চট্টগ্রামকে ‘অপেক্ষায়’ রেখে ফাইনালে ‘মাশরাফির খুলনা’

জিতলেই ফাইনাল, এমন সমীকরণে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের প্রথম কোয়ালিফায়ার খেলতে নামে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ও জেমকন খুলনা। হাইভোল্টেজ সেই লড়াইয়ে চট্টগ্রামকে ঢাকার মুখে ঠেলে দিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটলো মাশরাফির খুলনা। ম্যাচে মাশরাফি পেলেন ৫ উইকেট, আর খুলনা জিতলো ৪৭ রানে। ফল, প্রথম দল হিসেবে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনালে খুলনা। হারলেও চট্টগ্রামকে বিদায় নিতে হচ্ছে না। মঙ্গলবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে বেক্সিমকো ঢাকার মুখোমুখি হবে মোহাম্মদ মিঠুনের দল। ওই ম্যাচে যারা জিতবে তারাই যাবে ফাইনালে।

করোনা ও ইনজুরির কারণে দল গঠনের সময় ছিল না মাশরাফির নাম। মাশরাফি ফিরলে তাকে নেয়ার জন্য টানাটানি পড়ে যায় দলগুলোর মাঝে। শেষে দেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিবি (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) মাশরাফিকে নিয়ে লটারি করে। তাতে খুলনা দলের হয়ে যান ‘অরজিনালি খুলনার’ মাশরাফি। তাকে নিয়ে কেন কাড়াকাড়ি হয়েছিল সেটি বোঝাতে বেশি সময় নেননি মাশরাফি। নিজের প্রথম ম্যাচেই ‘ নিজের জাত’ চেনান তিনি। আর সোমবার ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে মাশরাফি হয়ে উঠলেন ‘নিয়ামক’।

ফাইনালের দৌঁড়ের গুরুত্বপূর্ণ সেই লড়াইয়ে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন। কিন্তু টুর্নামেন্টজুড়ে প্রতিপক্ষকে কাঁদানো গাজী গ্রুপ চট্টগ্রারমের বোলিং বিভাগকে ছেলেখেলা করেছে খুলনা। প্রথমে ব্যাটিং করে ২১০ রানের পাহাড় গড়েছেন মাহমুদউল্লাহ সাকিবরা।

প্রথম পর্বে মাহমুদউল্লাহ, সাকিবের ভালো সার্ভিস পায়নি খুলনা। মাহমুদউল্লাহ ছোট ছোট কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেললেও সাকিব একেবারেই নিস্প্রভ ছিলেন। কিন্তু বড় ম্যাচে ঠিকই জ্বলে উঠলেন দুজন। খুলনা অভিজ্ঞদের নিয়ে তারকাসমৃদ্ধ দল। অভিজ্ঞতার জোড়েই আজ এতো রান তুলেছে দলটি।

ওপেনিংয়ে নেমে শুরু থেকেই দ্রুত রান তুলতে চেয়েছেন অভিজ্ঞ জহুরুল ইসলাম। পরে ব্যাটে ঝড় তোলেন তিন অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান। তরুণ জাকির হোসেনের সঙ্গে জহুরুলের ওপেনিং জুটি ছিল ৭১ রানের। জাকির দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে যখন ১৬ রান করে ফিরছিলেন তখন খুলনার রান ৭১। অর্থাৎ পরের ৬৪ বলে ১৩৯ রান তুলেছে খুলনা!

ইমরুল কায়েস তিনে নেমে ১২ বলে ২৫ রান করেন। তারপর মাহমুদউল্লাহ যেভাবে খেলছিলেন মনে হচ্ছিল বড় কোনো রেকর্ড হতে যাচ্ছে! সঞ্জিত সাহার বলে সীমানায় ধরা পড়ার আগে মাত্র ৯ বলে ৩০ রান করেছেন খুলনা অধিনায়ক। চার ২টি, ছক্কা ৩টি। সাকিব ১৫ বল খেলে ২টি করে চার-ছয়ে করেছেন ২৮ রান। আর জহুরুল ইসলাম ৫১ বলে ৫টি চার ৪টি ছয়ে করেছেন ৮০ রান।

২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে এই ২১০ রান তুলেছে খুলনা। চট্টগ্রামের সেরা বোলর মোস্তাফিজুর রহমান ২ উইকেট পেলেও চার ওভারে খরচ করেছেন ৩১ রান।

২১০ রানের জবাব দিতে নেমে চট্টগ্রামের ফর্মে থাকা ওপেনার লিটন দাস শুরুটা করেছিলেন বেশ আশাব্যাঞ্জক। কিন্তু অপর প্রান্তে থাকা সৌম্য সরকারকে শূন্য রানে ফিরিয়ে গতিটা ধরে রাখতে দেননি মাশরাফি। কিছুক্ষণ পর ফিরিয়েছেন ১৩ বলে ২৪ রান করা লিটন দাসকেও।

এরপর তরুণ মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়ে দারুণ একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন চট্টগ্রামের অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন। তৃতীয় উইকেটে ৭৩ রান তোলেন দুজন। কোমড় শক্ত করে যখন একটু আক্রমণাত্মক হতে চেয়েছে চট্টগ্রামকে তখন আবারও ধাক্কা দিয়েছেন মাশরাফি। দলীয় ঠিক ১০০ রানের মাথায় ফেরান ২৭ বলে ৩১ রান করা জয়কে।

এরপর মিঠুনকে আরিফুল হক ও মোসাদ্দেক হোসেনকে সাকিব আল হাসান ফেরালে লড়াইটা সেখানেই একপেশে হয়ে যায়। শেষ দিকে আরও দুই উইকেট নিয়ে নিজের বোলিং ফিগারকে আরও উজ্জল করেছেন মাশরাফি। শেষ পর্যন্ত ২ বল আগে ১৬৩ রানে গুটিয়ে গেছে চট্টগ্রাম। মিঠুন ৩৬ বলে ৩টি করে চার-ছয়ে ৫৩ রান করেছেন। ১০ বলে ১৮ করেছেন শামছুর রহমান।

মাশরাফি চার ওভারে ৩৫ রান খরচায় পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। দুটি করে উইকেট পেয়েছেন হাসান মাহমুদ ও আরিফুল হক।

এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!