চট্টগ্রামের তিন এলাকায় পাহাড় কাটছে বড় চক্র, হঠাৎ অভিযানে ঢাকার টিম
কাউন্সিলর জসিমসহ সিডিএর প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ
চট্টগ্রাম নগরীর ভেতরে আওয়ামী লীগের নেতারা বছরের পর বছর ধরে কেটে যাচ্ছিলেন পাহাড়। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এক প্রকৌশলী ছাড়াও সাবেক এক কাউন্সিলর।
চট্টগ্রামে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সব জানলেও দেখেও না দেখার ভান করে আসছিলেন। শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নির্দেশে অভিযানে নামলেন কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর আকবরশাহ এলাকা, পাহাড়তলী ও খুলশী এলাকায় আলাদা আলাদাভাবে অভিযান পরিচালনা করে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ মন্ত্রণালয়ের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি টিম।
অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানতে পারেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম জসিমের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ খুলশী এলাকায় পাহাড় কাটছে। এর আগে জসিমসহ এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অন্যদিকে আকবর শাহ থানার উত্তর পাহাড়তলীর লেকসিটি এলাকায় বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানমের অভিযানে ১৭৯নং দাগে পাহাড় কাটার আলামত পাওয়ায় জমির মালিক সিডিএ প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইলিয়াসের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নিয়মিত মামলার নির্দেশ দিয়েছেন। একই এলাকার ১৭৮নং দাগে একই অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর জমির মালিকের বিরুদ্ধে শুনানীর নোটিশ দিয়েছে বলে জানান। এসময় এ জমির পাশের বাড়ির বাসিন্দাদের স্থাপনা সরিয়ে ফেলে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিন অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম নগরীর আকবর শাহ থানা ও খুলশী থানার আওতাধীন বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ও টিলা কাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে হারবাতলী মা আমেনা মসজিদের পেছনে ১১৭নং দাগে টিনের সীমানা দিয়ে পাহাড় কাটার আলামত পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরকে প্লট নম্বর ও মালিকের নাম জেনে নোটিশ দেওয়াসহ পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযানে সবজি চাষ করতে পাহাড় কাটা, বসতি গড়তে টিনের ঘেরাও দিয়ে পাহাড় কাটা, অবৈধ দখল নিয়ে পাহাড় কাটাসহ নানা আলামত দেখতে পান তিনি। এসব অপরাধের বিরুদ্ধে দ্রুত আইননানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে পাহাড়তলী সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত সিদ্দিকী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। এতে হারবাতলী এলাকায় সবজি চাষের নামে পাহাড় কাটায় দু’জনকে পরিবেশ সংরক্ষন আইনে অর্থদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এদের একজনকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে তিন দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং অন্যজনকে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন। একই অভিযানে আকবর শাহ থানার ১১৬নং দাগে টিনের সীমানা দিয়ে পাহাড় কাটার প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। এ বিষয়ে এ জমির তদারককে শুনানীর নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানায় পরিবেশ অধিদপ্তর। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন নির্বাজহী ম্যাজিস্ট্রেট।
একই থানার শাপলা আবাসিক এলাকার পাশে রূপনগর ও ইমামনগরে ১৫৪ নং দাগে পাহাড় কাটার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পাহাড়ের গাছপালা নিধন করার বিষয়টি নজরে এসেছে। এ স্থানের জমির তফসিল ও মালিকের নাম জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মাইকিং করে স্থানীয় লোকজনকে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে জঙ্গল সলিমপুর মিরপুর আবাসিক এলাকায় পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মানের প্রমাণ পাওয়ায়েএ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলাসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন অভিযান পরিচালনা করা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
নগরীর খুলশী থানার ১নং রোডের ৩নং লেইন সি-ব্লক দক্ষিণ খুলশী আবাসিক এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন পরিবেশ অধিদপ্তর সদর দপ্তর ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সিনিয়র সহকারী সচিব) কাজী তামজীদ আহমেদ। এ সময় পাহাড় কাটা অবস্থায় মাইদুল ইসলাম (৩০) নামে একজনকে আটক করে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ডও দেন। এছাড়া পাহাড় কাটার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ পাহাড়ের ‘মালিক’ নুরুল আলমের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।