চট্টগ্রাম নগরীর বেপজা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষায় ‘অকৃতকার্য’ সেই ৬১ শিক্ষার্থীদের বিষয়ে অভিভাবকদের আশ্বস্ত করলেন বেপজা সিইপিজেডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (ইডি) মো. আব্দুস সোবহান। নির্বাচনী পরীক্ষার খাতা পুনর্বিবেচনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন তিনি। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বেপজা সিইপিজেডের ইডি মো. আব্দুস সোবহানের সঙ্গে দেখা করে তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কথা শোনার পর তিনি এই আশ্বাস দেন।
এর আগে গত ১ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর বেপজা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০২৪ সালের এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা নিয়ে তৈরি হয় নানান বিতর্ক। পূজার বন্ধ চলাকালে গত ২৩ অক্টোবর হঠাৎ নোটিশ বোর্ডে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের তালিকা ঝুলিয়ে দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল ফলাফল ঘোষণার আনুষ্ঠানিকতা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা নোটিশ বোর্ডে নিজেদের রোল নম্বর খুঁজে পেয়েছে, তারা উত্তীর্ণ হয়েছে বলে নিশ্চিত হতে পেরেছে। ২৫৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে রোল নম্বর খুঁজে পায় ১৯৮ শিক্ষার্থী।
অপর ৬১ শিক্ষার্থীর নাম বা রোল নম্বর নোটিশ বোর্ডে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে এসব শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. কাউছার আলী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের সন্তানেরা বিভিন্ন বিষয়ে ‘ফেল’ করেছে বলে জানানো হয়। এছাড়া তাদেরকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেন অধ্যক্ষ।
এ সময় অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের পরীক্ষার খাতা দেখতে চাইলে খাতা দেখানো হবে না বলে জানান অধ্যক্ষ। এ নিয়ে উদ্বিগ্নতা দেখা দেয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে। তারা কোচিং বাণিজ্যসহ অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ তোলেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে গত ৫ নভেম্বর দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনে ‘চট্টগ্রামের বেপজা স্কুলে ৬১ ছাত্রের শিক্ষাজীবন নিয়ে অধ্যক্ষের হেলাফেলা, নেপথ্যে ‘কোচিং বাণিজ্য’— শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘ফেল’ করার বিষয়টি তুলে ধরার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে অধ্যক্ষের যোগসাজশে কোচিং বাণিজ্যসহ নানান অনিয়মের কথা তুলে ধরা হয়।
এদিকে এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় ‘অকৃতকার্য’ ৬১ শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা বারবার অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অভিভাবকেরা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের কাছে ছুটে গিয়েও কোনো সুরাহা না পেয়ে আরও বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। নিরুপায় হয়ে তারা ছুটে যান বেপজা সিইপিজেডের ইডি মো. আব্দুস সোবহানের কাছে। তিনি বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে।
যোগাযোগ করা হলে বেপজা সিইপিজেডের ইডি আব্দুস সোবহান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অভিভাবকেরা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আমি শিক্ষকদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের খাতা পুনঃনিরীক্ষণ করিয়েছি। যারা ৯ বিষয়ে ফেল করেছে তাদেরকে তো বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া যায় না। তবে শিক্ষার্থীদের বিষয় আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। আমি অভিভাবকদের ডেকে এ বিষয়ে কথা বলবো।’
জেএন/ডিজে