‘চকবাজারে আসছে আজরাইল’— ফোনালাপে টিনুর ভাই শিপু!

চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকার আলোচিত-সমালোচিত কথিত যুবলীগ নেতা নুর মোস্তাফা টিনু র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছেন তার ভাই ছাত্রদল নেতা নুর মোহাম্মদ শিপু। টিনুর গ্রেপ্তারে এলাকার বেশ কয়েকজন সরকারদলীয় নেতাকর্মীর হাত রয়েছে ইঙ্গিত করে অন্তত পাঁচজনকে খুন করার নির্দেশও দিয়েছেন শিপু। এই পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের নাম স্পষ্ট করে উল্লেখ করলেও দুজনের নামে ব্যবহার করেছেন নিজস্ব ‘সাংকেতিক কোড’। বর্তমানে পলাতক রবিন নামে শিপুর এক অনুসারীর সঙ্গে টেলিফোনে দেওয়া এই নির্দেশের অডিও রেকর্ড চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে।

কী আছে অডিওতে?
ফোনালাপের অডিওতে শিপুকে বলতে শোনা যায়, ‘সুখের ঘরে দুঃখের আগুন যে লাগাইছে সেই আগুনে ছারখার হবে টুপিওয়ালাপাড়ার বইশ কালা মইশ। মুখোশধারী সমাজের কিছু নামাজ পড়া মানুষ। এবং সুসংবাদ শিগগিরই আসছে। কাপনের কাপড় নিয়ে আজাইরাল শিগগিরই আল্লাহর থেকে অনুমতি নিয়ে…। হয়তো দুই একটা উইকেট পড়তেও পারে। শিগগিরই ১৫-২০ দিন এক মাসের মধ্যে আজারাইল ঢুকবে টুপিওয়ালা পাড়ার ভেতরে। কবজ করবে জান। জান কবজ করে নিয়ে যাবে। হয়তো রাতে খাওয়া দাওয়া করে পোলাও মাংস খেয়ে সকালে উঠে দেখবে যে ইনালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহে রাজেউন। ছুম্মা আমীন।’

ফোনালাপে যে টুপিওয়ালাপাড়ার কথা বলা হয়েছে সেটি হচ্ছে পাঁচলাইশ থানার চকবাজার ওয়ার্ডের মুন্সী পুকুর পাড় এলাকার একটি পাড়ার নাম। যেটি টিনু ও শিপুর বাড়ির সন্নিকটে। যাদের খুন করতে হবে উল্লেখ করে ফোনালাপে শিপু আরও বলেন, ‘চোরা সিরাইজ্জেও পোয়া মিট্ট, মজিবুর রহমান রাসেল, আরিফুল ইসলাম মাসুদ, জসিম ফরহাদ মোট জসিম।’

এ সময় ফোনের অপর প্রান্তে থাকা রবিনকে খুন করা সওয়াবের কাজ উল্লেখ করে শিপু বলেন, ‘সওয়াব কামাও। পাপ যখন করেছি, পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। পাপ আমিও করেছি, তুমিও করেছ। কেউ বলতে পারবে না আমরা ভালো ছিলাম। মানুষের পোন্দে ছুরি মারছি, পুন্দে লাতি মারছি, ঘুষি মারছি। পাপ বাপকেও ছাড়ে না। সেজন্য জেলে গেছি। আমি নিজের দোষ নিজেকে দিচ্ছি, কাউকে দোষ দিচ্ছি না। তুইও কিছু পাপ করেছিস। সেজন্য তুই এসব করে সওয়াব কামাও।’

এক পর্যায়ে শিপু বলেন, ‘সামনে তুই বাচ্চা কাচ্চার বাপ হবি। তোর বাচ্চা যেন আমার আর তোর মত না হয়। বাচ্চাটি যদি হয় তাকে মাদরাসা হাফেজে মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দিস। তাকে হিস্টরি বলবি আমার। না বলে আমি শয়তান আর এক দুষ্টু ছেলের সাথে আমার জীবনটা মিলিয়ে ছারখার করে দিছি। সে আর কেউ নয়, শিপন বাহিনীর শিপন। বুঝছস, তোকে আমি অনেক দেখতে পারি। আমার জন্য তোর লাইফটা আজকে নষ্ট। সেজন্য আমি দায়ী। কারণ আমি যদি সেদিন তোকে বিপদে না ফেলতাম তোর নামটা না বলতাম তাহলে তোর আজকে এই বিপদ হতো না।’

তবে এই ফোনালাপ সম্পর্কে জানার জন্য ছাত্রদল নেতা নুর মোহাম্মদ শিপুর মোবাইলে কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন না ধরায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দীন বলেন, ‘এ ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। আর শিপু বা টিনুর বাসাও পড়েছে পাঁচলাইশ থানা এলাকায়। তবে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চকবাজার থানায় রয়েছে।’

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফোন দেওয়া হলে অপর প্রান্ত থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কথিত যুবলীগ নেতা টিনুর ছোট ভাই ছাত্রদল নেতা শিপু। ওই সময় তাকে পাঁচলাইশ থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে দলবলসহ থানা ঘেরাও করেছিলেন টিনু। দুই ভাই দুই দল করলেও চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী ও আধিপত্য বিস্তারের প্রশ্নে দুজনেই এক ও অভিন্ন গ্রুপ পরিচালনা করে থাকেন।

এমনকি বর্তমানে টিনু র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকায় টিনুর অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণ করছেন শিপু নিজেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর করা তালিকায় ২০ সহযোগীর অন্যতম হিসেবে টিনুর ভাই শিপুর নামও উঠে এসেছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!