গ্রামে গ্রামে প্ল্যাকার্ড হাতে চবি ছাত্রের ব্যতিক্রমী প্রচারণা

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরিতে ব্যতিক্রমী প্রচারণা চালিয়ে আলোচনায় এসেছেন আব্দুল ওয়াহেদ নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। করোনা মোকাবেলায় সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে সাইকেল ও মোটরসাইকেলে করে বাঁশখালীতে এই প্রচারণা চালান ওয়াহেদ। ওয়াহেদের এই ব্যতিক্রমী প্রচারণা নজর কেড়েছে সবার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তাকে।

ওয়াহেদের প্রচারণার কিছু ছবি চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে৷ এসব ছবিতে হাতে লেখা প্ল্যাকার্ডে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় করণীয় বিষয়গুলো লিখে সাইকেল ও মোটরসাইকেলে তা ঝুলিয়ে প্রচারণা চালাতে দেখা যায় তাকে।

আব্দুল ওয়াহেদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার কাছে থাকা এসব প্ল্যাকার্ডে লিখা ছিল- ‘সাবান দিয়ে হাত ধৌত করুন’, ‘মাস্ক ব্যবহার করুন’, ‘জনসমাগম এড়িয়ে চলুন’, ‘কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করুন’, ‘বিনা প্রয়োজনে বাইরে যাবেন না, হাত মেলানো ও কোলাকুলি করবেন না’, ‘প্লিজ সতর্ক হোন’, ‘দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াবেন না’।

প্রচারণা চালাতে গিয়ে যাতে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষিত নিয়মগুলো ভঙ্গ না হয় এই বিষয়টি মাথায় রেখে এভাবে প্রচারণা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ওয়াহেদ।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে সারা বিশ্বে যখন আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তখন গ্রামে ফিরে দেখি সাধারণ মানুষের এ বিষয়ে খুব একটা ধারণা নেই। তখন বিষয়টি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নিই।’

‘ভেবে দেখলাম আমি যদি লিফলেট নিয়ে প্রচারণা চালাই তাহলে সেটা একদমই গতানুগতিক হবে। কিন্তু হাতে লিখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে যদি রাস্তায় দাঁড়াই, তবে মানুষ কিছুটা কৌতুহলী হবে। মূলত সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার স্বার্থেই আমি হাতে লিখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রচারণা চালানোর সিদ্ধান্ত নেই।’ বলেন ওয়াহেদ।

একা প্রচারণা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দলবদ্ধ প্রচারণা চালালে, আমি যে সচেতনতা তৈরি করতে চাচ্ছি- নিজেই সেটি মানছি না এমন উদাহরণ তৈরি হতো। এজন্য আমি একা একা প্রচারণা চালাই। প্রথমদিন ২৪ মার্চ সাইকেল নিয়ে শিলকূপসহ পাশের তিনটি ইউনিয়নে প্রচারণা চালাই। পরের দিন ২৫ মার্চ আমি মোটরবাইক নিয়ে বাঁশখালীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতেও প্রচারণা করেছি।’

প্রচারণার সময়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপের শিকার হতে হয়েছে জানিয়ে ওয়াহেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রথম দিন অনেকে হাসাহাসি করেছে। আমি সাইকেলে করে প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে ঘুরছি এটা দেখে। কিন্তু আমি দমে যাইনি। যেখানে মানুষ দেখেছি সেখানে থেমেছি। তবে মোটামুটি সবার উৎসাহ ছিল আমি কি করছি তা দেখার। আমি এই সুযোগে তাদের সচেতনতার বার্তাটি দিতে চেয়েছি। যখন মনে হলো কিছুটা হলেও কাজ হচ্ছে, পরের দিন আমি আমার ভাইয়ের মোটরবাইক নিয়ে পুরো বাঁশখালীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে একই ধরণের প্রচারণা করেছি।’

জানা গেছে, এই প্রচারণার আগে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজ এলাকায় বেশ কিছু স্থানে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও এলাকার মসজিদে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ানোর উদ্যোগও নিয়েছিলেন ওয়াহেদ।

বাঁশখালী স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবেলায় অনেকেই প্রচারণা করেছেন। তবে ওয়াহেদের প্রচারণার ধরণ আলাদা। আমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। এই ইস্যুতে যারা কাজ করবেন তাদেরকেও অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। এই জায়গায় ওয়াহেদ অবশ্যই একটা ভাল উদাহরণ তৈরি করেছে।’

এআরটি/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!