চট্টগ্রামের ত্রাস জুয়েলকে সিলেট থেকে ধরে আনছে পুলিশ

রেয়াজউদ্দীন বাজারে যুবক খুনের পর পালায় বাসে করে

যুবক খুনের পর তিন দিন পালিয়ে থেকে সিলেট থেকে সহযোগীসহ ধরা পড়েছেন চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দীন বাজার ও স্টেশন রোড এলাকার ত্রাস জুয়েল। তিন দিন আগে রেয়াজউদ্দীন বাজারের ভেতরে এক যুবককে খুন করে ওই রাতেই চট্টগ্রাম ছেড়ে যায় জুয়েল ও তার কিশোরগ্যাংয়ের সহযোগীরা।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেলে সিলেট শহর থেকে জুয়েলকে ধরতে সক্ষম হয় চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানা পুলিশের একটি টিম। এ সময় খুনে অভিযুক্ত সাগর নামে তার আরও এক সহযোগী ধরা পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

জানা গেছে, রাতেই তাদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হবে। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের পক্ষ থেকে (সিএমপি) শুক্রবার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে জুয়েলকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে তার বোন মিনুর নেতৃত্বে অন্তত ২০ জন ভাসমান নারী কোতোয়ালী থানার সামনে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে। মিনু নিজেও মাদকব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।

এর আগে রোববার (৭ জুলাই) রাতে জুয়েলের নেতৃত্বাধীন কিশোরগ্যাংয়ের একটি দল চট্টগ্রাম নগরীর অলংকার মোড়ের বাসস্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায় সিলেটের উদ্দেশ্যে।

রোববার (৭ জুলাই) রাতে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দীন বাজারের পাখি গলির বন্দর বিতানে সাহেদ হোসেন মনা নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। মনার স্বজনরা দাবি করেছেন, ‘চট্টগ্রামের সাবেক এক তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতার মদদে সন্ত্রাসীরা মনাকে হত্যা করেছে।’ প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, খুনের খুনের ঘটনার পরপর রাতেই ২০ থেকে ৩০ জনের একদল কিশোর রিয়াজউদ্দীন বাজার ও রেলস্টেশন এলাকায় অবস্থান নিয়ে এক যুবলীগ নেতার সঙ্গে খুনে অভিযুক্ত জুয়েলের ছবিসম্বলিত সব ব্যানার ও পোস্টার দ্রুতগতিতে সরিয়ে নেয় ও ছিঁড়ে ফেলে।

পরে এই খুনের ঘটনায় মনার বাবা শাহ আলম বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ফরহাদ ও সজীব নামে দুজনকে ওই রাতেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলার আসামিরা হলেন— কোতোয়ালী এলাকার ৭ নম্বর বাস পার্কিং এলাকার ভাসমান বাসিন্দা জুয়েল (৩২) ও রহিম (২৬), নুপুর মার্কেটের জুয়েল প্রকাশ মুরগী জুয়েল (৩২), আলকরণ ৩ নম্বর গলির মো. সজীব (২৪), পটিয়ার কচুয়াইয়ের বাসিন্দা শেখ ফরহাদ (২২), গোয়ালপাড়া তুলাতলী বস্তির মো. শুক্কুর (৩৫), পূর্ব মাদারবাড়ি কামাল গেইটের হানিফ ও মাছ হানিফ (৩৫), উত্তর নালাপাড়া বাচুনীর মার কলোনির সবুজ (৩২), রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ভাসমান বাসিন্দা সাগর (২৮) ও শাটল (২০), কদমতলীর বশির ওরফে টিউমার বশির (৩০), স্টেশন কলোনির ইকবাল (৩১) ও শাকিল (২০)।

এদের মধ্যে জুয়েল (৩২) ও সাগর (২৮) ধরা পড়ার খবর নিশ্চিত করা গেছে।

জানা গেছে, রোববার (৭ জুলাই) রাতে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দীন বাজারের পাখি গলির বন্দর বিতানে যান সাহেদ হোসেন মনা। এ সময় তার সঙ্গে ছিল কিশোরগ্যাংয়ের ১০ থেকে ১৫ জনের একটি দল। খবর পেয়ে জুয়েল ও তার অনুসারী কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যরা আলকরণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের পেছনের গলি, পাখি গলি ও জলসা গলি— এই তিন দিক থেকে তিনটি দলে ভাগ হয়ে বন্দর বিতান ঘিরে অবস্থান নেয়। এর একপর্যায়ে পাখির খাবারের একটি দোকানে ঢুকিয়ে ভেতর থেকে শাটার বন্ধ করে সাহেদ হোসেন মনাকে অন্তত ১০ জন এলোপাতাড়ি পেটায়। পরে তার বাম পায়ের গোড়ালির রগ কেটে দেওয়া হয়। বুক, পেট ও হাতেও করা হয় ছুরিকাঘাত। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সেখানেই মারা যান মনা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কালো বোরকা পরে এসে জুয়েলই মনার পেটে ছুরির ফলা ঢুকিয়ে দেন। মনার পরিবার অবশ্য ছুরিকাঘাতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জুয়েল, সাগর, বশির ও শাকিলও ছিল বলে জানিয়েছে। মনার স্বজনরা দাবি করেছেন, ‘এক যুবলীগ নেতার মদদে সন্ত্রাসীরা মনাকে হত্যা করেছে।’

রোববার (৭ জুলাই) রাতে সাহেদ হোসেন মনাকে খুনের পরপর রাতেই চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ছেড়ে যাওয়া ঢাকা মেইল ট্রেনে সাতজনের একটি দল চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়। জুয়েলের নেতৃত্বাধীন কিশোরগ্যাংয়ের আরেকটি দল চট্টগ্রাম নগরীর অলংকার মোড়ের বাসস্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ছেড়ে যায় সিলেটের উদ্দেশ্যে। এর আগে ঘটনার মূল হোতা জুয়েলসহ তার গ্রুপের নেতৃস্থানীয় সদস্যদের ফেসবুক আইডি একযোগে ডিঅ্যাক্টিভেট করে ফেলা হয়।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm