চট্টগ্রামের গার্মেন্টসপাড়ায় ফিরেছে প্রাণ, ৩০০ কারখানা পুরোদমে চালু

করোনাকালে বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রামের ৩২টি গার্মেন্টস

চট্টগ্রামের গার্মেন্টসগুলোতে আবার ফিরেছে প্রাণ। কাজে যোগ দিয়েছে প্রায় শতভাগ শ্রমিক। কারখানাগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজে যোগ দিচ্ছেন শ্রমিকরা। সবমিলিয়ে পুরোদমে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের গার্মেন্টসপাড়া। চট্টগ্রামে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত অন্তত ৩০০ কারখানা এরই মধ্যে পুরোদমে চালু হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রামের ৩২টি গার্মেন্টস।

করোনাভাইরাসের অন্ধকার কেটে এখন আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে চট্টগ্রামের গার্মেন্টস কারখানাগুলো। বাতিল বা স্থগিত হওয়া অর্ডারগুলোরও অনেকগুলোই আবার ফিরে পেতে শুরু করেছে মালিকরা। ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ অর্ডার ফিরেছে বলে বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে। এতে দেশের বড় রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পে স্থবিরতা কাটতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে।

করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নজিরবিহীন সংকটে পড়ে গিয়েছিল দেশের পোশাকশিল্প খাত। এর প্রভাবে সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ৬৮৬ কোটি ডলার (প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা)। স্বাধীনতার পর আর কখনও রপ্তানিতে এত বড় ধস নামেনি।

এদিকে পোশাকশিল্পের মালিকদের অনেকেই বলছেন, সরকারি প্রণোদনার কারণে গার্মেন্টসগুলোর অনেকটাই মান রক্ষা হয়েছে। এরই মধ্যে বাতিল হওয়া রপ্তানি আদেশের ৮০ শতাংশই ফিরেছে। কারখানা মালিকদের এই সংগঠনের সভাপতি ড. রুবানা হক সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা ও মধ্যস্থতা করা হচ্ছে। অবশ্য ক্রয়াদেশ ফিরলেও ক্রেতারা অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দিচ্ছে বলে জানা গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই ছয় মাস কিংবা এক বছরের মতো লম্বা সময় নিচ্ছে তারা। আবার কেউ কেউ দামে ছাড় দিতে বাধ্য করছে।

বিজিএমইএ চট্টগ্রামের পরিচালক মোহাম্মদ আতিক বলেন, ‘চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি কারখানা বাতিল বা স্থগিত অর্ডার ফিরে পেয়েছে। তবে কী পরিমাণ পেয়েছে সেটি এখনও সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। আমরা এখনও বলতে পারছি না যে আসলে পরিস্থিতি কোন্ দিকে যাচ্ছে। তবে কিছুটা ইতিবাচক হলো আমাদের কাছে যে কাপড়গুলো রেডি ছিলো সেগুলো এখন তারা নিচ্ছে। নতুন করেও কিছু অর্ডার মিলছে বলেও অনেক মালিক ফোন করে আমাদের জানাচ্ছেন।’

মোহাম্মদ আতিক জানান, বৈশ্বিক মহামারি পরিস্থিতিতে চুক্তির শর্ত দেখিয়ে চলতি বছর একের পর এক রপ্তানি আদেশ স্থগিত করে ক্রেতারা। বিজিএমইএর হিসাবে, তিন শতাধিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩১৫ কোটি ডলারের (প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা) রপ্তানি আদেশ স্থগিত হয়েছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে রপ্তানিকারকদের পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেয় সরকার। তবে এরপরও বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। চাকরি হারিয়েছেন অনেক শ্রমিক।

বিজিএমইএর তথ্যমতে, চট্টগ্রামে ২২০টি কারখানা চালু হয়েছে পুরোদমে। তবে বন্ধ হয়ে গেছে ৩২টি গার্মেন্টস। বিকেএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানা চালু আছে ৮০টি।

চট্টগ্রাম শ্রম আদালতের সদস্য ও প্রবীণ শ্রমিক নেতা সফর আলী বলেন, ‘গার্মেন্টসের শ্রমিকরা খুবই দক্ষ। কিন্তু আমাদের এখানকার শ্রমিকরা খুবই অবহেলিত। মালিকদের পক্ষ থেকে তারা ন্যায্য বেতন পান না। করোনা মহামারিতে চট্টগ্রামের কয়েক হাজার শ্রমিক চাকরিহারা হয়েছে। কিন্তু অনেক শ্রমিক জানেন না তাদের চাকরি নিষ্পত্তিতে তাদের কী কী প্রাপ্য রয়েছে। এখন গার্মেন্টসগুলো অর্ডার ফিরে পাচ্ছে, কিন্তু চাকরিহারা শ্রমিকরা চাকরি ফিরে পাবে কিনা সেটার নিশ্চয়তা নেই।’

এএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!