চট্টগ্রামের পিপির বিরুদ্ধে আইন উপদেষ্টার কাছে ডাক্তারের অভিযোগ
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের হয়ে শুনানিতে অংশগ্রহণের অভিযোগ তুলেছেন মামলার বাদি এক চিকিৎসক।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এমন অভিযোগ সংক্রান্ত একটি চিঠি আইন, বিচার ও সংসদীয় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বরাবর পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগকারী ওই চিকিৎসক হলেন রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
অভিযোগ উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল বিএনপির চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটিতে নাম থাকায় সিভিল পোশাকে পুলিশ সদস্য টুটুল মজুমদারসহ কয়েকজন তাকে রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকার চেম্বার থেকে তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত ১৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিন আসামি আত্মসমর্পণ করেন। জামিন শুনানির সময় তিনি নিজেই এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। আদালত একপর্যায়ে তার বক্তব্য শুনতে চাইলে তিনি বলতে শুরু করেন।
রাউজান উপজেলার ওই মামলায় জেলা পিপির বিরুদ্ধে আসামিদের পক্ষে শুনানির অভিযোগ করে চিঠিতে ডা. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘জেলা পিপি মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেছেন। তিনি আদালতের কাছে বক্তব্য উপস্থাপন করার সময় আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন এবং বক্তব্য দিতে বারবার বাধা দিতে থাকেন। আসামিদের পক্ষে জামিন শুনানিতে জেলা পিপির অংশগ্রহণ বিধিবহির্ভূত এবং অনৈতিক।’
তিনি বলেন, ‘ওইদিন প্রায় আধঘণ্টা ধরে বাকবিতণ্ডার পর আদালতের হস্তক্ষেপে আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপন করি। যার প্রমাণ রয়েছে সিসিটিভির ফুটেজে।’
সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত এক ব্যক্তির মামলার বিচারিক আদেশ নিয়ে বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের হট্টগোলের ঘটনা টেনে জাহাঙ্গীর অভিযোগ করেন, ‘জেলার বিভিন্ন থানার জিআর মামলায় তিনি পিপি হওয়ার পরও আসামি পক্ষে মামলায় ওকালতি করে আসছেন। এতে সরকার এবং বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এমনকি তিনি কিছুদিন আগে একজন মাননীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়ের সঙ্গে অযাচিত ও অবিচারসুলভ আচরণ করায় চট্টগ্রাম আদালতের সুন্দর ও সুষ্ঠ পরিবেশ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।’
এর আগে ২২ অক্টোবর একটি মামলার আবেদনের শুনানি চলাকালে বাদীপক্ষের আইনজীবী জেলা পিপি মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার পর চট্টগ্রামের মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারকরা এজলাস থেকে নেমে কর্মবিরতি পালন করেন। এ নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এ সময় বিএনপি-জামায়াতপন্থি একদল আইনজীবী আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে।
আদালত সংশ্লিষ্টরা জানান, ২২ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহানগর হাকিম মো. অলি উল্লাহর আদালতে একটি মামলার আবেদনের ওপর শুনানি চলছিল। মামলাটির বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য নিয়োগ পাওয়া জেলা পিপি মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক। তার সঙ্গে কথা কাটাকাটির পর প্রথমে মহানগর হাকিম মো. অলি উল্লাহ ও পরে অন্য মহানগর হাকিমরা সবাই এজলাস ছেড়ে নেমে যান। পরে মুখ্য মহানগর হাকিমের সঙ্গে তারা এ বিষয়ে আলোচনা করেন। পরে একজন ছাড়া সবাই দুপুর আড়াইটার দিকে ফের এজলাসে বসেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার পর আইনজীবী আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক গণমাধ্যমকে বলেন, ১৭ জুলাই মুরাদপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে শোয়াইবুল ইসলাম নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন। তার পক্ষে মামলার আবেদন নিয়ে আমরা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ মো. অলি উল্লাহর আদালতে যাই। আমরা চেয়েছিলাম মামলাটি আমলে নিয়ে যেন থানা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। বাদী ১২৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০০-২৫০ জনকে আসামি করার আবেদন জানান। বিচারক বাদীকে আসামিদের নাম বলতে বললে তিনি প্রায় ২০ জনের নাম বলেন। কিন্তু বিচারক সবার নাম জানতে চান।
আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, আমি তখন আদালতকে বলি, ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের নাম দেওয়া হয়েছে। সব নাম তো আসামি বলতে পারবে না। শুনানি শেষে আদালত মামলার আবেদনটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে আদেশ দেন। আদেশ পেয়ে আমরা মেনে নিই। কিন্তু একপর্যায়ে বিচারক আমাকে বলেন, আমার আদালতে মামলা নিয়ে কোনো রিঅ্যাক্ট দেখানোর চেষ্টা করবেন না। এই বলে তিনি এজলাস থেকে নেমে যান। শুনেছি পরে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের অন্য বিচারকরাও এজলাস থেকে নেমে যান।