স্কুলের গন্ডি না পেরোনো ছাত্ররাই পরিচালনা করছে ‘ডট গ্যাং’ বা ‘ডট সুপ্রমেসি’ নামে কিশোর গ্যাং। বয়সে ১৬ পার না হতেই এরা সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আবার সংঘবদ্ধ অপরাধের চিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দিচ্ছে তারা। ছুরি হাতে নিয়ে রাস্তায় হাটার ভিডিও ও আগ্নেয়াস্ত্রের ভিডিও নিজেদের টাইমলাইনে শেয়ার করেছে ডট গ্যাংয়ে সদস্যরা।
মূলত অন্য কিশোর গ্যাংয়ের সামনে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে এমন পোস্ট দিতো তারা।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরীর চকবাজারে বালি আর্কেড শপিং সেন্টারের সামনে থেকে ওই গ্যাংয়ের সাত কিশোরকে আটক করা হয়। তাদের প্রত্যেকের বয়স ১৬ বছর।
চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন জায়গায় ইভটিজিং, ছিনতাই, দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছিল এই কিশোর গ্যাং সদস্যরা। কোচিং সেন্টারে পড়তে গিয়ে চকবাজার-জামালখান এলাকায় বিভিন্ন আড্ডায় যোগ দিয়ে তারা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
আটকরা হলেন হোসাইনুল আমিন মিম (১৬), সামিউল ইসলাম (১৬), আহনাফ শাহরিয়ার (১৬), শরিফুল ইসলাম (১৬), শানিপ শাহীদ (১৬), মাশহাদ সিদ্দিকী (১৬) ও আবু তারেক (১৬)।
এদের মধ্যে চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মুসলিম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং নাসিরাবাদ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দু’জন করে ছাত্র আছে।
চক্রের নেতৃত্ব দেওয়া ‘গ্যাং লিডার’ হোসাইনুল আমিন মিম (১৬) চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। এর আগে নগরীর চকবাজার থানায় তার বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হওয়ার পর মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায়। গ্যাংয়ের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো মিম। তার বাবা একজন খ্যাতিমান চিকিৎসক।
আটক বাকি ছয়জনের মধ্যে পদ্মা অয়েলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিইপিজেডের একটি কারখানার ব্যবস্থাপক, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, প্রবাসী, মুদি দোকানি এবং অটোরিকশা চালকের সন্তান রয়েছে।
র্যাব চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম জানান, সম্প্রতি র্যাব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নগরীতে ৫০টিরও বেশি কিশোর অপরাধী চক্র শনাক্ত করে। এদের মধ্যে ডট গ্যাং-কে ফেসবুকে নজরদারির মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। এই চক্রটি মূলত দেড় বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে তারা ‘ছুরি আকিবের’ গ্রুপ নামে একটি চক্রের সঙ্গে ছিল। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের জেরে ডট গ্যাং সৃষ্টি হয়, যা ডট সুপ্রিমেসি নামেও ফেসবুকে পরিচিত।
ডট গ্যাংয়ে ৪০ জনেরও বেশি সদস্য থাকলেও সক্রিয় ৮-৯ জনকে চিহ্নিত করতে পেরেছে র্যাব, যাদের মারামারিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে প্রায়ই দেখা যায়। গত দেড় বছরে এই চক্রের সদস্যরা চকবাজার থেকে জামালখান পর্যন্ত এলাকায় ১২-১৪টি মারামারির ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের হাতে ছুরি, চাকু ও হকিস্টিক দেখা গেছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। তারা মূলত চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ইভটিজিং, আধিপত্য বিস্তার এবং সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে মারামারি করে।
র্যাব অধিনায়ক বলেন, ‘গ্যাং লিডার ফেসবুকে ডট গ্যাং গ্রুপের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। অস্ত্র হাতে দৌড়াদৌড়ি, মারামারির ছবি-ভিডিও শেয়ার করে। কিশোর বয়সের হিরোইজম বা বীরত্ব প্রদর্শনের প্রবণতা থেকে তারা ফেসবুকে বিষয়গুলো শেয়ার করে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে যার নিয়ন্ত্রণও আবার লিডারের হাতে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চকবাজার থেকে জামালখান পর্যন্ত চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের আশপাশে বেশ কয়েকটি আড্ডাস্থল আছে। একেকটি আড্ডাস্থলের নিয়ন্ত্রণ একেকজন তরুণের হাতে। এদের মধ্যে মাশফিকুল ইসলাম রাফি, অন্তু বড়ুয়াসহ আরও কয়েকজন এসব আড্ডার নিয়ন্ত্রক।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের মজুমদার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বুধবার সকালে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।’