ঘরেই চিকিৎসা বাকলিয়ার ডেঙ্গু রোগীর, নজর রাখছেন সরকারি ডাক্তার

করোনার পরীক্ষা করাতে এসে ধরা পড়ল ডেঙ্গু

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার— এই দুই দিনে ২৮ জনের ডেঙ্গু পরীক্ষায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে একজন। এই একজনসহ চট্টগ্রাম জেলায় এখন পর্যন্ত মোট ১৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর জানা গেলে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে।

চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে টেস্টে ডেঙ্গু আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়া রোগীটি ১৬ বছর বয়সী কিশোর। বাকলিয়া এলাকার ওই রোগী বর্তমানে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে জেনারেল হাসপাতাল থেকে নিয়মিত তার চিকিৎসার বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে।

জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ তানজিমুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, তার জ্বর ছিল ১০৪ ডিগ্রি, সাথে মাথা ব্যথা। চোখ ব্যথাও ছিল। তবে সে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য জেনারেল হাসপাতাল এসেছিল। দায়িত্বরত চিকিৎসকের সন্দেহ হওয়ায় তার ডেঙ্গু টেস্টও করা হয়। পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে যে তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত। তবে তার কোভিড টেস্ট নেগেটিভ আসে।

তিনি বলেন, ‘ওই রোগীর রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ পাওয়া গেছে ১ লাখ ৬০ হাজার। এখন বাসাতেই তার চিকিৎসা চলছে। আমরা নিয়মিত ফোন করে তার খোঁজখবর নিচ্ছি।’

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) ও শুক্রবার (৬ আগস্ট)— এই দুই দিনে মোট ২৮ জনের ফ্রি ডেঙ্গু টেস্ট করে একজন শনাক্ত হয়েছে। টেস্টের পরিমাণ আরও বাড়ানোর চেষ্টা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান এই চিকিৎসক।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ১৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার তথ্য রয়েছে তাদের কাছে। তবে এই হিসাবটি শুধুমাত্র মহানগরের। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন। এদের মধ্যে গত ৩০ জুলাই মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান দেওয়ানহাট সিটি করপোরেশন কলেজের এইচএসসির ছাত্রী নাফিসা জাহান হৃদি। অন্যদিকে গত ৫ জুলাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান লালখানবাজার এলাকার এক গৃহবধূ।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই সময়টায় প্রতি বছরই ডেঙ্গু হয়। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে করোনার সাথে ডেঙ্গু পরিস্থিতিরও অবনতি হলে এটা সামাল দেওয়া খুব কঠিন হবে। এক্ষেত্রে করোনা সচেতনতার মত মানুষকে ডেঙ্গু মোকাবেলাতেও সতর্ক হতে হবে। বাড়ির আশপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আর কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না।’

এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর ৯৯টি এলাকার ৫১টি স্পট এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ৬টিসহ মোট ৫৭টি স্পট থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ১৫টি স্পটে শতভাগ এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তারা বলেন, এসব লার্ভা সংগ্রহ করে কিছুদিন রাখার পরে মশার উৎপত্তি হয়। এ থেকে গবেষকরা বুঝতে পারেন, কোন্ কোন্ পজিশনে মশার লার্ভার মধ্যে এডিস মশার উপস্থিতি থাকে। গবেষণাকালে বাড়ির ফুলের টব, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের পাত্র, দোকানের ব্যাটারির সেল ও টায়ার এবং রাস্তার পাশের পাইপে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মিলেছে এডিস মশার লার্ভা। এসব এলাকা থেকে পাওয়া লার্ভার শতভাগই ছিল এডিস মশার।

এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বুধবার (৪ আগস্ট) থেকে শুরু করেছে ৩০ দিনের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম। কর্মসূচির আওতায় প্রতিদিন চারটি ওয়ার্ডে ১৬৬ জন শ্রমিক মশার লার্ভা ধ্বংসকারী কীটনাশক ‘লার্ভিসাইড’ ও অ্যাডাল্টিসাইড ছিটাচ্ছেন বলে জানানো হয়েছে।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!