগ্রামের মেয়রকে লক্ষ্য করে বসুরহাটের মেয়র আরও বলেন, ‘আপনি এতো বড় নেতা— প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগে আপনার নামও শুনিনি। কথা বলার আগে চিন্তা করে বলবেন। যদি নিজেকে অভিজ্ঞ মনে করেন, ত্যাগী মনে করেন তাহলে ভাষাজ্ঞান রেখে কথা বলবেন। এই অবুঝ বালকটা অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বিগত ১৬ জানুয়ারি বসুরহাট নির্বাচনে কাস্টিং ভোটে ৭৭ ভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছি। এটা আপনাকে স্মরণ করে দিতে চাই।’

কাদের মির্জা বলেন, ‘আমার দলের ঘোষণাপত্রে আছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা। ওনারা বলতে পারলে আমি পারবো না কেন? আমি রক্তচক্ষুকে ভয় করি না। আজকে সংবাদমাধ্যমগুলোকে আমার কোন কথা যাতে মানুষের কাছে না যেতে পারে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যারা এসব করছে আমি তাদের চিনি। একজন পিআরও— নাম হচ্ছে আবু নাসের, আরেকজন বিটিভির সাংবাদিক শফিক বাবু। ওনারা দুজন একরাম চৌধুরীর (নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ) মাসোয়ারা খায়।’

দুটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠান মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন কাদের মির্জা। একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘আমি বুঝি না টেলিভিশন চ্যানেল, সংবাদপত্রগুলো আজ কি কারও হতে বন্দী, কারও নির্দেশনায় চলে? এই অবস্থা কি দেশে চলতে দেওয়া যায়?’

ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ কিছু কিছু সংবাদমাধ্যমের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, সাংবাদিকেরাও তাদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। গতকাল (রোববার) জনপ্রিয় চ্যানেল চ্যানেল আইয়ের ‘টু দ্য পয়েন্ট’ অনুষ্ঠানে সোমা ইসলামের সঙ্গে আমি যুক্ত হই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই অনুষ্ঠানের মাঝপথে আমাকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’

কাদের মির্জা বলেন, ‘আজ (সোমবার) ডিবিসি টেলিভিশন ‘রাজকাহন’-এ আমাকে যুক্ত করেছিল। হঠাৎ করে সকালবেলায় বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে কাদের মির্জা বলেন, ‘চট্টগ্রামের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। রক্তপাত হয়েছে। এটাকে মেনে নেওয়া যায় না। আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সংগঠন আওয়ামী লীগ পথহারা। চট্টগ্রামের নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কিসের সুষ্ঠু হয়েছে? মায়ের বুক খালি হয়েছে। সেখানে জোর করে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার করে একজন প্রার্থীর পক্ষে ভোট নিয়েছে।’

কাদের মির্জার এই বক্তব্য আলোচিত হওয়ার পর এর প্রতিক্রিয়ায় রোববার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটের নিজ বাসভবনে চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কে কী বলছে, সেটি তার ব্যাপার। এটি হলো অর্বাচীন বালকের প্রলাপ। গালি দেওয়ার দরকার নেই, কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করে দেবো— চট্টগ্রামের মেয়র কী জিনিস।’

রেজাউল এ সময় আরও বলেন, ‘আমি রাজনীতি করছি ১৯৬৬ সাল থেকে। রাজনৈতিক জীবনে আমি ছয় দফা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব আন্দোলনে জড়িত ছিলাম। এই দীর্ঘ সময়ে অনেক কিছু দেখেছি, অনেকে অনেক কথা বলেছে, দাঁড়িয়ে গালিগালাজ করেছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm