ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর জন্য যে ইনজেকশনটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, এক সপ্তাহের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত সেই ওষুধটির কিছু ডোজ মিলেছে।
শুক্রবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত অ্যামফোটেরিসিন-বি ইনজেকশনের ২২টি ভায়াল সংগ্রহ করতে পেরেছে আক্রান্ত রোগীর ছেলেরা।
এসব ছাড়াও এই নারীর একটা অপারেশন করানোর বিষয়ে ভাবছেন জানিয়ে ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, ‘এখন তার চোখে এটি রয়েছে। তাই যাতে তার নাক ও মুখে নতুন করে এটি না ছড়ায় তাই একটি জটিল অপারেশন করতে হবে।’
চট্টগ্রামের পটিয়ার বাসিন্দা ওই রোগীর মেজ ছেলে বেলাল হোসাইন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডাক্তাররা মায়ের জন্য যে ইনজেকশনটি লাগবে বলে জানিয়েছেন, গত ৬ দিন ধরে সবখানে আমরা ওষুধটা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বিকন ফার্মাসিউটিক্যাসের ২টি এবং ইন্ডিয়ান একটি কোম্পানির ২০টি ভায়াল পাওয়া গেছে। আমার ছোট ভাই এই ওষুধগুলো নিয়ে আজ (শুক্রবার) ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছে।’
এর আগে গত ২৫ জুলাই প্রতিদিন ৫ ভায়াল করে ১৫ দিন এই ইনজেকশনটি প্রয়োগের নির্দেশনা দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। গত ৫ দিন ধরে সারা দেশের কোথাও ওষুধটি পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে শুক্রবার (৩০ জুলাই) যেসব ডোজ পাওয়া গেছে, সেগুলো দিয়ে ৪ দিন চলবে। এর মধ্যে আরও ওষুধ সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন বেলাল হোসাইন।
ওই সময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বেলাল হোসাইন বলেন, ‘করোনার কারণে সপ্তাহখানেক আগে বাবাকে হারিয়ে পুরো পরিবার এমনিতেই বিধ্বস্ত। এর পরপরই আমরা মায়ের এই রোগের কথা জানতে পারি। হাসপাতালের ডাক্তাররা বলেছেন অ্যামফোটেরিসিন-বি ইনজেকশনটি না দিলে মায়ের সেরে ওঠার সম্ভাবনা কম। ওষুধ প্রশাসন, কয়েকটি ওষুধ কোম্পানিসহ এ পর্যন্ত অন্তত ৫০ জায়গায় খোঁজ করেছি। অথচ কোথাও থেকে সাড়া পাচ্ছিলাম না।’
শেষ পর্যন্ত এই ওষুধের ২২টি ডোজ সংগ্রহ করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন আক্রান্ত ওই নারীর ছোট ছেলে হেলাল। শনিবার (৩১ জুলাই) থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওই নারীর শরীরে ইনজেকশনগুলো প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন তার সন্তানেরা।
হেলাল বলেন, ‘এই ওষুধটি অনেক ব্যয়বহুল। কিন্তু যা টাকা লাগে আমরা খরচ করতে রাজি আছি। তবুও ওষুধ পাচ্ছিলাম না ৫ দিন ধরে তন্ন তন্ন করে খোঁজ চালিয়েও। এখন কিছু ওষুধ পেয়েছি। আপাতত এগুলো দিয়ে চিকিৎসা শুরু করি। বাকি ওষুধের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো পাওয়া ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের এই রোগী বর্তমানে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। ওষুধ সংগ্রহের আগে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা এখন মূল ইনজেকশনটি না পেয়ে একটি বিকল্প ওষুধ পোসাকোনাজল রোগীকে দিচ্ছি। এটি মূলত অ্যামফোটেরিসিন-বি ইনজেকশনটি প্রয়োগের পরেই দিতেই হয়। তবে এখন কিছু করার না থাকায় আগেভাগেই তা দিয়ে দিচ্ছি। এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হলে মারা যাওয়ার আশঙ্কা ৫০ থেকে ৫৪ শতাংশ। তাই যত দ্রুত পারা যায় মূল ইনজেকশন দিতে হবে।’
চট্টগ্রাম প্রতিদিনের পাঠকদের কেউ যদি অ্যামফোটেরিসিন-বি নামের ইনজেকশনটি সংগ্রহে কোনোভাবে সহযোগিতা করতে পারেন, তাহলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের নিউজরুম নম্বরে যোগাযোগ করলে আমরা সেই তথ্য রোগীর ছেলের কাছে পৌঁছে দেবো। যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর— ০১৬৮৭৮৭৪৩৮৮। তবে ওষুধের তথ্য ছাড়া রোগীর ব্যাপারে কোনো তথ্য এই নম্বরে পাওয়া যাবে না।
সিপি