চট্টগ্রামের ছেলে সুদর্শন আবারও নাম তুললেন গিনেজ বুকে, এ নিয়ে পাঁচ

0

বিরতিহীন টানা ১৬ ঘণ্টা ৪১ মিনিট ড্রামরোল বাজিয়ে গিনেজ রেকর্ডবুকে নাম লেখালেন চট্টগ্রামের সন্তান ব্যারিস্টার সুদর্শন দাশ। এই নিয়ে গিনেজ বুকে এটি তার পঞ্চম রেকর্ড। এর আগে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বইয়ে চারবার নাম তোলেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার এই তরুণ। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিব বর্ষ ও ইংল্যান্ডের কুইন প্লাটিনাম জুবলি উপলক্ষে বিরতিহীনভাবে সর্বোচ্চ সময় ধরে ড্রাম বাজিয়ে এই রেকর্ড গড়েন তিনি।

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (১৭ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডন শহরের কর্মাশিয়াল রোডের লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমি মিলনায়তনে দীর্ঘসময় ধরে বিরতিহীনভাবে ড্রামরোল বাজানোর জন্য তার হাতে স্বীকৃতিপত্র তুলে দেন গিনেজ বুক অব ওয়াল্ড রেকর্ডসের একটি প্রতিনিধি দল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন লন্ডনের সিটি মেয়র সাদেক খান ও লন্ডন পার্লামেন্টের স্থানীয় সাংসদ।

এছাড়া সুদর্শনের কৃতিত্বের জন্য ইংল্যান্ডের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তাকে শুভেচ্ছাপত্র পাঠান।

s alam president – mobile

২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু করে পরদিন ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত টানা ১৬ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ড্রামরোল বাজানোর জন্য তাকে বিশ্বরেকর্ডের এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই দীর্ঘসময় ড্রামরোল বাজানোর ফাঁকে কোনো ধরনের বিরতি নেননি সুদর্শন। তবে ড্রাম বাজানোর সময় অনেকেই তাকে পানি বা খাবার খাইয়ে দিয়েছেন। ড্রাম বাজানোর পুরো সময় দুটি ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। সেই রেকর্ডটি যাচাই করে স্বীকৃতি দেয় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ।

রেকর্ডের বিষয়ে সুদর্শন দাশ মুঠোফোনে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত যে প্রথম কোনো বাংলাদেশি হিসেবে আমি এতগুলো রেকর্ড করতে পেরেছি। মুজিব বর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে আমি এই ঢোল বাজানোর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করি।’

দেশ থেকে অনেক দূরে থাকার কারণে অনেকে ভাবেন আমাদের কাছে দেশভক্তি নেই। কিন্তু বিষয়টা তেমন না। দেশের প্রতি টান কখনও ভুলবার নয়, কমারও নয়। তাই দেশের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন বলে জানান সুদর্শন।

Yakub Group

চট্টগ্রামের ছেলে সুদর্শন সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নে অমূল্য রঞ্জন দাশ ও বুলবুল রানী দাশের ছেলে। তবে ছোটবেলা থেকেই সুদর্শনের বেড়ে ওঠা নগরীর ফিরিঙ্গীবাজার এলাকায়। এখান থেকেই তবলায় প্রথম তালিম নেন তিনি।

মাত্র চার বছর বয়সে চট্টগ্রামের আলাউদ্দিন ললিতকলা একাডেমিতে তবলায় হাতেখড়ি হয় সুদর্শনের। ১৯৯০ সালে ফুলকুঁড়ি আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে তিনি স্বর্ণপদক পান। এর দু’বছর পর ভারতের শান্তিনিকেতনের পণ্ডিত বিজন বিহারীর কাছে যান তালিম নিতে। ১৯৯৮ সালে তাকে ‘তবলাবিশারদ’ উপাধিতে ভূষিত করে শান্তিনিকেতন।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন সুদর্শন। পেশায় তিনি আইনজীবী। লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করে বর্তমানে আইনপেশায় যুক্ত আছেন। এছাড়াও তিনি ‘তবলা অ্যান্ড ঢোল একাডেমি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলেন। এর শাখা লন্ডন ছাড়াও রয়েছে ভারত এবং বাংলাদেশে। ২০১১ সালে তার ‘লার্ন টু প্লে তবলা’ নামে একটি ক্যাসেট ডিভিডি আকারে প্রকাশ হয়।

এরপর ২০১৩ সালে বাজারে আসে ‘লার্ন টু প্লে তবলা উইথ মিউজিক’ নামে আরও একটি ডিভিড। এছাড়াও পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস, নিউহ্যাম এবং রেড ব্রিজ কাউন্সিলের অধীনে তিনি স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘মিউজিক ইন্সপেক্টর’ হিসেবে কাজ করেন।

যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোর, বিবিসি টেলিভিশন, স্কাই টিভি ও ব্রাজিলের ফিনিক্স টেলিভিশনে সুদর্শনের রয়েছে ১০০টির বেশি কনসার্ট এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্র বাজানোর অভিজ্ঞতা।

পণ্ডিত সুদর্শনের আরও ৪ রেকর্ড

পণ্ডিত সুদর্শন সর্বপ্রথম ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর ৫৭ ঘণ্টা ৫১ মিনিট তবলা বাজিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। এ সময় টানা ২৫ দিন তিনি তবলা বাজান। এই সময়ের মধ্যে শুধু প্রতিঘণ্টায় ৫ মিনিটের জন্য বিরতি নিয়েছিলেন তিনি।

এরপর ২০১৭ সালে ‘লংগেস্ট ঢোল ম্যারাথন’ এ ২৭ ঘণ্টা ঢোল বাজিয়ে দ্বিতীয় রেকর্ড গড়েন তিনি।

২০১৮ সালে ‘লংগেস্ট ইনডিভিজুয়াল ড্রামরোল’-এ টানা ১৪ ঘণ্টা ড্রাম বাজিয়ে তৃতীয়বার গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের বইয়ে নাম লেখান সুদর্শন।

২০১৯ সালে লংগেস্ট ড্রামসেট সেগমেন্টে টানা ১৪০ ঘণ্টা ড্রাম বাজান সুদর্শন। এটি ছিল তার চতুর্থ রেকর্ড।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm