চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীকে মারধর করেছেন সমন্বয়ক প্রান্ত বড়ুয়া। এসময় দু’পক্ষকে থামাতে গিয়ে মারধরের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক। এদের মধ্যে একজন নারী ছিলেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রান্ত বড়ুয়া শিক্ষকদের মারধরের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
হামলার শিকার এক শিক্ষক হলেন সিএসই বিভাগের মিনহাজ। তবে অপর দু’জনের পরিচয় মেলেনি।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারী গলি ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ফেসবুকের পোস্ট কমেন্ট করাকে কেন্দ্র করে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ তানভীর মারধর করেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক প্রান্ত বড়ুয়া। প্রান্ত বড়ুয়া ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ অন্যদের পদত্যাগের বিষয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকালে প্রান্ত বড়ুয়া নামে একজন সমন্বয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই শিক্ষার্থী তানভীরকে ফটকের সামনে মারধর করেন। ওই সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তানভীরকে ছাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নিয়ে গেলে সেখানে আবারও তার ওপর হামলার চেষ্টা করেন প্রান্ত বড়ুয়া। সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীর ওপর দফায় দফায় হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীরা এক হয়ে আইন বিভাগ ঘেরাও করে।
দফায় দফায় হামলার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মীমাংসা বৈঠকের সময় সমন্বয়ক হিসেবে পরিচিত ফরহাদ হোসেন পাটোয়ারী নামে বিবিএর এক শিক্ষার্থী সিএসসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিনহাজ হোসাইন গায়ে হাত তোলেন। ওই শিক্ষককে বাঁচাতে গিয়ে আরও কয়েকজন শিক্ষক হামলার শিকার হন। এ হামলা থেকে বাদ যায়নি নারী শিক্ষিকাও।
শিক্ষক হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে আবারও উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে পুলিশ যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, ফ্যাকাল্টির চেয়ারম্যানসহ অন্যরা উভয়পক্ষকে নিয়ে ব্যাপারটির সমাধান করেন।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রান্ত বড়ুয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ছাত্রলীগকর্মী তানভীর ফেসবুকে পোস্ট ও কমেন্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি খারাপ করছে। তারা প্রতিনিয়ত তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে, কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে একটা থাপ্পড় পড়ে যায়। এটা নিয়ে তাদের বিভাগের বাকি শিক্ষার্থীরা এসে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। দু’পক্ষে মুখোমুখি অবস্থানে উত্তেজনার সৃষ্টি বিশ্ববিদ্যালয়ের।’
শিক্ষকরা পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইলে ওদের গায়ে হাত হাত উঠে যায়। বিশেষ করে ম্যামদের গায়ে হাত ওঠা খুবই কষ্টদায়ক। পরে পুলিশ ও শিক্ষকের সমন্বয়ের বিষয়টি মিমাংসা করা হয়েছে বলে জানান প্রান্ত বড়ুয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে টাকা-পয়সা নিয়ে কোনো চাপা দ্বন্দ্ব আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের এগুলো নিয়ে অনেকেই কথা বলছে। কিন্তু কেউ তো প্রমাণ দিতে পারছে না। প্রমাণ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করা তো ঠিক না।’
মারধরে আহত মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগ নিয়ে একটা ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম আমি। আমি কিন্তু ভিসি স্যারের পক্ষেও বলিনি, বিপক্ষেও কিছু বলিনি। এটা নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভাই আমাকে মারধর করে রক্ত বের করেছে। আমি এখন মেডিকেল যাচ্ছি চিকিৎসা নিতে।’
আপনি ছাত্রলীগ করেন কিনা, জানতে চাইলে তানভীর বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগ করি না। কখনও করিনি। তবে আমার কয়েকজন আত্মীয়স্বজন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তাদের সঙ্গে আমার ছবি আছে। সেটিকে ইস্যু বানিয়ে তারা আমাকে ছাত্রলীগ সাজাতে চাইছে।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’পক্ষ মারামারি বিষয়টি শিকার করলেন ‘তেমন কিছু হয়নি’ বলে এড়িয়ে যান কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীকে মারধরের জের ধরে বাকি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। এখন শিক্ষকেরা বসে সমাধান করছেন। যিনি মারধর করেছেন, তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।’
আরএ/ডিজে