কক্সবাজারের চকরিয়ায় আওয়ামী লীগের গ্রুপিং এখন তুঙ্গে। মূলত চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনের পর থেকে বিভক্তি প্রকাশ্যে এসেছে। এ কারণে আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কোন জাতীয় অনুষ্ঠান আসলেই আওয়ামী লীগের মধ্যে গ্রুপিং প্রকাশ্যে চলে আসে।
এর জের ধরে চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনের পর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌরসভা আওয়ামী লীগ যৌথভাবে কোন সভা-সমাবেশও করতে পারেনি। সর্বশেষ ৭ মার্চের অনুষ্ঠানও পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা ও পৌরসভা এবং পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে পৌর শহরের সিস্টেম কমপ্লেক্সের সামনে আয়োজিত ৭ মার্চের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কক্সবাজার-১(চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাফর আলম তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অন্য পক্ষের নেতাদের নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। তিনি এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপিকে নিয়েও মন্তব্য করে বলেন, ওই নেতাকে আওয়ামী লীগ থেকে তিন তিন বার নৌকার প্রার্থী করা হলেও তিনি বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ ও তার স্ত্রী হাসিনা আহমদের কাছেও পরাজয় বরণ করেন। এ সময় তিনি চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম এবং চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। তিনি এসব নেতাদের বিরুদ্ধে কটুক্তিমুলক মন্তব্যও করেন।
ওই সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন চকরিয়া মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলা, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বুলবুল, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছির প্রমুখ।
অপরদিকে, চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের হল রুমে ৭ মার্চ উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের অপর অংশ।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী। প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা জামাল উদ্দিন জয়নাল, আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক আ ক ম গিয়াস উদ্দিন, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন মানিক, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা আতিক উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন, চকরিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেব কলীগের সভাপতি শওকত হোসেন প্রমুখ।
এই আলোচনা সভায় বক্তারা চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। তারা বলেন, গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তাকে নিবাচিত করেন। কিন্তু তিনি সংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে শুধু আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, আমরা যদি নিজের আখের গোছানোর জন্য রাজনীতি করতাম, তাহলে কয়েকটা সিস্টেম কমপ্লেক্সের মালিক হতে পারতাম।
এসময় তিনি সংসদ জাফর আলমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, চকরিয়া পৌরশহরে সিস্টেম কমপ্লেক্স নামের একটি মার্কেট রয়েছে। ওই মার্কেটে মানুষদের সিস্টেমে ফেলে টাকা আদায় করা হয়।
এর আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি চকরিয়া-পেকুয়ার সাংসদ জাফর আলমকে উদ্দেশ্য করে নানা ধরনের বক্তব্য রাখেন। তিনি ওই সভায় বলেন, জাফর আলম এক সময় খুব গরিব ছিলেন। কিন্তু গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে রাতারাতি তিনি কোটিপতি বনে যান। চকরিয়া-পেকুয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে প্রচুর সম্পদের পাহাড় গড়েন।
তবে চকরিয়ায় আওয়ামী লীগের এই বিরোধকে ভালো চোখে দেখছেন না দলের তৃণমুল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। তাদের অনেকে আক্ষেপের সুরে বলেন, নেতারা সবাই ক্ষমতার দ্বন্ধে অন্ধ হয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ এবং দলকে সুসংহত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্ত কিছু কিছু নেতা তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিভক্ত করে ফায়দা হাসিল করছেন।