চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা এলাকার এক গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের দাবি, ওই গৃহবধু আত্মহত্যা করেছেন। তবে সাংসারিক জীবনের নানা অত্যাচারের কথা তুলে ধরে গৃহবধূর পরিবারের দাবি, খুন করা হয়েছে তাদের মেয়েকে।
বুধবার (৫ জুলাই) এ বিষয়ে স্থানীয় থানায় মামলা দায়ের করেন নিহতের বড় ভাই মো. শাহেদ আলম।
মামলার অভিযুক্তরা হলেন, চট্টগ্রাম হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন নুর আলী মিয়ার হাট চুন্নু চৌধুরীর বাড়ির মরহুম পেশকার শফির ছেলে ও নিহতের স্বামী আরকাদুল ইসলাম রুবেল, দেবর আরাফাত ও শাশুড়ি রুমি আক্তার।
নিহত ফাহমিদা আক্তার তারিন (২৪) ফটিকছড়ি নাজিরহাট পূর্ব ফরহাদাবাদ তালুকদার বাড়ির জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে। গত ২০১৯ সালে আরকাদুল ইসলাম রুবেলের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তারিনের।
তারিনের পরিবার জানায়, বিয়ের এক বছর পর থেকে সাংসারিক নানা বিষয়ে ভুল ধরে তারিনকে অত্যাচার করতো স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
এর মধ্যে বাবার বাড়ির লোকজন বেশ কয়েকবার তাকে নিয়েও এসেছেন। কিন্তু বিয়ের পরে মেয়েরা বাবার বাড়িতে থাকা পরিবারের জন্য অসম্মানজনক মনে করে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নানা অত্যাচার সহ্য করেও বাবার বাড়িতে থাকতে নারাজ ছিলেন তারিন। পরিবারের লোকজনকে জানিয়েছেন, যদি তার মৃত্যু হয়, সেটিও শশুর বাড়িতেই হবে।
তারিনের সাংসারিক জীবনের নানা অত্যাচারের কথা জানিয়ে তার বড় ভাই শাহেদ আলম বলেন, চার বছর সংসার জীবনে আমার বোনকে তার স্বামী ভরণপোষণ দিতে পারেনি। আমার বোনের সকল প্রয়োজন মেটাতে হতো আমাদের। এছাড়া ব্যবসার জন্য রুবেলকে গত মাসে ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
তারিনের সরলতার কথা উল্লেখ করে শাহেদ বলেন, সংসার জীবনে নানা অত্যাচার ও নির্যাতনের কারণে আমার বোনকে বেশ কয়েকবার আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু সে আমাদের মান সম্মানের কথা ভেবে বলতো, স্বামীর ঘর ছেড়ে বাবার বাড়িতে থাকলে, সমাজ বিষয়টি খারাপ চোখে দেখবে। এই সংসার ত্যাগ করে এসে অন্য জায়গায় বিয়ে দেওয়ার কথা বলায় আমার মায়ের সাথেও রাগ করেছিল তারিন।
শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনে হত্যা অথবা আত্মহত্যা প্ররোচনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারিন আত্মহত্যা করার সময় তার স্বামী, দেবর, জা, ননদ, শাশুড়ি ঘরেই ছিল। কিন্তু তার আত্মহত্যার বিষয়টি এতগুলো মানুষের মধ্যে কেউ বুঝতে পারল না? সাধারণত আত্মহত্যাকারীর ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করা থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে দরজা ভেঙে বা জোরপূর্বক ঘরে প্রবেশের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এছড়া লাশের পা বিছানার সাথে লেগে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, শ্বশুরবাড়ির লোকজনে মিলে তাকে হত্যা করার পর ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছে। তাছাড়া তারিন স্বাস্থ্যবান হওয়ায় পাতলা ওড়নায় ঝুলে আত্মহত্যা করা কোনোভাবে সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, তারিন মারা যাওয়ার আরও তিন ঘন্টা পর রুবেলের ব্যবসায়িক পার্টনার ফোন দিয়ে এ খবর আমাদের জানায়। তাছাড়া পুলিশ লাশ উদ্ধার করার পর সাত ঘণ্টা থানায় রেখে দেয়। এ বিষয়ে কোনো মামলা নিচ্ছিল না। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও অন্য জনপ্রতিনিধিরা মামলা না করার জন্য চাপ দেয়। চেয়ারম্যান শওকত বলেন, যা হওয়ার হয়েছে। মামলা না করে এটুকুতেই মীমাংসা করে ফেললে উভয় পক্ষের জন্য ভালো হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় নিহত মরদেহ সন্ধ্যা ৭টায় ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ৯টায় এক মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারীর ফোনের পর থানা কর্তৃপক্ষ মামলা নেন। এর আগে রাজনৈতিক প্রভাবশালী এবং জনপ্রতিনিধি মিলে পুলিশকে প্ররোচনার মাধ্যমে এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায়।
এদিকে অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে হাটহাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, লাশের সুরতহাল করতে হয়, ময়না তদন্ত করতে হয়, তদন্ত করে দেখতে হয়। কিন্তু বাদীপক্ষ হত্যা মামলার দায়ের করতে চেয়েছিল। মূল বিষয় হলো, আইন কানুন না বোঝার কারণে এমন বিভ্রান্তি হয়। বললেই কি মামলা হয়ে যায়?
তিনি আরও বলেন, এ মামলায় বুধবার দিবাগত রাত ২টায় আরকাদুল ইসলাম রুবেল ও আরাফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরএস/এমএফও