চট্টগ্রামের ‘বাহুবলী’ যাচ্ছে মালয়েশিয়ায়, ১৪ কোটি টাকার ফলন এক মৌসুমে

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে এই প্রথমবারের মত মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হচ্ছে সু্স্বাদু টমেটো— বাহুবলী। চলতি রবি মৌসুমে সীতাকুণ্ডে টমেটোর উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন— যা গত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। স্থানীয় হিসাবে এর বাজার মূল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা।

সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী গ্রামে কৃষকদের উৎপাদিত টমেটো রপ্তানির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে।
সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী গ্রামে কৃষকদের উৎপাদিত টমেটো রপ্তানির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে ৩৮০ হেক্টর জমিতে এ বছর টমেটোর চাষ হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী গ্রামে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভা, বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল, বাড়বকুণ্ড ও ভাটিয়ারী, কুমিরাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ব্লকে টমেটোর চাষ হয়েছে।

s alam president – mobile
চলতি রবি মৌসুমে সীতাকুণ্ডে টমেটোর উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন— যা গত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। স্থানীয় হিসাবে এর বাজার মূল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা।
চলতি রবি মৌসুমে সীতাকুণ্ডে টমেটোর উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন— যা গত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। স্থানীয় হিসাবে এর বাজার মূল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা।

রবি মৌসুমে নৌপথে প্রতিবছর সীতাকুণ্ডের সবজি শিমও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। তবে এই প্রথমবারের মত সীতাকুণ্ডের টমেটো চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে দেশ ছাড়িয়ে নৌপথে যাচ্ছে বিদেশের মাটিতেও।

সীতাকুণ্ড পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের নুনাছড়া গ্রামের কৃষক মো. তাহের বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১২০ শতক জমিতে বাহুবলী জাতের টমেটোর চাষ করেছি। এতে শ্রমিকসহ সব মিলিয়ে খরচ পড়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর এ পর্যন্ত পাইকারি দরে টমেটো বিক্রি করেছি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার। পরিস্থিতি ভাল থাকলে আরও ১ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।

Yakub Group

একই এলাকার কৃষক নুর মোহাম্মদও এবার টমেটো চাষ করে করে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এবার প্রথমবারের মত টমেটো বিক্রি করে অনেক লাভবান হয়েছি। আমাদের উৎপাদিত টমেটো বিদেশের মাটিতেও যাচ্ছে— এটি আমাদের জন্য অনেক গর্ব ও আনন্দের বিষয়।’

সীতাকুণ্ডের নুনাছড়া গ্রামে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, ‘এবার অন্যান্য সময় থেকে টমেটো চাষ হয়েছে অনেক বেশি।’

জানা গেছে, ওই গ্রামে অন্তত ৩০ জন কৃষক এবার টমেটোর চাষ করেছেন।

অন্যদিকে মুরাদপুর এলাকার কৃষক মো. এখলাছ বলেন, ‘এ মৌসুমে ১৮০ শতক জমিতে বাহুবলী টমেটোর চাষ করেছি। এতে খরচ পড়েছে ২ লাখ টাকা। আর এ পর্যন্ত বিক্রি করেছি দেড় লাখ টাকার টমেটো। আরো দুই লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবো বলে আমি আশাবাদী।’

একই এলাকার কৃষক ইসহাকও ৭০ শতক জমিতে টমেটোর চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করার উদ্দেশ্যে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সাত্তার এন্টারপ্রাইজ ২০ টাকা কেজি হিসেবে আমাদের ক্ষেত থেকে টমেটো কিনে নিয়ে যাচ্ছে।’

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সাত্তার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘আমি অনার্সে পড়াশোনা করছি। আমরা ৪ ভাই। তার মধ্যে বড় ভাই মোস্তফাসহ গত ৫ বছর ধরে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে মৌসুমে বিভিন্ন সবজি কিনে নৌপথে মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করছি।আমার বড় ভাই মালয়েশিয়াতেই বসবাস করছেন। ওখানে তার ছয়টি দোকান রয়েছে এবং শ্রমিক রয়েছে ৮০ জন। আমি দেশ থেকে বিভিন্ন সবজি নৌপথে মালয়েশিয়াতে রপ্তানি করেছি। আর বড় ভাই ওখান থেকে সবজিগুলো রিসিভ করে তার দোকানে নিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি বিক্রি করে দেন বিভিন্ন পাইকারের মাঝে।’

সাত্তার এন্টারপ্রাইজের এই স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘এবার আমি সীতাকুণ্ড থেকে রপ্তানির উদ্দেশ্যে কৃষকদের ক্ষেত থেকে ২০ টাকা কেজি হিসেবে ১৩ টন টমেটো কিনেছি। টমেটোগুলো চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে নৌপথে মালয়েশিয়াতে রপ্তানি করা হবে। শুধু তাই নয় গত মাসে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ৩ হাজার ১৬৪ টন আলু সংগ্রহ করে রপ্তানি করেছি।’

সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘এই প্রথম সীতাকুণ্ড উপজেলা থেকে ১৩ টন টমেটো যাচ্ছে মালয়েশিয়ায়। এটি কিন্তু কম কথা নয়। চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৯০০ কৃষক ৩৮০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ করেছেন। মোট টমেটোর উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন।সে হিসেবে ১৪ কোটি টাকার টমেটো উৎপাদন হয়েছে এবার।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm