ঘন ঘন ভূমিকম্পের বড় বিপদ, টেকটোনিক প্লেটে চট্টগ্রাম ঘিরে বিপজ্জনক ভূফাটল লাইন

একটি ফাটল চট্টগ্রাম হয়ে চলে গেছে আন্দামান

পর পর দুদিন দুটি ভূমিকম্পেরই উৎপত্তিস্থল যেখানে, বাংলাদেশে তার সবচেয়ে কাছাকাছি এলাকা হচ্ছে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম। এ কারণে দুই ভূমিকম্প সবচেয়ে প্রবলভাবে অনুভূত হয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলেই। দুই ভূমিকম্পেরই উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের প্লেট বাউন্ডারি লাইনে একটি মাইক্রোপ্লেটের কাছাকাছি বার্মা ‘সেগিং ফল্টে’। ওই অঞ্চলটি খুবই ভূমিকম্পপ্রবণ। ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানীরা এই ফল্টলাইনে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা প্রকাশ করছেন। যাতে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে চট্টগ্রামের জন্যও।

শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ওই ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ২। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের চিন রাজ্যের রাজধানী হাখা শহরের ২০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে ১৮৪ কিলোমিটার পশ্চিমে চট্টগ্রামে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয় প্রবলভাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) ইন্টার‌অ্যাকটিভ মানচিত্রে দেখা গেছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভারতের মিজোরাম প্রদেশ ও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের কাছাকাছি হওয়ায় সেখানে ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে।

ঘন ঘন ভূমিকম্পের বড় বিপদ, টেকটোনিক প্লেটে চট্টগ্রাম ঘিরে বিপজ্জনক ভূফাটল লাইন 1

এর মাত্র ৩৩ ঘণ্টা ব্যবধানে আবারও ভূমিকম্প অনুভূত হল চট্টগ্রামে। আগের দিনের তুলনায় শনিবার (২৭ নভেম্বর) বিকেল ৩টা ৪৭ মিনিটে ১৬ সেকেন্ডের এ ভূমিকম্পটি ছিল মৃদু— রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ২। এই ভূমিকম্পটির ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থলও মিয়ানমার-ভারত সীমান্তে। শুক্রবারের ভূমিকম্পের কাছাকাছি এলাকাতেই সেটি আঘাত হানে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমারের প্লেট বাউন্ডারি লাইনে একটি মাইক্রোপ্লেটের কাছাকাছি বার্মা ‘সেগিং ফল্টে’ ভূমিকম্প দুটো হয়েছে। সাম্প্রতিক দুই ভূমিকম্পেরই উৎসস্থল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে কাছাকাছি। এ কারণে দুই ভূমিকম্পই সবচেয়ে প্রবলভাবে অনুভূত হয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলেই।

ভূ-তত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা অনেক দিন ধরেই আশঙ্কা করে আসছেন, মৃদু হালকা কিংবা মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের অশনি সংকেত বহন করে। ভূ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, মাঝেমধ্যে হালকা মাত্রার ভূকম্পন-প্রবণতা এবং টেকটোনিক প্লেটের সঞ্চালনের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ভূ-তাত্ত্বিককরা বাংলাদেশ ও আশপাশের অঞ্চলজুড়ে অদূর ভবিষ্যতে শক্তিশালী মাত্রায় ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন।

বাংলাদেশ ও ভারত, মিয়ানমার, নেপালসহ আশপাশের বিশাল অঞ্চল সুপ্ত হলেও ভূমিকম্পের বলয়ে বা জোনে অবস্থিত। ভূমিকম্পের আশঙ্কাপূর্ণ দীর্ঘ ফাটল লাইন বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ঢাকার আশপাশ এলাকা, সিলেট, রংপুর, দিনাজপুরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে গেছে। বঙ্গোপসাগর উপকূলের কাছাকাছি এলাকাও ভূমিকম্প বলয়ে অবস্থিত।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্রের এক জরিপ রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ভূ-স্তরের পাটাতনে (টেকটোনিক প্লেট) ফাটলের কারণে ইউরোশিয়ান ও ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটের ভূমিকম্পের জোনের মধ্যেই রয়েছে চট্টগ্রাম। এ প্লেট দুটি অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ কারণে ঘন ঘন হালকা থেকে মাঝারি মাত্রায় ভূমিকম্প হচ্ছে।

ভূ-তত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের গবেষণা বলছে, ভূমিকম্পে চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, ঢাকা ও কুমিল্লা বেল্ট বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ভূ-পাটাতনের (টেকটোনিক প্লেট) একটি ফাটল বা ফল্ট লাইন চট্টগ্রাম সমুদ্র উপকূল হয়ে আন্দামান পর্যন্ত চলে গেছে। অনেকগুলো ভূ-ফাটল লাইন, ভূমিকম্পে উৎসস্থল (ইপি সেন্টার) চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে কাছাকাছি অবস্থানে সক্রিয় রয়েছে।

অতীতে বাংলাদেশসহ আশপাশ অঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৭ থেকে ৮ মাত্রারও অধিক পয়েন্টে প্রচণ্ড শক্তিশালী ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, সচরাচর ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে ৫০ কিংবা ১০০ অথবা ১৫০ বছর পর পর শক্তিশালী ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি ঘটে থাকে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!