আগামী তিন দিন চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এদিকে ভারী বর্ষণে প্রায় ডুবে গেছে কক্সবাজার। কক্সবাজারে ভারী বর্ষণে পৃথক পাহাড়ধসের ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। শহরের সৈকত এলাকায় হোটেল-রিসোর্ট জোনে পানি জমে যাওয়ায় কমপক্ষে ২৫ হাজার পর্যটক আটকা পড়ে গেছেন।
টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজারের চকরিয়ায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে দুপুরে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের দিকে আসা কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে যায়। পরে মাটি সরানোর পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
চট্টগ্রাম নগরীতেও শুক্রবার দুপুর থেকে বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। নগরীতে শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। আর এর আগে দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পারের ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ সময় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এসময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি-সমতল বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরী, ফেনী ও গোমতী নদীর পানি-সমতল হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি-সমতল বাড়ছে।
আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশে ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা থাকায় আগামী দুই দিন চট্টগ্রাম বিভাগের নদীগুলোর পানি-সমতল দ্রুত বাড়তে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
এদিকে ভারী বর্ষণে কক্সবাজার শহর ডুবে গিয়ে সৈকত এলাকার হোটেল-রিসোর্ট জোনে কমপক্ষে ২৫ হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন। ভারী বর্ষণে শহরের ৯০ শতাংশ এলাকা ডুবেছে। জলাবদ্ধতার কারণে হোটেল–মোটেল জোনের অন্তত ১৮টি সড়ক ডুবে গেছে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে কক্সবাজারে বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা থেকে শুক্রবার বেলা তিনটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। চলতি মৌসুমে এটি একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
কক্সবাজারে ভারী বর্ষণে পৃথক পাহাড়ধসের ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডিককুল ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে তিন জন শহরতলী ঝিলংজার দক্ষিণ ডিককুল এলাকায় বাসিন্দা ও তিন জন উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা। রাতে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ডিককুল এলাকায় পাহাড়ধসে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়। এরা হলেন ওই এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী আঁখি মনি (২৬) এবং তার দুই শিশুকন্যা মিহা জান্নাত নাঈমা ও লতিফা ইসলাম।অন্যদিকে রাতে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসে একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-২ ব্লকের কবির আহমেদের ছেলে আব্দুর রহিম, আব্দুল হাফেজ ও আবদুল ওয়াহেদ।
সিপি