চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় পানির যুদ্ধে ৩ লাখ বাসিন্দা, ওয়াসা নির্বিকার
একটুকু বিশুদ্ধ পানির জন্য অশেষ কষ্ট
চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গার বিজয়নগর এলাকায় নেই কোনো পুকুর ও জলাশয়। নেই পানি ফিল্টার করার ব্যবস্থাও। নগরীর শেষ প্রান্তে হওয়ায় এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে নেই ওয়াসার পানি। এলাকার অধিকাংশ সাধারণ নলকূপের পানিতে লবণাক্ততা থাকায় খাবার পানির সংকট। সিটি কর্পোরেশন থেকে বসানো একটি গভীর নলকূপসহ বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে পাওয়া তিনটি গভীর নলকূপের মাধ্যমে কোনোভাবে খাবার পানির সংকট মেটাচ্ছেন স্থানীয়রা। শুধু বিজয়নগরে বসবাস করা প্রায় দুই হাজার পরিবারের জন্য এই পানি পর্যাপ্ত নয়। প্রতিদিন দীর্ঘ লাইন দাঁড়িয়ে থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি।
শুধু বিজয়নগর এলাকাই নয়, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার ৪১ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ ওয়াসার পানি পায়নি কখনোই। বছরের পর বছর ধরে বিশুদ্ধ পানির হাহাকারে ভুগছে উত্তর-দক্ষিণ পতেঙ্গা এলাকার তিন লাখ বাসিন্দা। ওয়াসা কর্তৃপক্ষেরও এ নিয়ে নেই মাথাব্যথা। সম্প্রতি পতেঙ্গা নেভাল পর্যন্ত ওয়াসার পানি লাইন গেলেও বিশাল ওই এলাকাটি এখনও পানি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে।
কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগর সাগর ঘেঁষে পতেঙ্গা এলাকার অবস্থান। এখানে অধিকাংশ জায়গায় বসানো নলকূপের পানি লবণমিশ্রিত। এসব পানি পান করা যায় না। এর মধ্যে কিছু সিন্ডিকেট আবার অবৈধভাবে পানির ব্যবসা করতে গিয়ে যত্রতত্র বসিয়েছে গভীর নলকূপও। আর এই কারণে বিজয় নগরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সাধারণ নলকূপে এখন পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। গুটিকয়েক যেসব নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে, ওই পানিও খাবার উপযোগী নয়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছালেহ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘শহরের শেষ প্রান্তে নদী-সাগর ঘেঁষে অবস্থিত দক্ষিণ পতেঙ্গা। এখানকার অধিকাংশ এলাকায় নলকূপের পানিতে লবণাক্তের ভাব থাকায় এ পানি পান করা ও রান্না করার সম্পন্ন অনুপযোগী। দীর্ঘদিন ধরে সিটি কর্পোরেশন থেকে দেওয়া একটি গভীর নলকূপ, পাশ্ববর্তী এয়ারফোর্সসহ বেশ কয়েকটি স্থান থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে অনেক কষ্টে প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন স্থানীয়রা।’
তিনি বলেন, ‘শহরের অধিকাংশ জায়গায় রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি লাইন। বেশ কয়েক বছর আগে স্থানীয় এমপির সুপারিশসহ চিঠি দেওয়া হয়েছে সাবেক সিটি কর্পোরেশন মেয়র ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে। অথচ এখনও তার কোনো সুহারা মেলেনি। সম্প্রতি এই এলাকা দিয়ে গেছে ওয়াসার পাইপলাইন। কিন্তু কখন ওয়াসার পানি এলাকায় ঢুকবে— তার কোনো নিশ্চয়তাও নেই।’
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল বারেক বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম-১১ আসনের এমপি মহোদয় ওয়াসার এমডিকে বলার পর সম্প্রতি স্টিলমিল বাজার মেইন রোড দিয়ে পানির লাইন গেছে। কিন্তু গলির ভেতরে যায়নি পাইপলাইন। যেখানে পানির লাইন গেছে, মিটার থাকার পরও বিল দিয়ে পাচ্ছে না পানি। ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকায় ওয়াসার লাইন নেই। সুপেয় পানির অভাবে অতি কষ্টে দিন পার করছেন স্থানীয়রা।’
অভিযোগ করে এই কাউন্সিলর আরও বলেন, ‘স্থানীয়রা বিল দিয়েও পানি পাচ্ছে না। অথচ কিছু সিন্ডিকেট ওয়াসার পানি চুরি করে বিক্রি করছে দেদারসে। সেইদিকে খেয়াল নেই কর্তৃপক্ষের।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসা মড-১ জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রউফ বলেন, ‘পতেঙ্গা নেভাল এলাকায় সম্প্রতি ওয়াসার পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়েছে। এখনও লোকাল এলাকায় পানির পাইপলাইনের সংযোগ কাজসহ আরও বেশ কয়েকটি সংযোগের ধাপের কাজ বাকি রয়েছে। এসব ঠিক করতে আরও ৫ থেকে ৬ মাস সময় লাগতে পারে।’
সিপি