গিকা যেন ফজলে করিমের ‘কার্বন কপি’, চাঁদাবাজিসহ বড় বড় অভিযোগ

ছেলে সামিরের বিরুদ্ধেও উঠেছে অভিযোগ

৬ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে দুবাই চলে যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের (গিকা) চৌধুরী। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর আগস্টের শুরুতে তিনি দুবাই থেকে বাংলাদেশে ফেরেন। অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রামের রাউজানের বাসিন্দা এই রাজনীতিবিদ এরপর থেকেই এলাকায় তৈরি করেছেন ত্রাসের রাজত্ব। তার আপন চাচাতো ভাই আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধেও ছিল এমন গুরুতর অভিযোগ। এদিকে একই দিনে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে গিকার ছেলে সামির কাদের চৌধুরীকেও।

সামির কাদের চৌধুরী
সামির কাদের চৌধুরী

গিয়াসের বড় ভাই মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ফাঁসি হওয়া সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী।

গত কয়েকমাস ধরে বারেবারেই অভিযোগ উঠছিল, গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ছাড়াও সীতাকুণ্ডে দেশ-বিদেশের সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে অস্থিরতা ও আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছিল। এছাড়া এলাকায় দলমত নির্বিশেষে ধনী ব্যবসায়ীর তালিকা করে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রবাসী সিআইপি ব্যবসায়ী ইয়াসিন চৌধুরী ও মোহাম্মদ ফোরকানসহ চট্টগ্রামভিত্তিক বিভিন্ন ধনী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এটিই শুধু নয়, প্রবাসে অবস্থানরত রাউজান-রাঙ্গুনিয়ার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও গণহারে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া মিলছে।

গিকা যেন ফজলে করিমের ‘কার্বন কপি’, চাঁদাবাজিসহ বড় বড় অভিযোগ 1

চট্টগ্রাম বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘হঠাৎ করে দেশে ফেরার পর থেকে তিনি নিজেকে তারেক রহমানের চেয়েও বড় নেতা ভেবে আসছিলেন। তার যা কর্মকাণ্ড, তাকে আওয়ামী লীগের ফজলে করিমের কার্বন কপি বললে ভুল হবে না।’

এমন পরিস্থিতিতে সব বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার, হামলাসহ নানা অভিযোগে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দলের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে কারণ দর্শানোর জন্য তিন দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

কারণ দর্শানো নোটিশে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়, তার মধ্যে রয়েছে—
১. এলাকায় দলমত নির্বিশেষে ধনী ব্যবসায়ীর তালিকা করে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায়।
২. ওমান বসবাসরত সিআইপি ব্যবসায়ী ইয়াসিন এর কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা চাঁদা দাবি, চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে ইয়াসিনের রাউজানের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া।
৩. সিআইপি ব্যবসায়ী মো. ফোরকানের কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে না পেয়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে ফোরকানকে নির্মম শারীরিক নির্যাতন। দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর।
৪. বিদেশে অবস্থানরত রাউজানের ব্যবসায়ীদের ওপর ঢালাও চাঁদাবাজির মাধ্যমে এলাকাকে আতঙ্কের জনপদে পরিণত করা।
৫. স্বঘোষিত কমিটি ঘোষণা করার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বের প্রতি চরম অনাস্থা ও ধৃষ্টতা দেখিয়ে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে বলা— ‘রাউজান কমিটি গঠন করতে কারোর প্রয়োজন নেই, আমার এলাকা আমি করবো।’

কারণ দর্শানো নোটিশে বলা হয়, ‘দীর্ঘ ৬ বছর বিদেশে থেকে নতুন সরকারের শুরুতে দেশে এসে দেশ-বিদেশের সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে রাউজানে অস্থিরতা ও মারাত্মক আতঙ্ক তৈরি করেছেন—যা রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ডসহ উত্তরের অন্যান্য নির্বাচনী এলাকায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সুতরাং আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার যথাযথ কারণ দর্শিয়ে আগামী তিনদিনের মধ্যে একটি লিখিত জবাব দলের নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য আপনাকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’

এদিকে একই দিনে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে গিয়াসউদ্দিন কাদের (গিকা) চৌধুরীর ছেলে সামির কাদের চৌধুরীকেও। তাকেও তিনদিনের মধ্যে লিখিত জবাব দেওয়া হয়েছে।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত নোটিশে জানানো হয়, ‘তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় দুষ্কর্মে সহযোগিতা, দেশি ও প্রবাসী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, চাঁদা না পেয়ে কাউকে কাউকে হুমকি প্রদর্শনসহ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অনৈতিক নানা অভিযোগ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমদ আযম খানের নেতৃত্বে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, এর যথাযথ কারণ দেখিয়ে আগামী তিন দিনের মধ্যে একটি লিখিত জবাব দলের নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে গিয়াসউদ্দিন কাদের (গিকা) চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ও প্রান্ত থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm