চট্টগ্রামের ঈদবাজারে গলাকাটা দাম টেরিবাজার সানমার ওশানে

এক টেরিবাজারেই দিনে ৫০ কোটি টাকার বেচাকেনা

করোনার ধকল কাটিয়ে এবার পুরোধমে চলছে ঈদের কেনাকাটা। চট্টগ্রাম নগরীর প্রতিটি কাপড়ের দোকানে বিক্রি আগের দুই বছরের তুলনায় অনেক বেশি হচ্ছে। আর এই সুযোগে দোকানিরা ইচ্ছেমতো দামও হাতিয়ে নিচ্ছে। কাপড়ের গায়ে মূল্য না লাগিয়ে নিজেদের মনগড়া কোড বসিয়ে কাপড় বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতারাও নিরুপায় হয়ে কিনছেন।

ক্রেতাদের অভিযোগ, এবার ঈদের পোশাকে গলাকাটা দাম নিচ্ছে দোকানিরা। থান কাপড়ের বিপণি বিতানগুলোতে একচেটিয়া দামে কাপড় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া রেডিমেড পোশাক একদরের নামে গলাকাটা দাম রাখছে।

টেরিবাজারের মদিনা ম্যানসনসহ একাধিক কাপড়ের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, কাপড়ের ওপর দাম লেখা নেই। কাপড়ের ওপর দোকানিদের নির্দিষ্ট কোড বসানো হয়েছে। সেটি দেখে কাপড়ের প্রকৃত দাম কত তা দোকানের কর্মচারী ছাড়া অন্য কোনো ক্রেতা বুঝতে পারে না। সেটি দেখে ক্রেতাকে কাপড়ের দাম বলা হয়। ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দাম হাঁকানো কাপড় কেউ দরাদরি করে কিনছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকায়। একই পোশাক আবার অনেকে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায়ও কিনছেন।

শুধু টেরিবাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে আড়াই হাজারের ওপরে কাপড়ের দোকান রয়েছে। ব্যবসায়ীদের ধারণা মতে, এসব দোকানে দিনে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। এই বাণিজ্যের পুরো অংশই হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। শুধু টেরিবাজার নয়, নগরীর সব মার্কেটে একই অবস্থা।

চট্টগ্রামের প্রায় মার্কেটে কোনো ধরনের জবাবদিহিতা ছাড়া একচেটিয়া দামে কাপড় বিক্রি করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের বাজার তদারকির অভাবে এমনটাই হচ্ছে। নিয়মিত অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার দাবি তুলেছে ক্রেতারা।

রোববার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামের সানমার ওশান সিটিতে পোশাক কিনতে আসেন সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকি। তিনি বলেন, গত বছর যে পাঞ্জাবি কিনেছি ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায়। সেই পাঞ্জাবি এবার কিনতে হয়েছে ২২০০ টাকায়।

টেরিবাজারে কাপড় কিনতে আসা জোবাইদা বেগম নামে এক গৃহিণী বলেন, সাধারণ একটি থ্রি-পিস, যা আগে এক হাজার টাকায় বিক্রি করা হতো। ঈদ মার্কেটে তা এবার হচ্ছে দুই হাজার টাকা।

দেলোয়ার হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, আড়ং থেকে পাঁচ হাজার ৮৪৯ টাকা দামের একটি পাঞ্জাবি কিনেছি। দাম মনে হচ্ছে বেশি নিয়েছে। চট্টগ্রামের পোশাকের বাজারে অতিরিক্ত মূল্য নেওয়ার কারণে অভিযান চালনো উচিত।

নগরীর নিউমার্কেট, রিয়াজউদ্দিনবাজার, টেরিবাজার, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, বালী আর্কেড, ভিআইপি টাওয়ার, মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, ফিনলে স্কয়ার, সানমার ওশান সিটি, গুলজার টাওয়ার, মতি টাওয়ার ও কেয়ারি ইলিশিয়ামসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকার মার্কেটে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পোশাক বেশি জমজমাট দেখা গেছে। বিপণিবিতাগুলোতে বাহারি নাম আর ডিজাইনে মেয়েদের পোশাক উজ্জ্বলতা বাড়িয়েছে ঈদ বাজারের।

দোকানিরা জানান, এ বছর ঈদ বাজারে সুতি কাপড়ের পোশাকের চাহিদাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া এর বাইরে বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, হাল আমলের তরুণীদের পছন্দের টপস, সারারা-গারারা এবং গাউন ড্রেসসহ ইন্ডিয়ান টিস্যু কাপড়ের নানা আইটেমের পোশাক নজর কাড়ছে এদেশের নারীদের। তবে শাড়িরও চাহিদা রয়েছে এক শ্রেণীর নারীদের কাছে। এছাড়া বরাবরের মতো ছেলেরা শার্ট-প্যান্টের পাশাপাশি কিনছেন পাঞ্জাবি। শিশুদের জন্য রয়েছে রং বাহারি নকশাদার পোশাক। মেয়ে শিশুদের জন্য রয়েছে সালোয়ার-কামিজ, ফ্রক, টপস, স্কার্ট, কুর্তা ও প্যান্ট। আর ছেলে শিশুদের জন্য পাঞ্জাবি, কটি, শার্ট, টি-শার্ট ও প্যান্ট। তবে গরমকালে ঈদ পরায় এসব পোশাকের মধ্যে সুতি পোশাকের চাহিদা বেশি।

গুলজার টাওয়ারের নিউ ভাই ভাই থ্রি-পিস কর্নারের স্বত্ত্বাধিকারী মো. মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এবার ঢাকা থেকে বেশি দাম দিয়ে থ্রি-পিস কিনতে হয়েছে। বিশেষ করে হাতের কাজ করা থ্রি-পিসের বেশ দাম দিতে হয়েছে। যে কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

মিমি সুপার মার্কেটের রুপসা শাড়ি হাউসের বিক্রেতা আলাউদ্দিন বলেন, গত বছর এ সময় যত শাড়ি বিক্রি হয়েছে এবার সেই সময়ে অর্ধেক শাড়ি বিক্রি হয়েছে। ৩০০ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার শাড়ি রয়েছে এ দোকানে। এ বছর শাড়ির দাম খুব একটা বাড়েনি।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ১৫টি অভিজাত ও ৫৮টি সাধারণ বিপণিকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া টেরিবাজার, তামাকুমণ্ডি ও রিয়াজউদ্দিন বাজারে ২৬০টি ছোট আকারের মার্কেট রয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে এসব বিপণিকেন্দ্রের ৪৬ হাজার দোকানে পোশাক, জুতা, প্রসাধনী, গয়না ও তৈজসপত্রের বেচাকেনাও জমে উঠেছে।

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাজারে কিছু কাপড়ের দাম বেড়েছে। করোনার কারণে গত দুই বছর ব্যবসায়ীদের অনেক লোকসান হয়েছে। এ বছর অনেকটা ভালো ব্যবসা হচ্ছে। তবে সামনে জব্বারের বলী খেলার জন্য তিনদিন কোতোয়ালী থেকে আন্দরকিল্লা পর্যন্ত সড়ক বন্ধ থাকবে। এর কারণে টেরিবাজার, খাতুনগঞ্জ ও জহুর হকার্সে পণ্য আনা-নেওয়া ও ক্রেতাদের যাতায়াতে সমস্যা হবে। ঈদের আগের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে তিনদিন সড়ক বন্ধ থাকলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মেয়রকে অনুরোধ জানিয়েছি, যাতে শুধু বলি খেলার দিন ছাড়া মেলার অন্য দুই দিন কোতোয়ালী থেকে আন্দরকিল্লা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm