চট্টগ্রামের বিজয় মেলার ১ মাসের আলোচনা সভা কমে হলো ৪ দিন
এমএ আজিজ স্টেডিয়াম চত্বরে জ্বলছে মুক্তিযুদ্ধের ‘বিজয় শিখা’
চট্টগ্রামের বিজয় মেলা, ৩৪ বছর আগে শুরু হয় সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর হাত ধরে। মাসব্যাপী আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চলতো চট্টলার মানুষের এই প্রাণের মেলা। তবে এবার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ছোট হয়ে এসেছে মেলার কার্যক্রম।
মাসব্যাপী মেলা চললেও মাত্র চারদিনের আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মেলা কমিটি। প্রতিবছর ডিসেম্বরের শুরুতেই ‘বিজয় শিখা’ প্রজ্বলনের মাধ্যমে মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও এবার তা শুরু হয়েছে মাঝ ডিসেম্বরে।
আয়োজকরা জানান, চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ ও মেলাস্থলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের জন্যই আনুষ্ঠাননিকতা শুরুতে দেরি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মধ্যদিয়ে নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়াম গোল চত্বরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার বিজয় শিখা প্রজ্বলন করা হয়। একইসঙ্গে সূচিত হয়েছে জিমনেশিয়াম চত্বরে বিজয় মঞ্চের চারদিনব্যাপী কার্যক্রম ও অনুষ্ঠানমালা।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে অপারেশন জ্যাকপট অভিযানের কমান্ডার কমোডর এ ডব্লিউ চৌধুরী বীরউত্তম ও বীরবিক্রম মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের হাতে বিজয় শিখা প্রজ্বলনের অগ্নি শলাকা তুলে দেন। বিজয় শিখা স্তম্ভ চূড়ায় ছুঁয়ে দিয়ে প্রজ্বলিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার বিজয় শিখা।
বিজয় মঞ্চে বক্তব্যের সময় কমোডর এ ডব্লিউ চৌধুরী চট্টগ্রামের মানুষের প্রসংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার মা চট্টগ্রামের। এ অঞ্চলের মানুষের বিশাল হৃদয় রয়েছে। তারা এ হৃদয় দিয়ে যে কোনো কিছু হাসিল করতে পারবেন।’ এ সময় তিনি অপারেশন জ্যাকপটের ইতিহাস তুলে ধরেন। একইসঙ্গে বীর উত্তম ও বীর বিক্রম উপাধির জন্য বঙ্গবন্ধুরকে স্মরণ করেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিজয় শিখা প্রজ্বলনের অগ্নিশলাকা মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার প্রতিষ্ঠাতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছোট ছেলে বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ইনামুল হক দানুর সন্তান কাজী রাজিশ ইমরানের হাতে হস্তান্তর করেন কমোডর এ ডব্লিউ চৌধুরী। এরপর তারা সেই বিজয় শিখা প্রজ্বলনের অগ্নি শলাকা বিজয় শিখার চূড়া স্পর্শ করা মাত্রই বিজয় শিখা জ্বলে ওঠে। এরপর অতিথিবৃন্দ একসঙ্গে বিজয় মঞ্চের সামনে জাতীয় সঙ্গীতের সূর মূর্চ্ছনায় জাতীয় ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বিজয় মঞ্চের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন।
এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমজীবী শক্তির প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এবারের বিজয় মঞ্চ নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিজয় মঞ্চে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্দীপনামূলক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এরপর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
বিজয় মঞ্চে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের সাবেক মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলমের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুলের সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ।
অতিথিদের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দীন, উপ পুলিশ কমিশনার (সদর) মো. আবদুল ওয়ারিশ, উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা পান্টুলাল সাহা, মহিউদ্দীন রাশেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান স্কোয়াডের আহ্বায়ক বোরহানুল হাসান চেীধুরী সালেহীন।
বিএস/ডিজে