চট্টগ্রামের ডাক্তারের বিরুদ্ধে রাজশাহীর নার্সকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ

দুটি ঘটনাই আইসিইউর ভেতরে

আইসিইউতে নার্স যখন ডাক্তারকে একটি টিউব এগিয়ে দিচ্ছিলেন রোগীর জন্য, তখন ডাক্তার হঠাৎ তার হাতটি চেপে ধরেন। নার্স দ্রুত নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সরে যান। এ সময় পেছন থেকে গিয়ে ডাক্তার তার শরীর স্পর্শ করেন। এটিই প্রথম নয়, এর আগেও ওই একই আইসিইউতে সেই ডাক্তারের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন নার্সটি। তখনও ডাক্তার ওই নার্সকে স্পর্শ করে যৌন হেনস্তার চেষ্টা চালান।

রাজশাহীতে প্রশিক্ষণে যাওয়া চট্টগ্রামের এক ডাক্তারের বিরুদ্ধে এমন যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। আর ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে।

অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম মামুন-অর-রহমান। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানেসথেসিয়ার ওপর কোর্স করছেন এবং কাজের অংশ হিসেবে রামেক হাসপাতালে যান।

জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ডা. মামুন চট্টগ্রামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরি করছেন। সেখান থেকে ছুটি নিয়ে তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অ্যানেসথেসিয়া কোর্সের ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।

সেখানেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) প্রশিক্ষণের কাজ করার সময় তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। ২০ জানুয়ারি তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি।

রামেক হাসপাতালের নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, ১৮ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে ২৫ বছর বয়সী এক নার্সকে প্রথম যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটান ডা. মামুন। সেদিনের বিষয়টি উপেক্ষা করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখলেও পরদিন আইসিইউতে তার সঙ্গে একই ঘটনা ঘটান ওই চিকিৎসক। এরপর ভিকটিম নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের রামেক হাসপাতাল শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ করলে নেতারা সেদিনই আইসিইউতে ডা. মামুনের কাছে গিয়ে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। ডা. মামুন তখন তার আচরণের জন্য তাদের কাছে ‘স্যরি’ বলেন।

এরপর তারা সবাই হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয়ে যান। সেখানে নার্সরা ডা. মামুনের এমন আচরণের বিষয়টি হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীকে জানান। তখন ডা. মামুনও উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার অপরাধ স্বীকার করেন। এ সময় তাৎক্ষণিকভাবে ডা. মামুনকে প্রশিক্ষণ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন হাসপাতাল পরিচালক। একই সঙ্গে রামেকের উপাধ্যক্ষ ডা. হাবিবুল্লাহ সরকারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটি ঘটনা তদন্ত করছেন।

তবে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. মামুন-অর-রহমান বলেন, ‘ছোট একটা সমস্যা হয়েছে। সেটা তো অনেক রকমেই হতে পারে। আমাকে এককভাবে অপরাধী ভাবা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি আর কী বলবো? স্যারেরা তদন্ত করে দেখছেন। তাদের সঙ্গে কথা বললেই ভালো হয়।’

এদিকে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের রামেক হাসপাতাল শাখার সভাপতি শাহাদাতুন নূর লাকি বলেন, ‘এখানেই আমরা চাকরি করি। এখানেই এমন একটা ঘটনা ঘটেছে। সেই ডাক্তারের কী শাস্তি হচ্ছে সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করছি। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্তে যাবো আমরা।’

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘এটা ছোটখাটো একটা ঘটনা। খুব বড় কিছু নয়, আমি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। অভিযুক্ত চিকিৎসককে ২০ তারিখ থেকেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!