চকবাজারের টিনু ১ দিনের জন্য র‌্যাবের হাতে

চকবাজার, পাঁচলাইশ ও বাকলিয়া এলাকার ত্রাস ও তথাকথিত যুবলীগ নেতা নুর মোস্তাফা টিনুকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র‌্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। আদালতের আদেশে বুধবার (১৩ নভেম্বর) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য টিনুকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে র‌্যাব। র‌্যাবের আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত টিনুর একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। র‌্যাব ৫ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল।

বিষয়টি নিশ্চিত করে র‌্যাবের অপারেশন অফিসার মো. মাশকুর রহমান চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নুর মোস্তফা টিনুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন আদালতে। আদালত শুনানি শেষে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। বুধবার তাকে র‌্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১২টায় নগরীর পাঁচলাইশ এলাকা থেকে টিনুকে একটি পিস্তল ও পাঁচ রাউন্ড গুলিসহ আটক করে র‌্যাব। পরে টিনুকে সঙ্গে নিয়ে তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে একটি শটগান ও ৬৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে র‌্যাব। পরদিন অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করে টিনুকে নগরীর পাঁচলাইশ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়।

২৩ সেপ্টেম্বর টিনুকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত ২৬ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করে টিনুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ২৬ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে অত্যাধুনিক একে-২২ অস্ত্রসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়ে প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসেন টিনু। সেই মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগও করেছিলেন তিনি। গত প্রায় দেড় যুগে তার বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় একটি বিস্ফোরক মামলা ছাড়া কেউ লিখিত অভিযোগ করারও সাহস পায়নি। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে তার ভাই শিপুর প্রভাবে আলোচিত টিনু ছিলেন নিরাপদ।

চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার, পাঁচলাইশ ও বাকলিয়া এলাকার তিনি আলোচিত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী আছে, আছে কিশোর গ্যাংও। এলাকার কোচিং সেন্টার, ক্লিনিক, প্রাইভেট হাসপাতালসহ যাবতীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মূলত তার কাছে জিম্মি বলে অভিযোগ রয়েছে।

নুর মোস্তফা টিনু ছাত্রলীগের চকবাজার ওয়ার্ড সভাপতি ছিলেন। সেই ওয়ার্ড এখন থানা। তেমনি তার ভাই নুর মোহাম্মদ শিপুও চকবাজার ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি। শিপু নিজেকে চকবাজার থানা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দাবি করেন। মূলত চকবাজার এলাকায় প্রশাসনিক থানা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে স্থানীয় এ নেতারা ‘প্রেস্টিজ’ বাড়াতে নিজেদের থানা পর্যায়ের নেতা দাবি করছেন। তাদের আরেক ভাই মোহাম্মদ সেলিম জামায়াতের সঙ্গে সক্রিয়। ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ নাকি বিএনপি সেটা এই পরিবারের কাছে কোনো বিষয় নয়। সব দলের নেতা এরাই।

২০১৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ৬ লাখ টাকার ছিনতাইয়ের ঘটনায় আটক হয়েছিলেন শিপু। প্রথমে ছিনতাইয়ের বিষয়টি টিনু ও শিপু অস্বীকার করে ষড়যন্ত্র বললেও সিসি ক্যামেরা ফুটেজে শিপুকে ছিনতাইয়ে অংশ নিতে দেখা যায়। আটক হওয়ার পর শিপু আদালতে স্বীকারোক্তিও দিয়েছিল ছিনতাইয়ে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে। সেই মামলায় কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হয়ে বেপরোয়াই থাকেন শিপু।

সম্প্রতি ‘চকবাজার আসছে আজরাইল’ শিরোনামে অডিও ক্লিপ ভাইরাল হলে আলোচনায় আসেন শিপু। পরে পাঁচলাইশ থানার চকবাজার ওয়ার্ডের টুপিওয়ালা পাড়ার বাসিন্দা ছাত্রলীগ নেতা মুজিবুর রহমান রাসেলকে সরাসরি হত্যার হুমকি দেন তিনি। হত্যার হুমকি পেয়ে চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির ছেলে রাসেল চান্দগাঁও থানায় এ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

এর আগে চকবাজারের ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ ভয়ভীতি প্রদর্শন, চাঁদা দাবি, মানহানিসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে টিনুর অনুসারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় টিনুর অনুসারী অনিন্দ্য বৈদ্য সানি, রবিউল ইসলাম রাজু, অভিক দাস গুপ্ত, প্রদীপ আচার্য্য, শাহাদাত হোসেন প্রকাশ ল্যাংড়া রিফাত, নাসির উদ্দিন প্রকাশ লম্বু নাসির, আজগর আলী মানিক ও দীপু তালুকদারকে আসামি করা হয়। আদালত নগরীর পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলার তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।

২৩ সেপ্টেম্বর অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া মামলায় র‌্যাব টিনুকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ওই মামলা তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করেছিল র‌্যাব। র‌্যাবের আবেদনের প্রেক্ষিতে পাঁচলাইশ থানা থেকে মামলার তদন্তভার র‌্যাবের হাতে হস্তান্তর হয়েছে।

এফএম /এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!