চট্টগ্রামের দুই জুট মিল যাচ্ছে ইউনিটেক্স ও সাদ মুসা গ্রুপের হাতে, সারা দেশে আরও তিন

ইজারা নিতে মানতে হবে ২০ শর্ত

চট্টগ্রামের দুই জুট মিলসহ দেশের মোট পাঁচটি জুট মিল যাচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে। এর মধ্যে একটি যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান। দরপত্র যাচাই শেষে ওই ৫টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫টি জুট মিল ইজারা দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। আগামী সপ্তাহে, ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হবে।

পাঁচ জুট মিলের মধ্যে চট্টগ্রামের কেএফডি জুট মিলস পাচ্ছে ইউনিটেক্স কম্পোজিট এবং হাফিজ জুট মিলস পাচ্ছে সাদ মুসা গ্রুপ। রাঙ্গুনিয়ায় অবস্থিত কেএফডি জুট মিলসের অন্তর্ভুক্ত ইউনিট রয়েছে তিনটি। সেগুলো হচ্ছে— কর্ণফুলী জুট মিলস, কর্ণফুলী কার্পেট কারখানা এবং ডাইভারসিফাইড ডেকোরেটিভ ফেব্রিক্স। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিলস পাচ্ছে বিদেশি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যের জুট রিপাবলিক। এছাড়া খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলস ইজারা পাচ্ছে মিমো জুট লিমিটেড এবং নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিলস পাচ্ছে বে ফুটওয়্যার লিমিটেড। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান মর্টগেজের টাকা জমা দিয়েছে।

চট্টগ্রামের দুই জুট মিল যাচ্ছে ইউনিটেক্স ও সাদ মুসা গ্রুপের হাতে, সারা দেশে আরও তিন 1

চট্টগ্রাম জোনে আরও তিনটি জুট মিল ইজারা দেওয়া হবে। সেগুলো হচ্ছে— এম এম জুট মিলস, সীতাকুণ্ডের আর আর জুট মিলস এবং কুমিরার গুল আহমেদ জুট মিলস।

২০২০ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীন ২৬টি জুট মিল বন্ধ করে দেয় সরকার। বছরের পর বছর লোকসান না টানতেই ইজারা অথবা ভাড়ায় মিলগুলো পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর এই জুট মিলগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে ২০২১ সালের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করার পর দেশি-বিদেশি ৫৯টি প্রতিষ্ঠান তাতে সাড়া দেয়। সেই দরপত্র যাচাই-বাছাই শেষে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঁচটি জুট মিল ইজারা দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।

তবে এসব জুট মিল পরিচালনার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোট ২০টি শর্ত মানতে হবে। ইজারার টার্মস অব রেফারেন্সে (টিওআর) এসব শর্ত দিয়েছে বস্ত্র মন্ত্রণালয়। তাতে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে—

১. প্রতিটি মিল প্রথমবার ৫ থেকে ২০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হবে।
২. লিজ (ইজারা) গ্রহণকারী লিজের সম্পত্তি সাব-লিজ, মর্টগেজ দিতে পারবে না। একইসঙ্গে কোনও ব্যক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে ঋণ নিতে পারবে না।
৩. চুক্তির লঙ্ঘন হলে সরকার তিন মাসের নোটিশে লিজ বাতিল করতে পারবে।
৪. লিজের মেয়াদে লিজ গ্রহণকারীর নাম বদলানো যাবে না।
৫. মিল হস্তান্তরের আগে দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির বিস্তারিত হিসাব করা হবে।
৬. সরকার ও উদ্যোক্তা উভয়ে ছয় মাসের নোটিশে স্বাভাবিকভাবেই এই লিজ চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ নিতে পারবে।
৭. বছর শেষে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অর্থাৎ জমি, স্থাপনা ও মেশিনারিজের রিভিউ হিসাব দিতে হবে। যাতে সরকারি সম্পত্তি লিজগ্রহণকারী কৌশলে সরাতে না পারে।
৮. লিজের সময় কোনও মানবীয় ক্ষতি হলে লিজ গ্রহণকারীকে দায় নিতে হবে।
৯. উদ্যোক্তা নিজ দায়িত্বে যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করবে। কোনও কারণে পুরনো মেশিনারিজের জায়গায় নতুন মেশিনারি কেনা হলে পুরনো যন্ত্রপাতি সরকারকে ফেরত দিতে হবে।

১০. কোনও স্থাপনার নকশা পরিবর্তন করতে হলে অনুমোদন নিতে হবে।
১১. লিজের মেয়াদ শেষে হিসাব অনুযায়ী সম্পত্তি সরকারের কাছে বুঝিয়ে দিতে হবে।
১২. জুট মিলের পুরো জায়গা লিজগ্রহিতা পাবে না। শুধু কারখানা ও কারখানা সংলগ্ন আঙ্গিনা লিজের আওতাধীন থাকবে।
১৩. লিজ সম্পত্তিতে পাটপণ্য ছাড়া অন্য কোনও পণ্য উৎপাদন করা যাবে না।
১৪. অন্য কোনও পণ্যের গুদাম হিসাবেও ব্যবহার করা যাবে না।
১৫. লিজের ২৪ মাসের ভাড়া জামানত হিসাবে সরকারের কাছে লিজগ্রহণকারীকে নগদ জমা দিতে হবে।
১৬. লিজের মেয়াদ শেষে সন্তোষজনক হস্তান্তর শেষে টাকা বিনাসুদে ফেরত দেওয়া হবে।
১৭. যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া লিজের জায়গায় কোনও গাছ কাটা বা বিক্রি করা যাবে না।
১৮. চুক্তিতে উল্লেখ করা সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে না পারলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লিজ বাতিল হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাকে তিন মাসের ভাড়া জরিমানা হিসাবে দিতে হবে।

১৯. লিজ গ্রহণকারী কোনোভাবেই জুট মিলের কোনও সম্পত্তি হস্তান্তর বা বিক্রি করতে পারবে না।
২০. প্রথমবারের লিজের সময় লিজ গ্রহণকারীর কার্যক্রম সন্তোষজনক হলে পরে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে লিজ গ্রহণকারীকে লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm