গ্রাহক পণ্য হাতে পেলেই বিলের টাকা পাবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার জারি

গ্রাহক পণ্য হাতে পাওয়ার পরই বিলের টাকা পাবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। এর আগ পর্যন্ত টাকা জমা থাকবে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে। পণ্য পাওয়ার পর গ্রাহক সন্তুষ্ট হয়ে সম্মতি দেওয়ার পরই টাকা দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে।

বুধবার (৩০ জুন) এ ধরনের বিভিন্ন শর্ত ও নীতিমালা সম্বলিত একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ওই সার্কুলারে বলা হয়েছে, ভুল তথ্য দিয়ে বিলের টাকা ছাড় করলে পরবর্তীকালে ওই প্রতিষ্ঠান সকল পরিশোধ সেবা পাওয়ার যোগ্যতা হারাবে। বর্তমানে ব্যাংক/ পিএসও এবং ই-ওয়ালেট সেবা প্রদানকারী এমএফএস/ পিএসপিগুলো (পরিশোধ সেবাদানকারী) পরিশোধ সেবা প্রদান করছে।

বুধবারই বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সার্কুলার দেশের সকল তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস), পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডর (পিএসপি) ও পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটরের (পিএসও) কাছে পাঠানো হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, গ্রাহকের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করার পরও অনেক ক্ষেত্রেই পণ্য পেতে গ্রাহকের বিলম্ব হচ্ছে বা পণ্য পাচ্ছেন না বিধায় গ্রাহক ও পরিশোধ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে— যা ডিজিটাল কমার্স সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর জনগণের আস্থার সংকট তৈরি করছে। এ খাতের যথাযথ বিকাশ, পরিশোধ সেবা প্রদানকারীদের ঝুঁকি নিরসন, গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ ও ডিজিটাল কমার্সের উপর জনগণের আস্থা ধরে রাখার লক্ষ্যে ডিজিটাল কমার্স সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের অনুকূলে অর্থ ছাড়করণের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত নির্দেশনা প্রদান করা হলো—

১. খাদ্য, মুদি, ঔষধ, রাইড শেয়ারিং, মোবাইল রিচার্জ, সার্ভিস ডেলিভারি বা ইউটিলিটি, এডুকেশন ফি, হোটেল বুকিং, টিকেটিং (বাস, এয়ার, ট্রেন, লঞ্চ) কিংবা অনুরূপ নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জরুরি পণ্য/সেবা সাথে সাথে বা অনধিক ৫ (পাঁচ) দিনের (পণ্য/সেবার ধরন ও স্থান বিবেচনায়) মধ্যে সরবরাহকারী ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ লেনদেনের ঝুঁকি, গ্রাহকসেবার মান, পণ্য সরবরাহ সম্পর্কে সন্তুষ্টি এবং পারস্পরিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক ইত্যাদি পর্যালোচনা করে স্বীয় বিবেচনায় বিদ্যমান সেটেলমেন্ট প্রক্রিয়া অব্যহত রাখতে পারবে।

২. নিজস্ব উৎপাদিত পণ্য/সেবা বা দোকান বা শো-রুম (এইরূপ উদ্দেশ্যে ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্ত) এর মাধ্যমে পণ্য/সেবা বিক্রয়ের পাশাপশি ডিজিটাল কমার্স ব্যবস্থায়ও পণ্য/সেবা বিক্রয় করে এবং বিক্রিত পণ্য/সেবা সাথে সাথে বা অনধিক ৭ (সাত) দিনের (পণ্য/সেবার ধরন ও স্থান বিবেচনায়) মধ্যে সরবরাহ করে থাকে এইরূপ ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ লেনদেনের ঝুঁকি, গ্রাহকসেবার মান, পণ্য/সেবা সরবরাহ সম্পর্কে সন্তুষ্টি এবং পারস্পরিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক ইত্যাদি পর্যালোচনা করে স্বীয় বিবেচনায় বিদ্যমান সেটেলমেন্ট প্রক্রিয়া অব্যহত রাখতে পারবে।

৩. ক্রমিক নং ১ ও ২ এ বর্ণিত ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্যান্য ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষেত্রে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ মার্চেন্ট পেমেন্টের ক্ষেত্রে গ্রাহকের নিকট হতে সংগৃহীত অর্থ নিজস্ব সেটেলমেন্ট হিসাবে ধারণ করবে এবং সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে উক্ত অর্থ ছাড়করণের জন্য নিম্নবর্ণিত নির্দেশনা অনুসরণ করবে—

ক) সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহককে পণ্য/সেবা সরবরাহ/প্রদানের পর অর্থ ছাড়করণের জন্য গ্রাহকের নাম, মোবাইল নম্বর এবং সরবরাহকৃত ক্রয়াদেশের বিবরণসহ এ সংক্রান্ত একটি তালিকা ব্যাংক/ পিএসও এবং ই-ওয়ালেট সেবা প্রদানকারী এমএফএস/ পিএসপি (পরিশোধ সেবাদানকারী) প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করবে।

খ) ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত ক-এ বর্ণিত তালিকা হতে দৈবচয়ন ভিত্তিতে গ্রাহকের পণ্য/সেবা প্রাপ্তির বিষয়ে সন্তুষ্ট হওয়া সাপেক্ষে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান অর্থ ছাড় করবে এবং এ সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করবে।

গ) ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পণ্য/ সেবা সরবরাহের বিপরীতে অর্থ ছাড়করণের জন্য দাবিকৃত তালিকার কোন গ্রাহকের পণ্য/ সেবা সরবরাহ না হওয়ার বিষয়ে পরবর্তীতে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান-কে ভুল তথ্য প্রদানের বিষয়ে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সাথে সাথে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ প্রদান করবে এবং নোটিশ প্রাপ্তির অনধিক ১০ (দশ) দিনের মধ্যে উক্ত প্রতিষ্ঠান জবাব প্রদান করবে।

ঘ) ভুল তথ্য প্রদানের বিষয়ে ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান সন্তোষজনক কারণ প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান-কে পরিশোধ সেবা প্রদান স্থগিত করতে হবে এবং তালিকাভুক্ত করে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক-কে অবহিত করতে হবে। এ ধরনের তালিকাভুক্ত ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান পরবর্তীতে সকল প্রকার পরিশোধ সেবা প্রাপ্তির যোগ্যতা হারাবে।

ঙ) ভবিষ্যতে অর্থ ছাড়করণের প্রক্রিয়াটি অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বীয় বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করবে, যেখানে গ্রাহক কর্তৃক পণ্য/ সেবা সরবরাহ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিতকরণের বিষয়টি অন্তুর্ভূক্ত থাকবে।

৪. ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান (মার্কেটপ্লেস) কর্তৃক ইস্যুকৃত ভাউচার এর বিপরীতে পণ্য ক্রয়/ সেবা গ্রহণ না করা পর্যন্ত অর্থ ছাড় করা যাবেনা। ভাউচার ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাবীকৃত খরচের অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে সন্তুষ্ট হয়ে খরচের সমপরিমাণ অর্থ ছাড় করা যাবে।

৫. পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গ্রাহকের নিকট হতে সংগৃহীত এরূপ অর্থ মার্চেন্ট দায় পরিশোধ ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না এবং অপরিশোধিত মার্চেন্ট দায়ের সমপরিমাণ অর্থ এ হিসাবে সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

৬. রিফান্ড বা চার্জব্যাকের ক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিশোধিত মাধ্যমেই উক্ত অর্থ ফেরত প্রদান করতে হবে এক্ষেত্রে কোন চার্জ প্রযোজ্য হলে তা ডিজিটাল কমার্স সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হবে।

৭. অত্র সার্কুলারের নির্দেশনা পরিপালনের জন্য পরিশোধ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কোনরূপ চার্জ/মাশুল আরোপ করতে পারবে না।

৮. এছাড়া গ্রাহক কর্তৃক পণ্য/ সেবা প্রাপ্তির পর পরিশোধের (Cash on Delivery/ Payment on Delivery) বিদ্যমান পদ্ধতি অব্যাহত থাকবে।

৯. বর্ণিত নির্দেশনাসমূহ শুধুমাত্র ব্যক্তি গ্রাহক পর্যায়ের লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!