চট্টগ্রাম নগরীর কল্লোল সুপার মার্কেট অবৈধভাবে ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র বন্ধ এবং সুবিচার চেয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভুক্তভোগী দোকান মালিকরা।
রোববার (১৪ জুলাই) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এস রহমান হলে আয়জিত সংবাদ সম্মেলন এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কল্লোল সুপার মার্কেট দোকান-মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের অর্থ সম্পাদক খোকন মজুমদার।
খোকন মজুমদার বলেন, সাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী কল্লোল সুপার মার্কেট নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। তার অন্যায়, অনিয়ম ও ষড়যন্ত্রের কারণে ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। সুবিচার পেতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসে স্মারকলিপি দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া তার অপকর্ম ও ষড়যন্ত্রের বিষয়ে মেয়র, সিডিএ চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকসহ ফায়ার সার্ভিসের প্রধানের সঙ্গে দেখা করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। তারা এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
খোকন মজুমদার জানান, কল্লোল সুপার মার্কেটের মূল মালিক আতিয়া বানু। তিনি ১৯৮৮ সালে সিডিএ থেকে পাঁচতলা বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করার অনুমতি পান। তবে তার আর্থিক সংগতি না থাকার কারণে বিভিন্ন জনের কাছে দোকান সমূহের পজেশন সালামিতে হস্তান্তর করেন এবং ভিন্ন ভিন্ন তারিখে চুক্তিতে আবদ্ধ হন। উক্ত চুক্তিপত্র মূলে কল্লোল সুপার মার্কেট দোকান-মালিক সমবায় সমিতির দোকানদাররা একদিকে দোকানসমূহ নিজেই অলিওয়ারিশান স্থলবর্তী পরবর্তীক্রমে ভোগ দখল বা ব্যবসা বাণিজ্য করার অধিকার আইনানুগভাবে লাভ করেন।
এছাড়া মার্কেটের পজিশন অপর যেকোনো তৃতীয় পক্ষের বরাবরে হস্তান্তর করার আইনানুগ অধিকার অর্জন করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে আতিয়া বানুর নিরঙ্কুশ স্বত্ব, দখলের অধিকার বলিবার বা থাকিবার আইনত ও ন্যায়ত কোন সুযোগ নাই। সম্পত্তির মূল মালিক আতিয়া বানু দোকান মালিকগণের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা সালামী গ্রহণ করেন এবং তিনতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেন। বিগত এতবছর যাবত দোকান মালিকগণের কাছ থেকে লাখ টাকা সালামী আতিয়া বানুসহ তার ওয়ারিশরা নানাভাবে ভোগ করেছেন।
তিনি বলেন, কল্লোল সুপার মার্কেট বেআইনী ও অবৈধভাবে ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন করপোরেশনের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। বিগত কয়েকবছর ধরে নানাভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন তিনি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি জলাবদ্ধতার উদ্ভট, বানোয়াট অজুহাত দেখিয়ে মার্কেটের পশ্চিম-দক্ষিণ অংশ ভেঙে ফেলার অপচেষ্টা চালান। কিন্তু তার এই কু-উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তৎকালীন চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বুলডোজারসহ যাবতীয় সরঞ্জাম সেখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে যান। এরপর দোকান মালিকরা বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে অপর মামলা করলে আদালত মাহমুদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেন। যা অদ্যাবধি বলবৎ আছে। এরপরও মাহমুদুল ইসলাম ষড়যন্ত্রের কারণে দোকান মালিকরা ঘর ভাড়া নিয়ন্ত্রকের আদালত তথা ৫ম সহকারী জজ আদালতে ৪০টি ঘর ভাড়া মামলা করেন। এটিও বিচারাধীন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কল্লোল সুপার মার্কেট ভবনটি ১৯৮৯-৯০ সালে বহুতল ভবনের ফাউন্ডেশন দিয়ে শুধুমাত্র তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়। এটি আরও ৬০-৭০ বছর পর্যন্ত নিশ্চিন্তে ব্যবহার উপযোগী। এরপরও মাহমুদুল ইসলাম এই ভবনকে জরাজীর্ণ দেখিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দিয়ে ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন।
মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর হয়রানি ও ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি ও সুবিচার পেতে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভুক্তভোগী দোকান মালিকরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কল্লোল সুপার মার্কেট দোকান-মালিক সমবায় সমিতির উপদেষ্টা মো. সেলিম, সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ মামুন, সহসভাপতি সরোয়ার আলম, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মানিক, সহ-সাধারণ সম্পাদক সত্য নারায়ণ ধর ও জহিরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহিম, সদস্য শামছুদ্দিন খালেদ, আবদুল হাফিজ জিসান ও শাহ মুহাম্মদ এনামুল হকসহ ভুক্তভোগী অর্ধশত ব্যবসায়ী।