গার্মেন্টস মালিকদের নেতার কারখানায় শ্রমিকের পাওনা নিয়ে হাঙ্গামা

পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নবনির্বাচিত পরিচালক মির্জা আকবর আলী চৌধুরীর মালিকানাধীন পাহাড়তলীর রিজি নিট ডিজাইনের পর এবার রিজি গ্রুপের আরেকটি গার্মেন্টস রিজি অ্যাপারেলস লিমিটেডেও শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অর্জিত ছুটি নগদায়নের দাবিতে এই গামেন্টসের শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু গার্মেন্টসটির মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে। অর্জিত ছুটি নগদায়নের দাবিতে এই গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা সোমবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে কর্মবিরতি পালন করেছে।

জানা যায়, আগ্রাবাদের শেখ মুজিব রোডে অবস্থিত রিজি গ্রুপের কারখানা রিজি অ্যাপারেলস লিমিটেড। রিজি গ্রুপের চেয়ারম্যান মির্জা আকবর আলী চৌধুরী সম্প্রতি বিকেএমইএর পরিচালিক নির্বাচিত হয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালক হলেন আকবল আলী চৌধুরীর ভাই যথাক্রমে জামসেদ এবং মামুন। রিজি গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের বেতন নিয়মিত পরিশোধ না করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে একাধিকবার শুনানি করে ব্যবস্থা নিয়েছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম। তারপরও এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ কমেনি।

অভিযোগ রয়েছে, এই কারখানায় দীর্ঘ দিন ধরে অর্জিত ছুটির টাকা নগদায়ন না করায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। মালিকপক্ষ ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার অর্জিত ছুটির টাকা নগদায়ন করার কথা বললেও এখনো পর্যন্ত তারা অর্জিত ছুটির টাকা নগদায়ন করতে পারেনি। ১৫ অক্টোবর শ্রমিকদের দাবি নেওয়ার কথা থাকলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ তা করেনি। এরপর কারখানাটির প্রায় ৬০০ শ্রমিক ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করে। কর্তৃপক্ষ আগামী ২০ অক্টোবর অর্জিত ছুটির টাকা নগদায়ন করার আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানাটির এক শ্রমিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অর্জিত ছুটি নগদায়নের ব্যাপারে রিজি অ্যাপারেলস আমাদেরকে গত ৪ মাস ধরে ঘোরাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে চার বার তারিখ দিয়ে কথা রাখেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। ১৫ অক্টোবর অর্জিত ছুটি নগদায়নের কথা ছিল। তাও করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাই আমরা কারখানার সব শ্রমিক কর্মবিরতি পালন করেছি। কর্মবিরতির কারণে প্রায় ২ ঘন্টা কারখানার কাজ বন্ধ ছিল।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুর দুইটার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী থানাধীন অলঙ্কার শপিং মলে অবস্থিত রিজি নিট ডিজাইনের গেইটে অবস্থান নেন কারখানাটির চাকরিচ্যূত প্রায় শতাধিক শ্রমিক। এই সময় ক্ষতিপূরণের দাবিতে শ্রমিকেরা হট্টোগোল ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। অবস্থা বেগতিক দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বিকালে শ্রমিকদের সাথে বৈঠক করে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন চট্টগ্রাম কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফজলুর রহমান। আলোচনায় শ্রমিকদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার কামাল খান। সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হওয়া ওই বৈঠকে কারখানা কর্তৃপক্ষ আগামী দুই মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা বাসায় ফেরে।

জানা যায়, কর্মরত শ্রমিকদের গত ১৬ মে ১২০ দিনের নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করে রিজি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ‘রীজি নিট ডিজাইন’ মালিকপক্ষ। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ১২০ দিন অতিবাহিত হলেও শ্রম আইন মোতাবেক ৩০ দিনের মধ্যে চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধ করেনি রিজি নিট কর্তৃপক্ষ। কারখানাটির কাছে শ্রমিকদের পাওনা প্রায় ২০ লাখ টাকা।
পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি শ্রমিক নেতা ফজলুল কবির মিন্টু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রিজি নিট ডিজাইন কর্তৃপক্ষ আগামী ২৮ নভেম্বর ও ৮ ডিসেম্বর দুই দিন শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার শিডিউল দিয়ে নোটিশ টাঙ্গিয়েছিল। কিন্তু শ্রমিকেরা এটা মেনে নেয়নি। তারা কারখানার গেইটে অবস্থান নিয়ে দ্রুত ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকের সাথে বৈঠক করে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে মালিক পক্ষ আগামী ৩০ অক্টোবর সার্ভিস বেনেফিটের ২৫ শতাংশ টাকা পরিশোধ করবে। বাকি টাকা আগামী ১১ নভেম্বর পরিশোধ করবে।’

ফজলুল কবির মিন্টু বলেন, ‘শ্রম আইনের ১১৭ ধারা অনুযায়ী একজন শ্রমিক বছরে ১৮ দিনে ১ দিন অর্জিত ছুটি পাবেন। অর্জিত ছুটির অর্ধেক নগদায়ন করতে পারবেন শ্রমিকেরা। রিজি অ্যাপারেলসের শ্রমিকদের অনেক দিনের দাবি ছিল, অর্জিত ছুটি নগদায়ন করা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি করবে বলে বলে করছে না। তালবাহানা করছে। তাই অর্জিত ছুটি নগদায়নের দাবিতে সোমবার দুপুরে শ্রমিকেরা ১ ঘন্টা কর্মবিরতি পালন করছেন। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আশ্বাস পাওয়ার পর শ্রমিকেরা কাজে যোগদান করে।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের শ্রম পরিদর্শক বিশ্বজিৎ শর্মা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রিজি গ্রুপের গার্মেন্টসগুলোতে শ্রমিকদের নিয়মিত পরিশোধ না করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার শুনানিও করা হয়েছে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফজলুর রহমান বলেন, ‘রিজি নিট ডিজাইন থেকে শ্রমিকদের পাওনা প্রায় ২০ লাখ টাকা। এই টাকা দিতে না পারার কথা না। দুইবার তারিখ দিয়েও কারখানাটি শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে পারে নি। তারা বলছে, কারখানার মালিক বিদেশে থাকায় টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আগামী ৩০ অক্টোবর শ্রমিকদের পাওনার ২৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!