চট্টগ্রামের এক গণপূর্ত কর্মচারী ১২ বছর ধরেই আছেন এক দপ্তরের চেয়ারে। ২৭ বছরের চাকরি জীবনে মাত্র দু’বার দপ্তর বদল হয়েছে তার। এভাবে এক জায়গায় দীর্ঘদিন থাকার সুবাদে নিজের বলয় তৈরি করেছেন তিনি। ঠিকাদার থেকে শুরু করে সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে তিনি আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গণপূর্তের ওই কর্মচারীর নাম দেবাশীষ কুমার বৈদ্য। গণপূর্ত অধিদপ্তর ডিভিশন-১ চট্টগ্রামের উচ্চমান সহকারী তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সেবাপ্রার্থী ও ঠিকাদারদের লাইসেন্স নবায়নসহ দপ্তরের বিভিন্ন ফাইলের জটিলতা তৈরি করে তাদের কাছ থেকে আদায় করেন টাকা। আর টাকা না দিলে তিনি ফাইল আটকে দেন।
সম্প্রতি এক ব্যক্তির কাছে টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে কথাও বলেছেন তিনি। সেই কথোপকথনের অডিও বার্তা চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে সংরক্ষিত আছে।
ওই অডিওতে দেবাশীষ কুমার বৈদ্য বলেন, ‘কেউ খুশি হয়ে ৪০০-৫০০ টাকা দিলে আমি নিই। আমি কারও কাছ থেকে খুঁজি না। ৯৫ পার্সেন্ট কাজ আমি টাকা ছাড়া করি।’ অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি এই টাকা ঘুষ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি যেটা মনে করেন।’
জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের গণপূর্ত চট্টগ্রাম সার্কেলে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন দেবাশীষ কুমার বৈদ্য। ২০০৭ সালে উচ্চমান সহকারী হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। ২০১২ সাল গণপূর্ত অধিদপ্তরের ডিভিশন-২-এ কর্মরত ছিলেন। পরে ২০১২ সালে তিনি আসেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের ডিভিশন-১ এ। এখনও তিনি এই দপ্তরেই কর্মরত আছেন।
অথচ সরকারি চাকরি বিধিতে উল্লেখ আছে, প্রেষণের সময়কাল তিন বছর। ব্যতিক্রম ক্ষেত্র ছাড়া, চাকরির মেয়াদ তিন বছরের অধিক হবে না।
সরেজমিন চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জের গণপূর্ত কার্যালয়ে গিয়ে একাধিক ঠিকাদারের কাছে দেবাশীষ কুমার বৈদ্যের সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, উচ্চমান সহকারীর টেবিলে ফাইল গেলে তাকে আর্থিক খুশি করতে হয়। না দিলে আটকে দেয়। এছাড়া ঠিকাদারি লাইসেন্সের নবায়নসহ বিভিন্ন কাজে তাকে টাকা দিয়ে খুশি করতে হয়।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের ডিভিশন-১ এর দপ্তরে গিয়ে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দেবাশীষ কুমার বৈদ্য বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে কে অভিযোগ দিয়েছে, তার নাম বলেন। আমি দেখতে চাই সে ব্যক্তি কে?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
ডিজে