চট্টগ্রামের ঘটনা নিয়ে ভারতে গিয়েই ক্ষোভ ঝাড়লেন চিন্ময় কৃষ্ণের উকিল, বিজেপি নেতার অভয়

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে সনাতনী নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পক্ষে দাঁড়ানো আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের সঙ্গে ভারতে দেখা করেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রভাবশালী নেতা অর্জুন সিং। চিকিৎসার জন্য রবীন্দ্র ঘোষ বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছেন।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ১২ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসেন রবীন্দ্র ঘোষ।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ১২ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসেন রবীন্দ্র ঘোষ।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ব্যারাকপুরে তাদের এ সাক্ষাৎ হয়। এ সময় বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার থাকার জন্য রবীন্দ্র ঘোষের প্রশংসা করেন অর্জুন সিং।

এর আগে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় স্ত্রীসহ রবীন্দ্র ঘোষ ভারতে পৌঁছান। পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুর আনন্দপুরির সি রোডের চয়নিকা অ্যাপার্টমেন্টে তিনি ছেলে রাহুল ঘোষের বাসায় আছেন। রবীন্দ্র ঘোষ বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচ নামের একটি সংগঠনের সভাপতি।

ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইর খবরে বলা হয়েছে, রবীন্দ্র ঘোষের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিজেপি নেতা অর্জুন সিং বলেন, ‘বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা যেন ন্যায়বিচার পান, সে জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সাহস দেখিয়েছেন রবীন্দ্র ঘোষ। আমরা তার এই সাহসিকতার প্রশংসা করছি। জীবননাশের হুমকি সত্ত্বেও তার নিরলস প্রচেষ্টা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে।’

অর্জুন সিং বলেন, ‘রাজ্য সরকারকে বলবো যতদিন রবীন্দ্র ঘোষ বারাকপুরে আছেন, ওনাকে নিরাপত্তা দেওয়া হোক। যদি রাজ্য সরকার নিরাপত্তা না দেয় তাহলে আমরা নিশ্চিত ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে বলবো, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানাব।’

সাক্ষাতের সময় উপস্থিত ছিলেন বেলডাঙার ভারত সেবাশ্রমের প্রধান কার্তিক মহারাজ। তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচারের প্রতি রবীন্দ্র ঘোষের যে প্রতিশ্রুতি, তা মানবতার প্রকৃত চেতনাকে তুলে ধরেছে। এই কারণে তাঁকে সমর্থন করা আমাদের দায়িত্ব।’

এ সময় রবীন্দ্র ঘোষ যেকোনো অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

এই ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক যোগের অভিযোগ তুলে ফের কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘দুই শান্তির দূত কার্তিক মহারাজ ও মহারাজ অর্জূন সিং যারা প্রেম বিলিয়ে বেড়ান, তারা আজ রবীন্দ্রবাবুর কাছে গেছেন দেখলাম। আসলে তারা বাংলাদেশকে এখানে ভোটের মার্কেটিংয়ে ব্যবহার করতে চাইছেন। কেন্দ্রীয় সরকার আগে হস্তক্ষেপ করুক। বিদেশ সচিব গিয়েও কাজ হয়নি। হিন্দুদের আবেগ ভোট মার্কেটিংয়ে ব্যবহার করছেন। বাংলাদেশ দেখিয়ে উসকানি দিচ্ছেন আসলে।’

এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যমকে রবীন্দ্র ঘোষের ছেলে রাহুল ঘোষ জানান, তার বাবা তিন বছর আগে একটি দুর্ঘটনার শিকার হন এবং চিকিৎসার জন্য প্রায়ই ভারতে আসেন। তবে তিনি তার বাবার নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ‘আমি বাবাকে অনুরোধ করেছি বাংলাদেশে না ফিরে কিছুদিন আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য। কিন্তু তিনি চিন্ময় দাস প্রভুর মামলা লড়ার জন্য অনড়,’ বলেন রাহুল।

রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘আমি জানি যে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হতে পারে এবং আমার জীবন হুমকির মুখে রয়েছে। তবুও আমি চিন্ময় দাস প্রভুর পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাব।’

ভারতীয় গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমার মৃত্যু হলে বাংলাদেশেই হবে, যদি কোনও আইনজীবীর হাতেও মৃত্যু হতে হয় তবুও মানবাধিকার রক্ষার্থে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে লড়ব।’

রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘রবিবার রাতে চিকিৎসার জন্য পশ্চিমবঙ্গে এসেছি। কিন্তু বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম বলছে আমি ষড়যন্ত্র করছে এদেশে এসেছি। এটা ঠিক নয়। আমি শুধুমাত্র আইনজীবী নই, একজন মানবাধিকার কর্মী। কোন রাজনৈতিক দল করি না।’

যিনি বাংলাদেশের সম্মিলিত সনাতনীর জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে চলতি ডিসেম্বরের শুরুতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে জামিন নামঞ্জুর করে আদালত ২ জানুয়ারি পর্যন্ত কারাগারে পাঠিয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ১২ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসেন রবীন্দ্র ঘোষ। তবে তখন চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের পক্ষে ওকালতনামা তিনি আদালতে দাখিল করতে পারেননি। আগামী ২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম আদালতে আবারও চিন্ময় কৃষ্ণের জামিন আবেদনের শুনানি হবে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পরে অভিযোগ করেছিলেন, চট্টগ্রামে গিয়ে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের পক্ষে দাঁড়ানোয় তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্র ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে ফিজিক্যালি নয়, মানসিক হেনস্তা করা হয়েছে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm