চকরিয়া-পেকুয়ায় ভয়াবহ বন্যায় ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি
টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়ায় আবারো ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে বন্যা। অব্যাহত রয়েছে ভারী বর্ষণ। আশংকা রয়েছে পাহাড়ধসেরও। বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে।
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ ১৭টি অভ্যন্তরীণ সড়কের ওপর দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় যানচলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। দুই উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫ লাখ মানুষ। ঢলের পানিতে তলিয়ে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পানি প্রবেশ করায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অঘোষিত ছুটি চলছে।
জানা যায়, ঢলের তোড়ে ভেসে যাওয়া এক যুবক এখনও নিখোঁজ রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাতামুহুরী নদীর ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার প্রায় এক মিটার ওপর দিয়ে ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চকরিয়া-পেকুয়ার লাখো মানুষ পানিবন্দি ছিল তিনদিন। শনিবার পানিও নামতে শুরু করেছিল। কিন্তু শনিবার দিবাগত রাতে পার্বত্য উপজেলার লামা ও আলীকদমে অতি বর্ষণ হলে রোববার ভোর রাতে ভয়াবহ ঢল নামে চকরিয়া-পেকুয়ায়। মাতামুহুরী নদীর দুই কুল উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করে পানি। বসতঘরে ঢুকতে শুরু করে রাত দেড়টা থেকে।

মাত্র দুই ঘন্টার মধ্যেই পাহাড়ি গ্রাম ছাড়া দুই উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভার সিংহভাগ অংশে বসতবাড়িতে কয়েক ফুট পর্যন্ত পানি উঠে। রোববার বিকেল ৪টার দিকে শত শত বাড়িতে ৪-৫ ফুট পর্যন্ত পানি উঠে যায়। ঢলের পানিতে সড়ক ডুবে যাওয়ায় দুই উপজেলার অভ্যন্তরীণ সকল সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চকরিয়ার বমুবিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, চিরিঙ্গা, সাহারবিল, পূর্ব ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, বিএমচর, কোণাখালী, ডুলাহাজারা-খুটাখালী, ঢেমুশিয়া, বদরখালী ও চকরিয়া পৌরসভা এবং পেকুয়ার উজানটিয়া, মগনামা, সদর ইউনিয়ন, শিলখালী, বারবাকিয়া, টৈটং ও রাজাখালী ইউনিয়নের পাহাড়ি গ্রাম ছাড়া সমতলের সিংহভাগ ঘরে পানি উঠেছে। সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী ও হারবাং এলাকা।
চকরিয়া-পেকুয়ার বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে পড়েছে ঢলের পানি প্রবেশ করায়। এর মধ্যে চকরিয়া সরকারি কলেজের ভেতরে-বাইরে প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় শিক্ষাকার্যক্রম পানি না কমা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে অধ্যক্ষ আকম গিয়াস উদ্দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন।
কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শওকত ওসমান বলেন, এই ইউনিয়নটি পাহাড়ি ঢলের হিট পয়েন্টে পড়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে প্রপার কাকারায়। বেড়িবাঁধ ও গাইডওয়াল ভেঙ্গে ও লোটনী-হাজিয়ান দিয়ে মাতামুহুরীর পানি পাড়া গায়ে প্রবেশ করে। শুধুমাত্র কয়েকটি পাহাড়ের বাসিন্দা ছাড়া এই ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষ মানুষ এখন পানিবন্দি। কার্পেটিং, ব্রিকসলিং, প্লাডসলিং ও গ্রামের কাঁচা-রাস্তাগুলো ঢলের তোড়ে কমবেশি ভেঙ্গে গেছে। পানি কমলে ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। এরই মধ্যে এই ইউনিয়নে প্রায় চার হাজার ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।
একইভাবে অপরাপর ইউনিয়নগুলোতেও ঢলের তোড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন বলেছেন, বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করে জানা যাবে।
এদিকে, প্লাবিত এলাকায় টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় ও ঘরের পানি উঠায় রান্না-বান্না করতে না পেরে তীব্র খাবার ও পানীয়জলের সংকট দেখা দিয়েছে। উপোস রয়েছে অত্যধিক পানি উঠা বেশ কটি গ্রামের মানুষ।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা জানিয়েছেন, মাতামুহুমী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দুই দিন পর বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলেও জানান তিনি।
কক্সবাজারের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় স্থানীয় আবহাওয়া অফিস ৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। অব্যাহত ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের সতর্কতাও জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রথম দফার বন্যায় প্লাবিত পরিবারগুলোর জন্য চাল-ও শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে।