চট্টগ্রামের মণ্ডপে হামলার ছক আঁকা হয় দুদিন আগে, মোক্তারের বাসায় বৈঠক

0

চট্টগ্রামের পূজা মণ্ডপে ১৫ অক্টোবর সংঘটিত হামলার পরিকল্পনা হয়েছিল দুদিন আগে ১৩ অক্টোবর রাতে। হামলার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে চট্টগ্রামের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন যুব অধিকার পরিষদের নগর কমিটির সদস্য হাবিবুল্লাহ মিজান।

শনিবার (২৩ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফিউদ্দীনের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন হাবিবুল্লাহ মিজান।

জবানবন্দিতে ছাত্র অধিকার পরিষদ বন্দর থানার সাবেক আহ্বায়ক হাবিবুল্লাহ মিজান জানান, দুর্গাপূজার অষ্টমী (১৩ অক্টোবর) রাতে হামলার বিষয়ে পরিকল্পনা করা হয় শ্রমিক অধিকার পরিষদের নেতা মোক্তারের বাসায়। আর সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী দশমীর দিন (১৫ অক্টোবর) জুমার নামাজের পর শুরু হয় তাণ্ডব।

s alam president – mobile

মিজানের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, চট্টগ্রামের মণ্ডপে হামলার সেই মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর যুব অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মিজানুর রহমান।

কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে জুমার নামাজের একটি মিছিল থেকে ঐতিহাসিক জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে গেটে হামলা হয়। হিন্দু সম্প্রদায় ওই পূজামণ্ডপের গেট ভাঙচুর করা হয়েছে বলে দাবি করলেও মাঠপর্যায়ে কাজ করা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজে মূলত গেটের ব্যানার ও কাপড় ছেঁড়ার চিত্রই ধরা পড়েছে।

এ বিষয়ে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ঘটনার দুইদিন আগে ১৩ অক্টোবর শ্রমিক অধিকার পরিষদের এক নেতার বাসায় তারা হামলার পরিকল্পনা করে। দুদিন পর দশমীর দিন তারা আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে জুমার নামাজের পর মিছিল সহকারে জেএমসেন হল পূজা মন্ডপে হামলা চালায়,।

Yakub Group

এই ঘটনায় মোট ৮৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকশজনকে আসামি করে মামলা করা হয়। এ মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ওসি নেজাম জানান, এই ঘটনায় অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

দুর্গা পূজায় কুমিল্লার একটি মন্দিরে কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে ১৩ অক্টোবর কয়েকটি মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন জেলায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলা হয়।

এর জের ধরে ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের আগে চট্টগ্রাম নগরীর জেএমসেন হল পূজামণ্ডপে হামলা হয়। ওইদিন দুপুরে জুমার নামাজ শেষে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ গেইটে ৫০০ থেকে ৭০০ লোক ‘কুমিল্লার ঘটনার প্রতিবাদ’ জানিয়ে সমাবেশ করে। বেলা ১টা ৪০ মিনিটে নিউমার্কেট এলাকার আমতল, গোলাম রসুল মার্কেট ও রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকা থেকে আরও হাজারখানেক লোকের একটি মিছিল তুলসীধামের মন্দির এবং নন্দনকানন লোকনাথ মন্দির হয়ে আন্দরকিল্লায় আসার চেষ্টা করে।

এ সময় মিছিলটি কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার ও ওসির নেতৃত্বে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে নন্দনকানন বোস ব্রাদার্স মোড়ে। এরপর মিছিলটি সিনেমা প্যালেস হয়ে আন্দরকিল্লা মোড়ে এসে বিক্ষোভে মিলিত হয়।

সেখান থেকে তারা মিছিল নিয়ে জেএমসেন হলের দিকে এগিয়ে যায়। শুরুতেই তারা আন্দরকিল্লা মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এর মধ্যে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে মিছিলটি। এর মধ্যে একটি গ্রুপ সিরাজদ্দৌল্লা সড়কে, একটি গ্রুপ রেডক্রিসেন্ট গলিতে এবং অপর গ্রুপটি মসজিদে ঢুকে পড়ে। তবে এই ফাঁকে শ’খানেক লোক চলে যায় চেরাগি পাহাড় মোড়ের দিকে। এই গ্রুপটিই মূলত জেএমসেন হলের তোরণের ব্যানার ও কাপড় ছিঁড়ে নেয় এবং মন্দিরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। যদিও পরে টিয়ারশেল ছুঁড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।

বিএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!