চট্টগ্রামের দুই ইপিজেড থেকে পাচার হচ্ছে কাপড়ের রোল, কুরিয়ারে যায় ঢাকায়

চট্টগ্রামের সিইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডে দুই শতাধিক পোশাক কারখানার বেশিরভাগেই ঝুট কাপড়ের আড়ালে বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে ভালো কাপড়ের রোল, পুরাতন মেশিনারি ও অন্যান্য মালামাল। এই দুই ইপিজেডের প্রায় সব কারখানায় বিদেশ থেকে অর্ডার আসা পোশাক তৈরি করার পরও উদ্বৃত্ত রয়ে যায় কাপড়ের বিপুলসংখ্যক অংশবিশেষ বা ঝুট। এসব ঝুট কাপড় নষ্ট করার কথা থাকলেও সেটা করা হয় না অনেক পোশাক কারখানায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ—বেপজা চট্টগ্রামের আওতায় সিইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডের এইসব পোশাক কারখানায় সুযোগ বুঝে এসব কাপড়ের সাথে ভালো কাপড়ের রোল, পুরাতন মেশিনারি ও অন্যান্য মালামাল বের করে ঝুটের আড়ালে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে সুকৌশলে। সেখান থেকে গোপনে বের করা এসব মালামাল কিনে নেয় একশ্রেণীর ঝুট ব্যবসায়ী। বাইরে বের করে নিয়ে যাওয়া এসব পণ্য বিক্রি করা হয় ঢাকায়। আর ইপিজেড থেকে ঢাকায় পাচার করতে সহজ পরিবহন পথ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বেছে নিয়েছেন চট্টগ্রামের আনাচে-কানাচে অবস্থিত নামসর্বস্ব কুরিয়ার সার্ভিস।

অভিযোগ রয়েছে, সিইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডের প্রধান চেকিং গেইটে গোপন আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ইপিজেডের ভেতর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে কাপড়ের রোলসহ কারখানার পুরাতন মেশিনারি ও যন্ত্রপাতি। দুই ইপিজেডের কর্মরত ঝুট ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট সরাসরি কারখানা থেকে কিনে নিচ্ছে বন্ড করা এসব কাপড়ের রোল ও মালামাল।

চট্টগ্রামের দুই ইপিজেড থেকে পাচার হচ্ছে কাপড়ের রোল, কুরিয়ারে যায় ঢাকায় 1

জানা যায়, চলতি বছরের ৩ অক্টোবর চট্টগ্রামের নিমতলা বিশ্বরোড থেকে তল্লাশি চালিয়ে দুই ট্রাক (সিলেট-ট ৩৪৯০ এবং চট্টমেট্রো-ট-০২-০৮৪৮) কাপড় ও মেশিনারিজ জব্দ করে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের একটি দল। পরে যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে আটক করা পণ্যগুলো কর্ণফুলী ইপিজেডের পার্ক (বাংলাদেশ) কোম্পানি লিমিটেডের।

ওইদিন ওয়েস্টেজ পারমিট নম্বর জিএইচ ২৮০৯২১০০৬ এবং জিএইচ ২৮০৯২১০০৬ দুই ট্রাকের পণ্যের সঙ্গে উক্ত ওয়েস্টেজের পারমিটের দেওয়া নম্বরের কোনো মিল পায়নি কাস্টমস বন্ড কর্তৃপক্ষ। আটক করা এসব পণ্যের মূল্য ২৪ লাখ ৬ হাজার ৪৭৩ দশমিক ৭৫ টাকা। এই পণ্যগুলো বিক্রির উদ্দেশে পাচার করেছিল চট্টগ্রাম নগরীর কলসি দিঘীরপাড় এলাকায় অবস্থিত মের্সাস ফাইন ফুড এজেন্সি নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে চট্টগ্রামের সরকারি সিটি কলেজ এলাকার মেট্রো কুরিয়ার সার্ভিস ও পার্সেল সার্ভিস দিয়ে পরিবহনকালে দুই গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-উ-১২২৬৬২) এবং (ঢাকা মেট্রো-ম-০৩১৩৬২) পণ্য জব্দ করে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের একটি দল। একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে জব্দ করা পণ্যের মধ্যে তিন কার্টন পোশাক কারখানার ইলাস্টিক পাওয়া যায়।

চট্টগ্রামের দুই ইপিজেড থেকে পাচার হচ্ছে কাপড়ের রোল, কুরিয়ারে যায় ঢাকায় 2

গত ২ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর নিমতলা বিশ্বরোড এলাকায় এআর এক্সপ্রেস নামে একটি কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি (চট্টমেট্রো-ট-১১-৮৯৫৬) থেকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে ১৮২ কার্টনে রেডিমেট গার্মেন্টস পণ্যের চালান আটক করে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। আটককৃত পণ্যের বাজারমূল্য ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬৮ দশমিক ৮৮ টাকা। এসব পণ্য ঢাকায় পাচার হচ্ছিল। পণ্যগুলো ছিল মের্সাস ভিজুয়্যাল নিটওয়্যার লিমিটেডের।

চট্টগ্রাম নগরীর সিইপিজেডে বেপজার আওতায় রয়েছে ১৪২টি পোশাক কারখানা। সেখানে কাজ করছেন প্রায় দেড় লাখ পোশাক শ্রমিক। একই সঙ্গে কর্ণফুলী ইপিজেডের আওতায় রয়েছে ৫০টি পোশাক কারখানা। সেখানে প্রায় ৭২ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন।

বেপজার (কর্ণফুলী ইপিজেড) জেনারেল ম্যানেজার মো. এনামুল হক বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে অবৈধ মালামাল বের হওয়ার খবর পেয়ে আমরাও মাঝে মাঝে আটক করে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আমাদের নজরদারি প্রতিদিন হচ্ছে। এতো চেকিং, গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন থাকার পরও মাঝে মাঝে ঝুটের ভেতর দিয়ে চলে যাচ্ছে। আমরা কঠোরভাবে বলেছি চেকিং পোস্টে। তারপরও আবারও নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হবে।’

বেপজার (সিইপিজেড) জেনারেল ম্যানেজার মসিউদ্দিন বিন মেসবাহ বলেন, ‘সিইপিজেডের প্রধান চেকিং গেইটে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন থাকে। সেখানে এ ধরনের কাজ হওয়ার কথা না। এমনকি কাস্টমসের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও থাকেন চেকিং পোস্টে। সম্প্রতি ইপিজেডের যেসব পণ্য আটক হয়েছে সেগুলো তো বন্দর থেকে বের হওয়া মালামালও হতে পারে। তারপরও এখন থেকে এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হবে।’

কাস্টমস্ বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামের কমিশনার একেএম মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে আমদানি করা কাপড়ের রোলের চালান আটক করি। একই সঙ্গে অবৈধ এসব পণ্য পরিবহনের দায়ে জরিমানাও আদায় করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা খবর পেলেই অভিযান পরিচালনা করছি। তবে নানা কারণে এ ধরনের অভিযান আমরা এটা সরাসরি করতে পারি না। তারপরও এ বিষয়ে তৎপরতা আরও বাড়ানো হবে।’

কেএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!