গ্রুপিংয়ের আগুনে পুড়ছে চট্টগ্রাম নগর যুবলীগ, একাট্টা চারে কোণঠাসা বাচ্চু

চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহবায়কের সঙ্গে চার যুগ্ম আহবায়কের দ্বন্দ্ব এবার প্রকাশ্যে উঠে এলো। যুগ্ম আহ্বায়কেরা জোট বেঁধেছেন এবার আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে। নগরজুড়ে যুবলীগ এখন চার আহবায়কের নেতৃত্বে পালন করছে দলীয় কর্মসূচি। অন্যদিকে ছাত্রলীগের গুটিকয়েক নেতাকর্মী নিয়ে অনেকটা ‘একঘরে’ আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু।

বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর দারুল ফজল মার্কেটের দলীয় কার্যালয়ে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে বাদ দিয়েই সভা আহবান করে যুবলীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এ সভায় নগর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ নেতাসহ বেশিরভাগ নেতাকর্মী উপস্থিত হন। মহিউদ্দিন বাচ্চুকে এই সভায় আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনো দাওয়াত দেওয়া হয়নি। তবুও ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক নেতা নিয়ে সভাস্থলে হাজির হন বাচ্চু। এতে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, নগর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত কচিসহ আরও কয়েকজনের উপস্থিতি দেখে যুবলীগের নেতারা তো বটেই, কর্মীরাও বিস্মিত হন।

এ সময় যুবলীগের নেতাকর্মীরা বাচ্চুর বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। শুরু হয় স্লোগান ও পাল্টা স্লোগান। হট্টগোল বেঁধে গেলে সভার আয়োজকরা দ্রুত সভা সমাপ্তি ঘোষণা করে।

জানা গেছে, নগর যুবলীগের চার যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম ও মাহবুবুল হক সুমন— এক প্লাটফর্মে এসে রাজনীতি শুরু করে। তাদের দাবি, নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু সর্বপ্রথম যুবলীগের ব্যানারে বিভক্ত কর্মসূচি পালন শুরু করেন। সর্বশেষ বুধবার (২১ অক্টোবর) তিনি যুবলীগের ব্যানারে নিজ উদ্যোগে কর্মসূচি পালন করেছেন। যেখানে অন্য যুগ্ম আহ্বায়কদের কাউকে দাওয়াতই দেননি।

তাই এই চার শীর্ষ নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চুকে বাদ দিয়ে বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) আয়োজন করে অনুষ্ঠান। বিনা দাওয়াতে সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে হট্টগোলের চেষ্টা করেন মহিউদ্দিন বাচ্চু। এ সময় সভা সংক্ষিপ্ত করে সংঘাত এড়ানোর চেষ্টা করেন ফরিদ মাহমুদরা।

এ বিষয়ে নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নগর যুবলীগের আহ্বায়ক সাহেব দীর্ঘদিন যুবলীগের ব্যানারে নিজে নিজে কর্মসূচি পালন করেন। সর্বশেষ একদিন আগেও করেছেন। আমরা সেখানে দাওয়াত পাইনি। তাই যাইনি। আজকে কর্মসূচি ছিল আমাদের। আমরা তাকে এখানে আসতে বলিনি। এর আগেও আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন, আওয়ামী লীগের প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান খান কায়সারের মৃত্যুদিবসসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। আজকের গ্রোপ্রামে বাচ্চু সাহেব যুবলীগ করে না— এমন ছোট ভাইদের সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। এসে উনি তাদের দিয়ে হট্টগোল সৃষ্টি করেছেন। আমরা সংঘাত এড়াতে সভা সংক্ষিপ্ত করেছি।’

যুগ্ম আহ্বায়কদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, ‘দলীয় কর্মসূচির দাওয়াত পেয়েই আমি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। আর আলাদা গ্রোপ্রামের বিষয়টি হলো করোনায় আমি নিজ উদ্যোগে ত্রাণ দিয়েছি। দলের নির্দেশনাও ছিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। তখন অনেকেই ঘর থেকে বের হননি। আমার কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেননি। এটাতে আমি দোষের কিছু দেখি না। আর হট্টগোল সৃষ্টির বিষয়টি সত্য নয়। স্লোগান হলো মিটিংয়ের প্রাণ। মিটিং সমাবেশ হবে, সেখানে স্লোগান হবে না— তা কিভাবে হয়? আমার সাথে যারা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে সবাই সংগঠনের। যেহেতু কমিটি নেই, তাদের পদ-পদবির পরিচয় নেই। কিন্তু তারা ছাত্র রাজনীতি করে আসা ছোট ভাই।’

আজ থেকে সাত বছর আগে নগর আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী মহিউদ্দিন বাচ্চুকে আহ্বায়ক এবং দেলোয়ার হোসেন খোকা, দিদারুল আলম, ফরিদ মাহমুদ ও মাহবুবুল হক সুমনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ২০১৩ সালের ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় যুবলীগ। তিন মাসের জন্য গঠিত ওই আহ্বায়ক কমিটি সাত বছর পার করলেও নগর যুবলীগের অন্য কোনো নেতা পাননি পদপদবির পরিচয়। নগর যুবলীগের এই পাঁচ শীর্ষ নেতার বিভক্তির প্রভাব আছে থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়েও। গত বছর লালদীঘিতে নগর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পণ্ড হয়েছিল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!