চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুরে বারকোড ফুড জাংশনে ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। চট্টগ্রামের এই ‘নামি’ রেস্টুরেন্টের রান্নাঘরের এমন করুণ দশা দেখে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অনেকে আবার অভিযুক্ত রেস্টুরেন্টটিকে আরও বেশি জরিমানা করার দাবি তুলেছেন।
বুধবার (৩০ আগস্ট) বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বি এম মশিউর রহমান বারকোড ফুড জাংশনে ওই অভিযান পরিচালনা করেন।
সেই অভিযান পরিচালনাকালে দেখা গেছে, ফ্রিজের ভেতরে রাখা হয়েছে পচা মাংস। পুরো রান্নাঘরই নোংরা। রান্না করা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। আর এমনকি রান্নায় ব্যবহার করা হচ্ছিল যে ঘি, সেটার অনুমোদনই নেই। শুধু তাই নয়, কাঁচা ও রান্না করা মাংস সংরক্ষণ করা হচ্ছিল একসঙ্গে।
এমন সব দৃশ্য দেখার পর বারকোড ফুড জাংশনকে চার লাখ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পাঠক লিখেছেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশে এই ধরনের নোংরা বা পচা খাবারের দোকান নাই। যদি পাওয়া যায় সাথে সাথে সিলগালা করা হয়। লাইসেন্স বাতিল। এমনকি জরিমানা দিতে হয়। আমাদের দেশেও এই আইন প্রয়োগ করা দরকার।’
এর আগে গত ১৮ এপ্রিল বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রোপলিটন কার্যালয় নগরীর ২ নম্বর গেইট এলাকায় ‘বারকোড রেস্তোরাঁ’য় মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ সময় বারকোড রেস্তোরাঁয় দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন বিশেষত ফুটপাতের ওপর-ফুটপাতের পাশেই খোলা অবস্থায় ইফতার সামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। খাদ্যকর্মীদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি সেখানে অনুসরণ করা হচ্ছিল না।
এমনকি জুস তৈরিতে ব্যবহৃত স্বাস্থ্যসম্মত ‘আইস’-এর ব্যবহার সম্পর্কে তথ্য দিতে না পারেনি বারকোড রেস্তোরাঁ। আমদানি করা হয়েছে— এমন দাবি করা হলেও খাদ্যপণ্যে (চিজ) আমদানিকারকের সিলই ছিল না।
বারকোড ফুড জাংশনের মালিক মনজুরুল হক। তার মালিকানাধীন অন্য রেস্টুরেন্টের মধ্যে রয়েছে— বারকোড ক্যাফে, বারগুইচ টাউন, ওমেট্রা, মেজ্জান হাইলে আইয়্যুন, বীর চট্টলা, তেহেরিওয়ালা, বারকোড জিইসি, বারকোড মেরিনা ক্যাপেলা, বারকোডিয়ান। মনজুরুল প্লাস্টিক পণ্য নির্মাতা এন মোহাম্মদ গ্রুপেরও অন্যতম পরিচালক।
বারকোড গ্রুপের কর্ণধার মনজুরুল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অভিযানটি বারকোড ফুড জাংশনে নয়, এটা হয়েছে মূলত ‘মেজ্জান হাইলে আইয়ুন’-এর কিচেনে— যেখানে মেজবানের মাংস রান্না করা হয়ে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘তাপমাত্রা ঠিক রাখতে গিয়ে মেজবানি রান্নার কিচেনের ফ্লোরে আমরা টাইলস বসাতে পারি না। সেখানে লাকড়িসহ মেজবানি রান্নার বিভিন্ন উপকরণ রাখতে হয়। এজন্য একটু অপরিচ্ছন্ন দেখায়।’
তবে তিনি ফ্রিজের ভেতরে পচা মাংস রাখার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘ভোররাতে জবাই করা গরুর মাংস কিভাবে পচা হতে পারে?’
মনজুরুল হক বলেন, ‘আমাদের কিচেনে ব্যবহার করা ঘি আমরা নিজেরাই বানাই, বাইরে সেটা বিক্রি করি না। এ কারণে আমরা অনুমোদন নেওয়ার কথা ভাবিনি। অন্যদিকে পোড়া তেলও আমরা ব্যবহার করি না। এটা খাদ্য অধিদফতরের পরামর্শমতো তাদের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিই।’
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রোপলিটন নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারহান ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অভিযান চলাকালে যারা দোষ করে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তারা বারকোড ফুড জাংশনেরই কর্মকর্তা। এখন তারা যদি বলেন, অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মী—তাহলে সেটা তাদের বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘ওই রেস্টুরেন্টটিকে কয়েক মাস আগেও পরিবেশ-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তারা নিজেদের সংশোধন করে নেয়নি। বুধবারের অভিযানে গিয়েও সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নিম্নমানের কাঁচামাল, পচা মাংসসহ বিভিন্ন বিষয় দেখা গেছে। এসব অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
সিপি